বিতর্কিত বহুধাপ বিপণন (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনির জায়গা ভরাট করে দিচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশন। সিলেট নগরের নবাব রোড এলাকায় ওই জায়গার অবস্থান। পাশের গাভীয়ার খাল থেকে খনন করা মাটি ফেলা হচ্ছে ডেসটিনির জায়গায়। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ভরাটকাজ চলছে।
জমিতে সাঁটানো সাইনবোর্ডে লেখা, ‘ক্রয় সূত্রে এই জায়গার মালিক ডেসটিনি গ্রুপের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল আমিন।’ অর্থের অবৈধ লেনদেনের মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
নবাব রোড এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে সিলেট মিউনিসিপালিটি মৌজার ৮১ শতক জায়গা (জেল নম্বর ৯১, দাগ-১৩১৪) ডেসটিনি ক্রয় করে। জায়গা কেনার পরই পুরো জায়গায় সীমানাপ্রাচীর করে ভেতরে একটি ঘরও নির্মাণ করা হয়। ডেসটিনির সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কের কার্যালয়ের মাধ্যমে একজন তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করে জায়গার দেখভাল করা হতো। ডেসটিনির এমডি কারাবন্দী হওয়ার পর ওই জায়গার মূল ফটক স্থায়ীভাবে বন্ধ করে রাখা হয়। গাভীয়ার খাল দখলমুক্ত করতে সিটি করপোরেশন গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর খননকাজ শুরু করে। খালের খনন করা মাটি ফেলা শুরু হয় এ মাসের গোড়া থেকে। ইতিমধ্যে প্রায় অর্ধেক জায়গা ভরাট করা হয়েছে।
গতকাল রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রধান ফটক ভাঙা অবস্থায় খোলা রয়েছে। জায়গা দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির ঘরটিও খোলা। সেখানে ডেসটিনির কেউ নেই। কয়েক দিন আগে ওই জায়গায় গিয়ে দেখা যায়, একাংশে জলাশয় থাকায় সেখানে মাটি ফেলে সমান করছেন কয়েকজন নারী-পুরুষ। তাঁদের পরিচয় জানতে চাইলে ‘স্থানীয়’ বলে এড়িয়ে যান।
নবাব রোড এলাকার বাসিন্দা ও ডেসটিনির কয়েকজন গ্রাহক জানান, এ জায়গার বর্তমান বাজারদর ১০ কোটি টাকার ওপরে হবে। জায়গাটি ভোগ-দখল করতে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কের কার্যালয়ে চাকরিরত ব্যক্তিদের একটি পক্ষ সক্রিয় হয়ে জায়গা ভরাট করছে। সিটি করপোরেশনের খাল খননে নিয়োজিত লোকজনের সঙ্গে তাঁদের অবৈধ যোগাসাজশ থাকতে পারে। জানতে চাইলে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক শেখ মো. জাহাঙ্গীর মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই একটা জায়গাই আমাদের হাতে আছে ভাই। জায়গা নিয়ে কোনো নেগেটিভ রিপোর্ট কইরেন না।’ তিনি বলেন, ‘এটা আসলে সিটি করপোরেশনকে আমরা সহায়তা করছি। তাঁরা অন্য কোনো জায়গা না পেয়ে খাল খনন করা মাটি আমাদের জায়গায় ফেলে রাখছে।’
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, গাভীয়ার খাল খনন প্রক্রিয়া সরাসরি সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ তদারক করছে। যোগাযোগ করলে সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘এটা কোনো ভরাটকাজ নয়। দ্রুত কাজ করার স্বার্থে অন্য কোনো জায়গা না পেয়ে ওই জায়গায় মাটি ফেলা হচ্ছে।’ বিতর্কিত কোম্পানির জায়গা এভাবে ব্যবহার করা আইনসিদ্ধ কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জনস্বার্থে সাময়িক ব্যবহার করা হচ্ছে। এর পরও আমরা বিকল্প বিবেচনা করব।’