উপজেলা নির্বাচনের পর সরকার পতনের আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কিন্তু খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ১৯-দলীয় জোটকে আন্দোলনে নামার সুযোগই দিতে নারাজ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। উপজেলা নির্বাচনের পর ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিয়ে বিএনপিকে আবারও ব্যস্ত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যেই ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে শাসক দল আওয়ামী লীগ।
আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর কমিটি ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে চলছে ঢাকার প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর-সূত্রে জানা যায়, ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকার ২৫টি থানা, ৩৭টি ওয়ার্ড ও ১২টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাকি থানা, ওয়ার্ডেও চলছে সম্মেলনের কাজ। সম্মেলনের মাধ্যমে মহানগরের প্রতিটি এলাকায়ই দক্ষ নেতৃত্ব নিয়ে আসা হবে— যাদের প্রাথমিক কাজ হবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দল-সমর্থিত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করা।
নগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা জানান, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখেই সম্মেলনের পরও থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে নতুন কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের নাম এখনও ঘোষণা করা হয়নি। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ বিভিন্ন পদের হিসাব-নিকাশ শেষ করে তারপর নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একযোগে কমিটিগুলো ঘোষণা করা হবে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ত্রাণ ও দুর্যোগমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ইতোমধ্যে বিভিন্ন থানা সম্মেলনের গিয়ে বলেছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবেই সম্মেলন করা হচ্ছে। তিনি গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, সম্মেলন শেষ হলেই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হবে। একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ উল আলম লেনিন বলেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ কমিটিকে ঢেলে সাজানোর পরই সিটি করপোশেন নির্বাচন নিয়ে আমাদের ভাবনা তুলে ধরব।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আদলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগেরও উত্তর-দক্ষিণ দুটি কমিটি করা হবে। থানা সম্মেলনগুলো শেষ হলে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে এ কমিটিগুলো কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে দেওয়া হবে।
ঢাকা সিটি নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের এ প্রস্তুতি বিএনপিও বুঝতে পেরেছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, এ কারণে বিএনপিও তাদের ঢাকা মহানগরকে নতুন করে সাজাতে চাইছে। ওই নেতা আরও বলেন, খালেদা জিয়া এই সরকারের অধীনে নির্বাচন করে প্রমাণ করেছেন তিনি আওয়ামী লীগ সরকারকে মেনে নিয়েছেন। সরকারবিরোধী আন্দোলনের কথা খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক বক্তব্যের বুলি মাত্র। জনসভায় গিয়ে এটা না বললে খালেদা জিয়ার রাজনীতি থাকে না বলেও উল্লেখ করেন ওই নেতা।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন গত মহাজোট সরকারের আমলে উত্তর ও দক্ষিণে দুই ভাগে ভাগ করা হয় ঢাকা সিটি করপোরেশনকে। এরপর আর কোনও নির্বাচন হয়নি ঢাকা সিটি করপোরেশনে। চলতি মেয়াদে দুটি সিটি করপোরেশনেই নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ধারাবাহিক সরকারের।