মোহাম্মদ এ আরাফাত। শিক্ষক, গবেষক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক। ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। সামাজিক উন্নয়নমূলক সংগঠন সুচিন্তার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। টেলিভিশন ‘টক শো’র নিয়মিত বক্তা। পরিচিত মুখ। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, পানিবণ্টন, যুদ্ধাপরাধ, সংবিধানবিষয়ক । বেষকদেশের আলোচিত এই মেধাধী তরুণ সম্প্রতি মুখোমুখি হয়েছিলেন সাপ্তাহিক কাগজ-এর। কথা বলেছেন দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, বিদেশনীতি, যুদ্ধাপরাধ, আল-কায়েদার হুমকি, গণজাগরণ মঞ্চসহ নানা বিষয়ে। বাদ যায়নি ব্যক্তিগত প্রসঙ্গও। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশিক রহমান।
সাপ্তাহিক কাগজ: বিএনপি একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। তাদের ৩৫ শতাংশের কাছাকাছি ভোট রয়েছে। দেশের এ বিপুলসংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণবিহীন নির্বাচন কি গণতান্ত্রিক আচরণের মধ্যে পড়ে?
মোহাম্মদ এ আরাফাত: ৫ জানুয়ারির নির্বাচন তো বিএনপিকে বাদ দিয়ে হয়নি। বিএনপি আসেনি। বিএনপি আসতে চায়নি। বিএনপিকে কি কেউ জোর করে আটকে রেখেছিল? রাখেনি তো। তাহলে তারা কেন আসেনি? তাদেরকে তো কেউ বাধা দেয়নি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে তারা অনেক দাবি করেছে। তাদের দাবি যদি একপক্ষীয় হয়, তারা যা চেয়েছিল, তাদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড গ্রাউন্ড হলো, আরেকটি বৃহত্তর দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং গ্রাউন্ডই হলো না। সে ক্ষেত্রে তাদের এ রকম দাবি কে মানবে? মূল কথা হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুরো কনসেপ্টা বিএনপিই নষ্ট করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা হলো একটা অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য। ১৩তম অধ্যাদেশ বাতিল করার জন্য তারা আওয়ামী লীগকে দায়ী করে। অভিযুক্ত করে। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি একটা নির্বাচন করার কথা ছিল, সেই নির্বাচনটা কেমন হলো, তখন তো ১৩তম অধ্যাদেশ ছিল। তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থাও ছিল। তা সত্ত্বেও তারা একটি অবাধ, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারল না। তার মানে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাই যথেষ্ট নয়, একটি অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য। একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য সদিচ্ছা দরকার। সেই সদিচ্ছার অভাব ছিল বিএনপির। আওয়ামী লীগ বলেছে, গণতান্ত্রিক যে মৌলিক জায়গাটা, সেখানে আমরা যেতে চাই। গণতন্ত্রের স্থায়ী রূপ দিতে চাই। তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থাটা আওয়ামী লীগ কেন চেয়েছিল, বিএনপির কারচুপির নির্বাচনের কারণে। কুখ্যাত মাগুরা নির্বাচন সম্পর্কে সবাই জানেন। এ রকম মাগুরা তখনকার বিএনপির আমলে অনেকগুলো হয়েছে। এর ফলেই আওয়ামী লীগ বিএনপির ওপর আস্থা হারিয়েছিল বলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার দাবি বিএনপির কাছে। আওয়ামী লীগের বিগত ৫ বছরে অনেকগুলো নির্বাচন হয়েছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে, উপনির্বাচন হয়েছে, কোথাও কিন্তু নির্বাচন নিয়ে কোনো অভিযোগ ওঠেনি। বিএনপি কিন্তু এমন কোনো গ্রাউন্ড তৈরি করতে পারেনি, কারচুপি হয়েছে এমন উদাহরণ দেখাতে পারে। যার কারণে আওয়ামী লীগের ওপর তারা আস্থা হারাতে পারে। আওয়ামী লীগ অনেক উদাহরণ তৈরি করতে পেরেছে, বিএনপি পারেনি। ওয়ান-ইলেভেনের যে বাস্তবতা আমরা দেখলাম, জানলাম কী হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ককে উসিলা করে বিরাজনীতি করার যে একটা প্রবণতা দেখা গেল, তা মোটেও কারও জন্য ভালো অভিজ্ঞতা ছিল না। তাহলে কেন আমরা রাজনীতির বাইরের কারও হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেব? কাজেই ৫ জানুয়ারির দরকার ছিল। গণতান্ত্রিক উপায়ে তা সম্পন্নও হয়েছে। এতে কেউ এসেছে, কেউ আসেনি।
কাগজ: বিএনপি বলছে, সরকার কখনোই চায়নি, বিরোধী দল নির্বাচনে আসুক। বিরোধী দলের প্রতি সরকার আন্তরিক ছিল না। প্রধানমন্ত্রীও আন্তরিক ছিলেন না।
মোহাম্মদ এ আরাফাত: বিএনপির প্রতি সরকারের সদিচ্ছা ছিল। প্রধানমন্ত্রীও আন্তরিক ছিলেন। সরকার যদি বিএনপির প্রতি আন্তরিক না হতো, তাহলে তো প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে বিরোধী দলকে যেকোনো পোর্টফোলিও দেওয়ার ঘোষণা দিতেন না। বরং এটা বলা যায়, বিএনপির নির্বাচনের আসার ব্যাপারে সদিচ্ছা ছিল না। আন্তরিকও ছিল না।