উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধী দলের নানা অভিযোগ ও বিভিন্ন জায়গায় সংঘটিত ‘সহিংস’ ঘটনা পাশে ঠেলে অবকাশ যাপনে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকীব উদ্দিন আহমেদ। গতকাল সোমবার দেড় মাসের জন্য সস্ত্রীক আমেরিকা গেছেন তিনি। এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে উঠেছে সমালোচনা।
দুই দফা উপজেলা নির্বাচনের পর আগামী ১৫, ২৩ ও ৩১ মার্চ ফের নির্বাচন হবে। প্রথম দুই দফা নির্বাচনে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সহিংস ঘটনা ঘটেছে। অনিয়ম ও কারচুপির প্রমাণও রয়েছে বেশ কিছু উপজেলায়। এতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ অবস্থায় সিইসির বিদেশ ভ্রমণ নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
এ দিকে উপজেলা নির্বাচনে পর্যায়ক্রমে বাড়ছে ভোটজালিয়াতি, প্রতিপ নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, হামলা, কেন্দ্র দখলসহ সহিংসতার ঘটনা। সরকার সমর্থক প্রার্থীদের ধারাবাহিক পরাজয়ের জেরে এসব ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে এসব বিষয়ে অভিযোগের পরও মিলছে না প্রতিকার। বাধ্য হয়েই সরকার বিরোধী প্রার্থীরা এখন সরাসরি রাজধানীর নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে অভিযোগ করছেন। প্রতিদিন অভিযোগের সংখ্যা বাড়লেও কমিশন থেকে গতকাল পর্যন্ত কোনো পদপে নেয়া হয়নি। এমনকি আগামীতে সহিংসতা রোধে কমিশনের নিজস্ব কোনো পরিকল্পনাও নেই। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রার্থীদের অভিযোগের জবাবে দায়সারা গোছের বক্তব্য দিচ্ছেন কমিশন সংশ্লিষ্টরা। গতকালও নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, যেকোনো সহিংসতার ওপর তীè নজর রাখা হচ্ছে। অপরাধীদের শাস্তি দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচনগুলো অবাধ ও সুষ্ঠু করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ দিকে সারা দেশে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। প্রথম দফার চেয়ে কয়েক গুণ সহিংসতা বেড়েছে ২৭ ফেব্র“য়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে। সরকার সমর্থক প্রার্থীদের হারের কারণেই সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন কমিশনের কর্মকর্তারা। এ েেত্র সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। অনেক েেত্রই রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভূমিকাও বিতর্কিত বলে জানান কর্মকর্তারা। আগামী ১৫ মার্চ তৃতীয় দফার নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে সরকার সমর্থক নেতাকর্মীরা বিরোধীদের ওপর চড়াও হচ্ছেন। পোস্টার ছেঁড়া, ব্যানার পোড়ানো, নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা, বিরোধীদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া, হামলা ও ভাঙচুর বেড়েই চলেছে। এ েেত্র সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য কার্যকর পদপে ও সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে কমিশনে চিঠি দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি অভিযোগ কমিশনে জমা হয়েছে। অভিযোগগুলো কমিশনের ডেসপ্যাচ শাখা থেকে কেবল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দফতরে জমা হয়। অভিযোগুলো কর্মকর্তারা খুলেও দেখেন না বলে জানায় সূত্র। কর্মকর্তাদের ভাষ্য, কমিশনের প থেকে পদপে গ্রহণের কোনো নির্দেশনা না থাকায় অভিযোগগুলো গুরুত্বহীন।
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী লিখিত অভিযোগে জানান, আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থী একরামুল হক মতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিরোধী প্রার্থীদের প্রচারণায় বাধা দিচ্ছেন। ভোটারদের ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া চিঠিতে উপজেলার গাড়ি, রঙিন পোস্টার ও কোনো টেন্ডার ছাড়া তফসিলের পর সাত দিনে প্রায় ৬০টি রাস্তা ও ব্রিজ-কালভার্ট উদ্বোধনের সচিত্র বর্ণনা দেয়া হয়েছে।
ভোলার মনপুরা উপজেলার বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সামসুদ্দিন চৌধুরী বাচ্চুর অভিযোগ, এ উপজেলায় সব কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারি দলের লোকজন সন্ত্রাসীদের দিয়ে মহড়া দিচ্ছে। তাই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীসহ অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন জরুরি। নারায়ণগঞ্জ সদর থেকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরও একই ধরনের অভিযোগ। রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী মো: মফিজুল হক পুনর্নির্বাচনের আবেদন করেছেন। নির্বাচনে ভোট কারচুপি ও প্রকাশ্যে সিল দেয়ার অভিযোগ তার। এ রকমভাবে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী মো: মোরশেদ আলম ও নোয়াখালী সদরের শিহাব উদ্দীন শাহীনও আবেদন করেছেন।
এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো: আবু হাফিজ বলেন, অভিযোগের সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সবকিছুই করবে কমিশন। কোনো অভিযোগ আমলে নেয়া হচ্ছে না এ রকম কথা ঠিক নয় বলে জানান তিনি।