‘দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের তালিকায় যাদের নাম তারা প্রশ্নবিদ্ধ’ এমন অভিযোগ এনে মহিলা সংরক্ষিত আসনের এমপি মনোনয়নের কর্তৃত্ব ছিনিয়ে নেন রওশন এরশাদ। কিন্তু রওশনের গুডবুকে যাদের নাম রয়েছে তাদের নিয়েও নানা ধরনের কানাঘুষা চলছে দলটির ভেতরে। আর এ নিয়ে শেষ পর্যন্ত জাপার নারী নেত্রী ও কর্মীদের রোষানলের মুখে পড়তে পারেন বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। এমন আভাসই পাওয়া গেছে জাতীয় মহিলা পার্টি সূত্রে।
জাপা সূত্রের মতে, এখন পর্যন্ত রওশনের ‘গুডবুকে’ ৫ জনের নাম রয়েছে। এরা হলেন- পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহিলা পার্টির সভানেত্রী নূর-ই হাসনা লিলি চৌধুরী (কুড়িগ্রাম), শাহানারা বেগম (রংপুর), জাতীয় পার্টির ভাইস-চেয়ারম্যান মাহজাবীন মোরশেদ (চট্টগ্রাম), রওশনারা মান্নান (মানিকগঞ্জ), খোরশেদারা হক (কক্সবাজার)।
এদের সবাইকে নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন, মহিলা পার্টির নেত্রীরা। তারা বলছেন, নূরই-ই হাসনা লিলি চৌধুরী এপর্যন্ত ৩বার, মাহজাবীন মোরশেদ ১বার ও রওশনারা মান্নান ১বার এমপি হয়েছেন। কিন্তু তারা দলের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু করেন নি। নারীদের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও তাদের তেমন কোন অবদান নেই। তাই এবার তাদের বাদ দিয়ে নতুন মুখ আনার পক্ষে জাপার নারী নেত্রীরা।
এব্যাপারে জাতীয় মহিলা পার্টির ভাইস-চেয়ারম্যান আমেনা হাসান বলেন, আমরা চাই দলের জন্য যারা কাজ করেন এবং নতুন মুখদের এমপি হিসাবে দেখতে।
শাহানারা বেগম ও খোরশেদারা হকের ব্যাপারে জাপার এই নেত্রী বলেন, এই দুই জনই অনেক বয়োবৃদ্ধ। তারা এই বয়সে নিজেরাই চলতে কষ্ট হয়। সংসদে গিয়ে পার্টি ও দেশের জন্য কি ভূমিকা রাখবেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহিলা পার্টির আরেক নেত্রী বলেন, রওশন এরশাদ আমাদের কথা দিয়েছেন তিনি এবার যোগ্য ও শিক্ষিতদের স্থান দেবেন। কিন্তু যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা কিভাবে যোগ্যতার আসনে বসে তা আমাদের মাথায় আসে না।
এসব প্রার্থীর কাছ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তাদের চূড়ান্ত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে দলের মধ্যে।
মহিলা পার্টি সূত্রে জানা গেছে, এসব বিষয়ে রওশনের ওপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ জাপার নেতা-কর্মীরা। বিশেষ করে নারী নেতা-কর্মীদের ক্ষোভের মাত্রাটাই অনেক বেশি। আর এনিয়ে রওশন এরশাদ নারী নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে পড়তে পারেন বলে মনে করেন ওই সূত্র।
শেষ পর্যন্ত এদের নাম চূড়ান্ত করা হলে রওশনের বাসার সামনে অনশনের মত কর্মসূচিরও ডাক আসতে পারে বলে ওই সূত্রের ধারণা। এমনকি তা গড়াতে পারে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত।
এদিকে ৬ নম্বর নামটির জন্য দুটি নাম এখনও অপেক্ষমাণ রয়েছে। এরা হলেন- এরশাদের ছোটবোন মেরিনা রহমান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপিকা মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী। এদের নিয়ে কমই আপত্তি আছে নেতাকর্মীদের মাঝে।
প্রসঙ্গত, সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসনের মধ্যে জাপার ভাগে পড়েছে ৬টি। এই ৬ আসনের বিপরীতে ৯৬টি মনোনয়নপত্র বিক্রি করে দলটি। গত ১৭, ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি চলে এ মনোনয়নপত্র বিক্রি। গত ২০ জানুয়ারি দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাঁর বনানীস্থ কার্যালয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে সৌজন্য বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের পুনঃতফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় আগামী ৯ মার্চ। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১১ মার্চ। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৮ মার্চ। আর ভোটগ্রহণ করা হবে আগামী ৩ এপ্রিল।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের মধ্যে ৪১টি আসন পাবে। প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ৬টি, বাকি ৩টি নারী আসন পাবে হাজী সেলিমের নেতৃত্বাধীন ১৬ জন স্বতন্ত্র এমপির জোট।