দ্বিতীয় দফা উপজেলা নির্বাচনে উত্তরাঞ্চলে বিএনপি-জামায়াতের জয়জয়কার অবস্থা বিরাজ করছে। জামায়াত যেসব আসনে হেরেছে তাতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে আওয়ামী লীগের সাথে। ১৬ জেলার ৩৮টি উপজেলার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১৯টিতে বিএনপি, ১৩টিতে আওয়ামী লীগ, ৪টিতে জামায়াত, ১টিতে জাতীয় পার্টি, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩টিতে বিএনপি, ৭টিতে আওয়ামী লীগ, ১৬টিতে জামায়াত, ১টিতে জাসদ এবং ১টি স্বতন্ত্র প্রার্থী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৪টিতে বিএনপি, ৬টিতে আওয়ামী লীগ, ২টিতে জামায়াত, ২টিতে জাতীয় পার্টি ও ৩টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এ ছাড়াও একাধিক উপজেলায় বিএনপি-জামায়াত পূর্ণ প্যানেলে জয়ী হয়েছে।
রংপুরের বদরগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ফজলে রাব্বি, ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির সাইদুল ইসলাম ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জাতীয় পার্টির রুবিনা আক্তার জয়ী হয়েছেন।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় চেয়ারম্যান পদে বিএনপির রেজাউল করিম শাহীন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের ইকবাল হোসেন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির সুলতানা রাজিয়া জয়ী হয়েছেন। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের শফিকুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের আবদুস সামাদ পান্না ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির নাদিয়া ইমরান জয়ী হয়েছেন। রানীশংকৈলে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির আইনুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির জামালউদ্দিন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সেলিনা জাহান লিটা জয়ী হয়েছেন।
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির শাহ মো: শামীম হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের আলমগীর হোসেন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র রুশিনা সরেন জয়ী হয়েছেন। চিরিরবন্দরে চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের আবতাব উদ্দিন মোল্লা, ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির নূর আলম সরকার ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির রাশেদা আক্তার জয়ী হয়েছেন। বিরামপুরে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের পারভেজ কবির, ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির এ কে এম মঞ্জুর রশিদ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের জিন্নাতুন নেসা জয়ী হয়েছেন। বীরগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের আমিনুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের কে এম কাউসার ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির সেলিনা আক্তার জয়ী হয়েছেন।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে জাতীয় পার্টির রশিদুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের আবু নসর মু: রুহুল ইসলাম ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী শিরীনা বেগম জয়ী হয়েছেন।
লালমনিরহাট সদরে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির এ কে এম মোমিনুল হক, ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির মহিউদ্দিন আহমেদ লেমন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির আঞ্জুমান আরা শাপলা জয়ী হয়েছেন। পাটগ্রামে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের রুহুল আমিন বাবুল, ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের এ টি এম শফি কামাল ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির লতিফা আক্তার জয়ী হয়েছেন। হাতিবান্ধায় আওয়ামী লীগের লিয়াকত হোসেন বাচ্চু, ভাইস চেয়ারম্যান পদে এ এস এম শামসুজ্জামান সেলিম ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মাকতুফা রহমান জয়ী হয়েছেন।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির আবুল কাসেম সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের মুজিবুল ইসলাম খন্দকার ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি ফেরদৌসী বেগম জয়ী হয়েছেন।
রাজারহাটে বিএনপির মো: আবুল হাসেম, ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের মো. কফিলউদ্দিন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি কোরাইশী লাইলা ফেরদৌসী জয়ী হয়েছেন। রাজীবপুরে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের শফিউল আলম, ভাইস চেয়ারম্যান পদে জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জাতীয় পার্টির বিলকিস বেগম জয়ী হয়েছেন।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের আবুল কাওসার মো: নজরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের আবু তালেব ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী কোহিনুর আক্তার শিপন জয়ী হয়েছেন।
রাজশাহীর বাঘায় চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের জিন্নাত আলী, ভাইস চেয়ারম্যান পদে জাসদের শফিউর রহমান শফি ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির ফারজানা দিল আফরোজ জয়ী হয়েছেন।
জয়পুরহাট সদরে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির ফজলুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের হাসিবুল আলম ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির জাহেদা কামাল জয়ী হয়েছেন। তেলালে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির রওনকুল ইসলাম চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মুস্তাকিম মণ্ডল ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির শামীমা আক্তার বেদানা জয়ী হয়েছেন। কালাইয়ে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মিনফুজুর রহমান মিলন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সোহরাব আলী মামুন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মরিয়ম নেছা জয়ী হয়েছেন।
বগুড়ার কাহালুতে চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের তায়েব আলী, ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সাইফুল ইসলাম ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির মমতা আরজু কবিতা জয়ী হয়েছেন। শিবগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের আলমগীর হোসাইন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের আবদুস সামাদ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির বিউটি বেগম জয়ী হয়েছেন। আদমদীঘিতে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির আবদুল মুহিত, ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের ইউনুস আলী ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের ফারজানা আহমেদ মালা জয়ী হয়েছেন। শাজাহানপুরে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির সরকার বাদল, ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির জহরুল ইসলাম জাহের ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির কোহিনূর আক্তার জয়ী হয়েছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির বাইরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের তাজের আলী ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির নুরুন্নেছা বাবলী জয়ী হয়েছেন।
নওগাঁ সদরে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির আবু বক্কর সিদ্দীক নান্নু, ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের আবু সাদাত মো: সায়েম ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির শবনম মুস্তারী পলি জয়ী হয়েছেন। আত্রাইয়ে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের এবাদুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির শেখ মো: একরামুল বারী ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মমতাজ হোসেন জয়ী হয়েছেন। নিয়ামতপুরে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের এনামুল হক, ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির লিয়াকত আলী ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির মনোয়ার খাতুন জয়ী হয়েছেন। পতœীতলায় চেয়ারম্যান পদে বিএনপির আবদুল হামিদ, ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের হাবিবুর রহমান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির মরিয়ম বেগম জয়ী হয়েছেন। বদলগাছিতে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির মোস্তফা অলি আহমেদ রুমি চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের শ ম ফজলুল হক ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির শাম্মী আক্তার জয়ী হয়েছেন। সাপাহারে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের শামসুল আলম শাহ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের আবদুল ওয়াহেদ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির মোরসেদা পারভীন জয়ী হয়েছেন।
নাটোর সদরে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের শরিফুল ইসলাম রমজান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির ফয়সাল আলম আবুল ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির মোরসেদা বেগম জয়ী হয়েছেন। বাগাতিপাড়ার চেয়ারম্যান পদে বিএনপির হাফিজুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের মমতাজ আলী সরকার ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের শাবানা আক্তার জয়ী হয়েছেন। গুরুদাসপুরে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির আবদুল আজিজ, ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির আবদুর রহিম মোল্লা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের শাহিদা আক্তার মিতা জয়ী হয়েছেন। লালপুরে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির হারুন-অর রশিদ পাপপু, ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের আবুল কালাম আজাদ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির শামসুন্নাহার পারুল জয়ী হয়েছেন।
পাবনার চাটমোহরে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির এইচ ইসলাম হীরা, ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির আরজ খান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির সুফিয়া বেগম জয়ী হয়েছেন। ভাঙ্গুরায় চেয়ারম্যান পদে বিএনপির (বিদ্রোহী) নূর মুজাহিদ স্বপন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির জাফর ইকবাল হীরক ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির জ্যোৎস্না খাতুন বিজয়ী হয়েছেন।
এ দিকে ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যেসব উপজেলায় আওয়ামী লীগ জামায়াতের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছে সেসব উপজেলায় জামায়াত প্রার্থী খুব কম সংখ্যক ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন। বিএনপি-জামায়াতের এমন বিজয়ে উজ্জীবিত এই অঞ্চলের উনিশ দলের নেতাকর্মীরা।
রংপুর বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় উপজেলা নির্বাচনে ১৯ দলের প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক। এর মাধ্যমে তৃণমূলের ১৯ দলের নেতাকর্মীরা আরো সক্রিয় হয়ে উঠেছে।