প্রথম দফা উপজেলা নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলেও দ্বিতীয় দফায় সংঘাতের ঘটনা ঘটে অনেক বেশি। এসময় স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবহার করে ভোট কেন্দ্র দখল, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন, প্রতিপক্ষের প্রার্থীকে মারধর করা, ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠে। সংঘাতে একজন নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে।
প্রথম দফা নির্বাচনে একেবারেই যে কোন ঘটনা ঘটেনি তা নয়। তবে প্রথম দফায় ৯৭টি উপজেলার কিছু এলাকায় বিচ্ছিন্ন ঘটনার জন্য নির্বাচন কমিশন ১০টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে। আর দ্বিতীয় দফায় ১১৫টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সংঘাতের কারণে ১৫১টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করতে হয়। পাশাপাশি একটি উপজেলার সব কেন্দ্র অর্থাৎ ১১৭টি কেন্দ্রেই ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়ে যায়। এতে সব মিলিয়ে ২৬৮টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী আগে থেকেই উপস্থিত থাকলেও নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে। আর শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে যে কমিশন ব্যর্থ হয়েছে তার প্রমাণ মেলে ২৬৮টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিতের ঘটনাই। অবশ্য নির্বাচন কমিশন দাবি করে আসছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে। কমিশন এমন দাবি করলেও এমন দাবি আর বাস্তবতার সাথে যখন মিল থাকে না তখন স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হয়ে যায়।
দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে শুধু সংঘাতের ঘটনাই ঘটেনি, নির্বাচনের ফলেও প্রথম দফার তুলনায় ভিন্ন চিত্র লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে রাজনৈতিক বিবেচনায় ফল একটু ভিন্নতর হয়েছে। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অরাজনৈতিক হলেও এ নির্বাচন রাজনৈতিক রূপ পেয়েছে অনেক আগেই। আর এই রাজনৈতিক রূপ এসেছে ক্ষমতাসীন আর ক্ষমতাহীন উভয় দলের মাধ্যমেই।
উপজেলা নির্বাচনের প্রথম দফায় ৯৭টি উপজেলায় সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে একেবারেই কম এবং নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। আর ওই নির্বাচনে ৪৪টিতে বিএনপি, ৩৩টিতে আওয়ামী লীগ ও ১৩টিতে জামায়াত সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়ী হন। বিরোধী দলীয় জোট কিংবা ১৯ দলীয় জোট হিসেবে বিবেচনা করলে ৫৭টি চেয়ারম্যান পদেই বিএনপি জোট সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হন।
আর দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে যেখানে ব্যাপক সংঘাত আর ভোট কেন্দ্র দখলের কারণে ২৬৮টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করতে হয় সেখানে ৫৩টিতে বিএনপি, ৪৪টিতে আওয়ামী লীগ এবং ৮টিতে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন। আর জোট বিবেচনায় ৬১টিতে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি জোট সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হন। এর ফলে দেখা যাচ্ছে বিএনপি’র জয়ের পাল্লা কিছুটা হালকা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নির্বাচনী সংঘাতের জন্য সরকারি দলকেই দায়ী করে বলছেন, নির্বাচনের ফল নিজেদের পক্ষে নেয়ার জন্য এমন সংঘাতময় কর্মকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। আর নির্বাচনের ফলও হয়েছে তাই। এক্ষেত্রে আমজনতার প্রশ্ন, সরকারি দল কি সংঘাত আর ভোটকেন্দ্র দখল করে নিজেদের জয়ের পাল্লা তুলনামূলক ভারি করেছে?
তৃতীয় দফা নির্বাচনে আগামী ১৫ মার্চ ৮৩টি, চতুর্থ দফায় ২৩ মার্চ ৯৩টি এবং পঞ্চম দফায় ৩১ মার্চ ৭৪টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হবে। এই নির্বাচন কতটা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে তা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়ে গেছে। কারণ নির্বাচনকে নিজেদের পক্ষে নেয়ার জন্য চেষ্টা থাকতে পারে অনেকের। আর এ কারণেই সংঘাতের আশংকা। নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনকে বিষয়টি এখন থেকেই ভাবতে হবে। নইলে নির্বাচনের দিন সহিংসতার আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
নির্বাচন কমিশন যদি পূর্ব প্রস্তুতি সত্বেও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয় তাহলে জনগণ আর আস্থা রাখতে পারবে না এই কমিশনের ওপর। আর সরকারকেও বিষয়টি বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। কারণ এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়- এমন দাবি করেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি। উপজেলা নির্বাচনেও সংঘাত বাড়লে বিএনপি’র অভিযোগের পক্ষে জনসমর্থন আদায় করা সহজ হবে। আর জোরালো হবে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুন:প্রবর্তনের দাবি।