উপাচার্য ছাড়াই চলছে ২৫ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

0
167
Print Friendly, PDF & Email

দেশের ২৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য এবং ৪৮টিতে কোষাধ্যক্ষ নেই। এ ছাড়া ৬৩টিতে নেই সহ-উপাচার্য। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদ অপরিহার্য বলে বিবেচিত।
দেশে এখন ৭৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আইন অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের প্রস্তাবিত তিনটি নামের মধ্যে আচার্য ও রাষ্ট্রপতি একজনকে নিয়োগ দেন। উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ—এই তিনটি পদের বেলায় একই নিয়ম প্রযোজ্য।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কিছুদিন আগে যৌথ সভা করে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই, সেগুলোতে দ্রুত নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, তারা বোর্ড অব ট্রাস্টিজের মাধ্যমে ওই সব পদে নিয়োগের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে ইউজিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য আতফুল হাই শিবলী প্রথম আলোকে বলেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শীর্ষ তিন পদে সরকার-নিযুক্ত কেউ নেই, সেগুলোকে চিঠি দিয়ে অবস্থান জানাতে বলা হয়েছে। কে প্রস্তাব পাঠিয়েছে, কে পাঠায়নি সব বিস্তারিত জানাতে বলা হয়েছে। এরপর এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হবে। প্রয়োজনে সরকার ওই তিন পদে কাউকে নিয়োগ দেবে বলেও জানান তিনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সূত্রমতে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশির ভাগের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ না থাকা আরেকটি বড় সমস্যা। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি নিয়োগ পাওয়া উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই, যা বিশ্ববিদ্যালয় আইনের পরিপন্থী।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদ্যোক্তাদের অনেকে এখনো মালিক ভেবে বাণিজ্যিক চিন্তা নিয়ে কাজ করছেন। তাঁরা মনে করেন, কোনোভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চললেই হলো, এ জন্যই আজ এমন চিত্র।’
হোসেন জিল্লুর রহমানের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মালিক ও ব্যবস্থাপনা আলাদা হওয়া দরকার। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাই করছে। খারাপগুলোতে এ সমস্যা রয়েই গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নিয়মিত উপাচার্য না থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঈশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয় ও সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি। উপাচার্য না থাকা এই ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের নিয়োগ করা কোষাধ্যক্ষও নেই।
এ ছাড়া ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, বাংলাদেশ ইসলামী ইউনিভার্সিটিসহ নতুন আরও সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই। এগুলোর মধ্যে দারুল ইহসান, এশিয়ান, ইবাইস, প্রাইম এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মালিকানার দ্বন্দ্বে নানাবিধ সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে অতীশ দীপঙ্করের বিবদমান দুই পক্ষ গতকাল রোববার সমঝোতায় পৌঁছেছে।
কোষাধ্যক্ষ না থাকা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে: নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, গণবিশ্ববিদ্যালয়, দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি, লিডিং ইউনিভার্সিটি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি, দ্য মিলেনিয়াম, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজিসহ মোট ৪৮টি।
কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, ওই সব পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ভাইস চেয়ারম্যান শামীম হায়দার পাটোয়ারী জানান, উপাচার্য নিয়োগের জন্য তাঁরা সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির রেজিস্ট্রার শামস-উদ-দোহা বলেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ তিন পদে নিয়োগের জন্য বোর্ড অব ট্রাস্টিজ থেকে প্রস্তাব পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত সরকার থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
জানতে চাইলে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের মতো পদ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় বেশি দিন চলতে পারে না। এটা আইনের পরিপন্থী। এ জন্য দ্রুত এসব পদে নিয়োগ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যেমন দায়িত্ব আছে, তেমনি সরকারেরও দায়িত্ব আছে।

শেয়ার করুন