মাদক মামলায় শাস্তি নেই, জেল আর মুক্তিতে থাকে অপরাধীরা

0
105
Print Friendly, PDF & Email

রুশিয়া বেগম ওরফে মাফিয়া চুন্নি। পুলিশি রেকর্ডে রাজধানীর মাদক ব্যবসার ‘গডমাদার’। ১৭টি মাদক সংক্রান্তসহ ৪৮ মামলার প্রধান আসামি এই মাদক সম্রাজ্ঞী ১৫ বছরে গ্রেফতার হয়েছেন শতাধিকবার। তবে মাত্র ১৩ বার তাকে কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটক পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়েছে। সাজা হয়নি কোনো মামলাতেই। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত। তার নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোয় ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, মদ আর গাঁজার ব্যবসা চলছে ধুমছে। রাজধানীতে গাড়ি নিয়ে ছিনতাই চক্রের দুই সদস্য শরিফুল ইসলাম ওরফে সাগর এবং সাজু আহমেদ রাজু গ্রেফতার হয়েছিলেন গত বছর। কিছু দিন পরই তারা জামিনে ছাড়া পান। ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে খিলক্ষেত নিকুঞ্জ-২ এর সামনে তারা একজন মোটরসাইকেল আরোহীকে অস্ত্রের ভয়ভীতি ও মারধর করে তার মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেয়। রাতেই তারা শাহআলী থানা এলাকায় একটি প্রাইভেট কারসহ গ্রেফতার হন। মোটরসাইকেল আরোহী মীর মাহফুজুর রহমানের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার হলেও মোটরসাইকেলটি পাওয়া যায়নি। ছিনতাই চক্রের এ দুই সদস্য আবারও জামিনের চেষ্টা করছে।

বার বার জেলে যাওয়ার পরও এভাবেই জামিনে মুক্তি পাচ্ছে বিভিন্ন মামলার দুর্ধর্ষ অপরাধীরা। বিশেষ করে মাদক ব্যবসা, গাড়ি চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও জালিয়াতির আসামিরা বারবারই গ্রেফতার হচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও জড়িয়ে পড়ছে একই ধরনের অপরাধে। বার বার একই মুখের অপরাধীরা ধরা পড়লেও তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় অপরাধের মাত্রা বেড়েই চলছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল গাড়ি চুরি চক্রের প্রধান বিল্লাল হোসেন। তখন এ সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে বিল্লাল বলেছিল, ‘আমি তো আওন-যাওনের মধ্যেই থাকি।’ বিল্লালের নিজের ভাষ্যে, তার দুই যুগের বেশি চৌর্যবৃত্তির জীবনে আট থেকে নয় বছর কেটেছে কারাগারে। বারবার গ্রেফতার হয়েছে, ছাড়া পেয়েই আবার চুরি শুরু করেছে। কোটি টাকার মালিক বনেছে সে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশের ‘দুর্বল তদন্ত’ ও আইনি মারপ্যাঁচের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ব্যক্তিরা। জামিনের বিষয়ে নেপথ্যে থেকে শক্তিশালী চক্র কাজ করছে। তবে মাদক, ছিনতাই ও ডাকাতি মামলার আসামিরা জামিনে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায়। পুলিশ জানায়, আসামি গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়। আইনজীবীরা তাদের জামিনের ব্যবস্থা করেন। তবে আদালত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনের বাইরে কোনো ঘটনাই ঘটে না। পুলিশের দুর্বল তদন্ত ও আইনের ফাঁকফোকরে আসামিরা জামিন পাচ্ছে। দেশের প্রথম ইয়াবা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিদর্শক মো. হেলাল উদ্দীনের ভাষ্যমতে, আদালত আসামিদের বারবার জামিন দেওয়ায় তারা মাঝে-মধ্যে হতাশায় ভোগেন। কোনো একটি মামলায় যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতো তবে ইয়াবার আগ্রাসন অনেকটাই কমে যেত বলে তাদের বিশ্বাস। সূত্র জানায়, গাড়ি, মোটরসাইকেল ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনায় জড়িতরা গ্রেফতার হলেও বেশি দিন কারাগারে থাকতে হয় না। গ্রেফতার হলেই তাদের আইনজীবী প্যানেল জামিনের ব্যবস্থা করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে পুলিশের তদন্তে দুর্বল দিকগুলোই আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

জানা গেছে, ছিনতাই চক্রের সদস্য শরিফুল ইসলাম ওরফে সাগর এবং সাজু আহমেদ রাজু শাহআলী থানায় রিমান্ডে নানা তথ্য দিয়ে বলেছে, তারা গ্রেফতার হলেও কোনো সমস্যা নেই। তাদের জামিনে মুক্ত করতে লোকজন রয়েছে। যতবার গ্রেফতার হন, ততবারই জামিনে মুক্তি পায় বলে জানায়। ছিনতাইয়ের শিকার মীর মাহফুজুর রহমান জানান, ছিনতাইকারীরা তার এপাচি মোটরসাইকেলটি নিয়ে গেছে। অস্ত্রের মুখে তার স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কার, টাকা, লাইসেন্স ও জরুরি কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়। তিনি খিলক্ষেত থানায় মামলা করেন। তিনি বলেন, ওই রাতেই ছিনতাইকারী চক্রের দুই সদস্য শরিফুল ইসলাম ওরফে সাগর এবং সাজু আহমেদ রাজুকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে তার মোবাইল ফোন, টাকা, কাগজপত্র উদ্ধার হয়, কিন্তু মোটরসাইকেল উদ্ধার হয়নি। এ ব্যাপারে খিলক্ষেত থানা পুলিশের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। আসামি ধরা পড়েছে, কিন্তু মোটরসাইকেল উদ্ধারে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি। এ কারণে মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, গাড়ি নিয়ে ছিনতাই চক্রের ১২ সদস্যকে ১৪ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ১০টি গাড়িও উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৮টি মোটরসাইকেলসহ ৪ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, চক্রের সদস্যরা একই অপরাধে একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছিল। জামিনে ছাড়া পেয়ে তারা আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

শেয়ার করুন