নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র তিন সদস্য ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতর কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। ঘটনার তদন্তে পুলিশ সদর দফতর কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছিল।
কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ করতে না পারায় বৃহস্পতিবার বর্ধিত সময় চেয়ে আবেদন করেছে তদন্ত কমিটি। বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে। সূত্রটি জানায়, তদন্ত সংক্রান্ত কাজ শেষ না হওয়ার কারণে তারা আরো তিন কার্যদিবস সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছেন।
তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, তদন্ত কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। কিন্তু, কাজ এখনো সম্পূর্ণ করা যায় নি। আগামী ৩/৪ দিনের মধ্যেই তদন্ত কাজ শেষ করে পুলিশ সদর দফতরে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, জেলখানা থেকে বের হওয়া এবং ছিনতাই হওয়া পর্যন্ত পুলিশের নিরাপত্তায় অবহেলার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এছাড়া প্রিজনভ্যানে থাকা অবস্থায় পুলিশের মোবাইলে ফোন করার বিষয়টিও তদন্তে উঠে এসেছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ এ সব জঙ্গিকে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।
জেল কর্তৃপক্ষকে আসামি নেয়ার সময় ময়মনসিংহের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের অবহিত করার নির্দেশ থাকলেও তা মানা হয়নি বলেও সূত্রটি দাবি করেছে। সব মিলিয়ে আলোচিত এ ঘটনার জন্য গৃহীত নিরাপত্তা পর্যাপ্ত না থাকার কারণে হয়েছে বলে এ তদন্তে পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) জালাল উদ্দীন আহমেদ জানান, ঘটনার পরপরই পুলিশ সদর দফতর থেকে কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটির প্রধান করা হয়, সিআইডির উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি চলতি দায়িত্বে) সাইফুল আলম। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক এবং পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (ক্রাইম ইস্ট) আব্দুল আলিম মাহমুদ। তদন্ত টিমকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এআইজি জালাল আরও জানান, কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে তদন্ত কমিটিকে কাজ করতে বলা হয় তদন্ত কমিটিকে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ; স্কটকারী পুলিশ কর্মকর্তা/সদস্যদের গৃহীত ব্যক্তি নিরাপত্তা পর্যালোচনা; পুলিশ সদস্যদের আহত ও নিহত হওয়ার কারণ নির্ণয়; আসামি পরিবহনে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের সার্বিক ভূমিকা ও গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা এবং অনুরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সুপারিশ করা।
সদর দফতর কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটিকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, কমিটি তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেনি। তারা তিন কার্যদিবস চেয়ে আবেদন করেছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানার সাইনবোর্ড এলাকায় জেএমবির মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ জঙ্গি সালাহ উদ্দীন ওরফে সালেহীন ওরফে সোহেল, মিজান ওরফে বোমা মিজান, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত রাকিব ওরফে হাফিজ মাহমুদ ওরফে রাসেলকে পুলিশের ওপর হামলা করে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা।
এ ঘটনায় এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হন। এ ঘটনায় পরের দিন ২৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় জঙ্গি রাকিব। এসব ঘটনার তদন্তে কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পুলিশ সদর দফতর।