বর্ণিল সাজে ঢাকা

0
133
Print Friendly, PDF & Email

চিরচেনা সড়কগুলো অচেনা মনে হচ্ছে। ধুলাবালি নেই, ঝকঝকে তকতকে। সড়ক ডিভাইডারে বর্ণিল আলোর ছটা। মাঝের গাছগুলোতে লাল-নীল-সবুজ মরিচবাতি। ফোয়ারায় আলো-ছায়ার খেলা। শহরের দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্যগুলো যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে, লেগেছে তুলির ছোঁয়া। সড়কদ্বীপে দেশি-বিদেশি গাছের সমাহার। সড়কে আছেন বঙ্গবন্ধু। আছেন রবীন্দ নাথ। লালন, নজরুল সবাই।

চিরচেনা রাজধানীর দৃশ্যপট বদলে গেছে। হয়েছে অপরূপা ঢাকা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ঘিরে সাজছে ঢাকা। ১৬ মার্চ পর্দা উঠবে এই বিশ্বকাপের। শেষ হবে ৬ এপ্রিল। বিশ্বের ১৬টি দেশ এবারের বিশ্বকাপে অংশ নেবে। এছাড়াও দেশি-বিদেশি অনেক অতিথি আসবেন। এসময় গোটা বিশ্বের নজর থাকবে বাংলাদেশের দিকে। বিদেশি অনেক নামীদামী দর্শকও ঢাকায় আসবেন খেলা দেখতে।

রাজধানীকে সাজিয়ে বদলে ফেলার এই দায়িত্বটা নিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোর। সঙ্গে আছে সরকারি-বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল খায়ের জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হবে। বিশ্বকাপে আগতরা ঢাকাকে নতুন রূপে দেখবে বলে জানান তিনি।

পুরো প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে ‘ইমপ্রুভমেন্ট অব রোড ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড বিউটিফিকেশন ওয়ার্কস অ্যারাউন্ড মিরপুর শেরে বাংলা ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম অ্যান্ড মেজর রোডস অব ঢাকা সিটি ফর আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ টি-২০ বাংলাদেশ, ২০১৪।’

সরকারের ৯২ কোটি এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিলের ২৩ কোটি টাকা নিয়ে মোট ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রায় ২৩ কিলোমিটার সড়কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ২৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়কের ট্রাফিক সাইন, রোডমার্কিং আলোকায়ন ও বিদ্যুতায়ন এবং ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়ক উজ্জ্বল আলোয় সজ্জিত করা, সৌন্দর্যবর্ধন ও ডেকোরেশন কার্যক্রম প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়কের ডিভাইডার এবং দুই পাশ দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজানো হচ্ছে। থাকছে বাঙালি সংস্কৃতিকে তুলে ধরবে এমন বিভিন্ন কাঠামো। বিজয় সরণির চৌরাস্তা বিশেষভাবে সাজানো হচ্ছে। সেখানে বসেছে পানির ফোয়ারা ও আলোকরশ্মি। বিমান চত্বর থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর হয়ে মিরপুর ২ নম্বর পর্যন্ত এলাকাকেও সাজানো হচ্ছে। বাঙালি সভ্যতার নানা নিদর্শনসহ কৃষক-বাউল স্থান পাচ্ছে এই সজ্জায়। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের আশপাশের সড়ক কার্পেটিং করে ঝকঝকে করা হয়েছে। চলছে সড়ক প্রশস্তকরণ, ফুটপাত ও মিডিয়ানের আধুনিকায়ন, নর্দমা সংস্কারের কাজ।

৮ মার্চের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পের মাধ্যমে বনানী রেলক্রসিং থেকে মহাখালী, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, বাংলামোটর হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত সড়ক, পল্লবীর কালশী রোড, মিরপুর-১২ নম্বর সেকশন থেকে ১০ নম্বর পর্যন্ত সড়ক, ১০ নম্বর সেকশন থেকে ১৪ নম্বর হয়ে কচুক্ষেত পর্যন্ত সড়ক এবং মিরপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের সড়ক-ফুটপাত উন্নয়ন করা হচ্ছে। মিডিয়ানেও আনা হচ্ছে বৈচিত্র্য। এসব এলাকার অলিগলিগুলোও নতুন করে কার্পেটিং করা হচ্ছে।

এছাড়া এসব এলাকার ট্রাফিক সাইন, রোড মার্কিং ও সড়কদ্বীপে রং লাগছে। সড়ক ডিভাইডারের ভেতরে লাগানো হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন দেশি-বিদেশি গাছ। প্রতিটি বিদ্যুতের পোলে বসানো হচ্ছে নতুন বাতি। থাকছে লতাগুল্মের টব। এয়ারপোর্ট সার্কেল, সার্ক ফোয়ারা, বিজয় নগরে বেশ কিছু স্থায়ী ভাস্কর্য স্থাপন করছে ঢাকা সিটি করপোরেশন। আর অনেক জায়গায় অস্থায়ী ভাবে কিছু ভাস্কর্যও বসানো হচ্ছে।

জানা গেছে, পর্যাপ্ত ফান্ড না থাকায় অনেক কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। ফান্ডের জন্য ঠিকাদাররা চিঠি পাঠাচ্ছেন। তবে এখনো অর্থ ছাড় দেয়া হচ্ছে না।

প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, রাজধানীকে সাজাতে ১১৫ কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো বাড়ানো হবে এই বাজেট। যদি ঠিকাদাররা রিভাইস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপজাল দেয় তাহলে সেটা বিবেচনা করা হবে। তিনি বলেন, ঠিকাদাররা দেশের সম্মানের কথা মাথায় রেখে কাজ করে যাচ্ছেন।

শেয়ার করুন