প্রার্থী জেতাতে নতুন কৌশলে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ

0
102
Print Friendly, PDF & Email

প্রথমপর্যায়ে বিপর্যয় কাটিয়ে উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয়পর্যায়ে এককভাবে প্রার্থী জেতাতে নতুন কৌশলের ছক আঁকছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপি-জামায়াতের ঘাঁটি চিহ্নিত করে প্রশাসনিক সহায়তায় বিরোধী জোটের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিরত রাখতে তাদের প্রার্থীদের ওপর চাপ প্রয়োগ এবং আগের মামলাগুলো চাঙা করে গ্রেফতার ও হয়রানির মাত্রা বাড়ানোর কথা ভাবছে দলটির নেতারা। এ ছাড়া পরাজয়ের সঠিক কারণগুলো চিহ্নিত করে একক প্রার্থী চূড়ান্ত এবং বিদ্রোহী প্রার্থী দমনে হাইকমান্ড থেকে তৃণমূলপর্যায়ে কড়া নজর রাখছে দলটি। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র থেকে ফোনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
তারা জানান, দশম জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধী জোটের সহিংস কর্মকাণ্ড এবং সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার চিত্র ভোটারদের কাছে তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি সরকারের ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে ভোটারদের মধ্যে জোরালোভাবে প্রচারণা চালানো হবে। এতে জনগণের ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ উল আলম লেনিন নয়া দিগন্তকে বলেন, কেন্দ্র থেকে গঠিত সাতটি টিম মাঠপর্যায়ে কাজ করছে। তারা তৃণমূলে মনিটরিং করছে। বিদ্রোহী প্রার্থী দমন করে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, সামনের নির্বাচনগুলোতে যাতে ভালো ফল পাওয়া যায় সে জন্য যেসব এলাকায় বিদ্রোহী প্রার্থী আছে তাদের বুঝিয়ে সুজিয়ে বসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য স্থানীয় এমপিদের সহায়তা নেয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয়পর্যায়ে ১১৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি। প্রথমপর্যায়ের একটি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় আগামীকাল সোমবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে প্রথমপর্যায়ে ৯৭টি উপজেলার নির্বাচনের ৬২টিতেই ধরাশয়ী হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে পরিচিত ৩২টি উপজেলায় হানা দিয়েছেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা। এ ছাড়া শিামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, সাবেক ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরাসহ দাপুটে মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী নেতাদের এলাকায়ও পরাজিত হয়েছে ক্ষমতাসীনরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রথম দফার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মাত্র ৩৪টিতে জয়লাভ করায় হাইকমান্ড উদ্বিগ্ন ও হতাশ। এর আগে এই ৯৭ উপজেলার ৬৭টিতেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জয়লাভ করেন। নির্বাচন নিয়ে নেতারা সন্তোষ প্রকাশ করলেও পরাজয়ের কারণ নিয়ে ইতোমধ্যে বৈঠক করেছেন নীতি নির্ধারণীপর্যায়ের নেতারা। আশাতীত ফল পেতে নতুন কৌশল নিয়ে আগানোর চিন্তা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে আওয়ামী লীগ সভাপতি কথা বলতে শুরু করেছেন। একই সাথে প্রথমপর্যায়ের বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে দ্বিতীয় ধাপে কিভাবে দল সমর্থিত প্রার্থীদের জেতানো যায় সে বিষয়ে আলোচনা চলছে।
আওয়ামী লীগের মধ্যম সারির এক নেতা জানান, প্রথমপর্যায়ের নির্বাচনে ফল আশাতীত হয়নি। ফলে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে আনার জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এতে একাধিক কৌশল নেয়া হচ্ছে। যেটা কাজে দেবে, ওই কৌশল ফলো করা হবে। ওই নেতা আরো জানান, বিরোধী জোটের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিরত রাখতে প্রশাসনিক সহায়তা নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তৃণমূলের সাংগঠনিক দুর্বলতা, অভ্যন্তরীণ দলাদলি, তৃণমূলপর্যায়ের নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করায় তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের প্রতিফলন প্রথম দফার নির্বাচনে স্পষ্ট। তাই কৌশলে প্রশাসনিকভাবে চাপ প্রয়োগ করার কথা ভাবা হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে সাংগঠনিক দুর্বলতা থাকায় এর আগে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে একমাত্র প্রশাসনের ওপর ভর করে সরকারের সাফল্য এসেছে। একইভাবে এই নির্বাচনেও প্রশাসনই ভরসা বলে মনে করছেন নেতারা। এ ছাড়া ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে সহিংসতার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের নামে অনেক মামলা হয়েছে। ওই এলাকাগুলো চিহ্নিত করে ওপর মহল থেকে মামলাগুলো চাঙা করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। এতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দৌড়ের ওপর রাখা হলে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবে না। এতে সরকারি দলের প্রার্থীরা সহজেই সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছে যাবেন বলে মনে করছেন নেতারা।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের সম্পর্কে আরেক নেতা জানান, বিদ্রোহী প্রার্থী একমাত্র মাথাব্যথার কারণ হলেও হুটহাট করে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছে দলটি। প্রথম দফায় ১৩ উপজেলায় ৩২ জনকে বহিষ্কার করে কোনো লাভ হয়নি। ঢালাওভাবে বহিষ্কার করলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। ৬২টি উপজেলায় পরাজয়ে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই মাথায় হাত বুলিয়ে হোক, চাপ প্রয়োগ করে হোক বা বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে হোক তৃণমূলপর্যায়ে বিভক্তি কমিয়ে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতেই আশাতীত ফল বয়ে আনবে বলে মনে করছেন নেতারা। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় এমপিদের ওপর এবার বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। এমপিরা বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন করার পেছনে উৎসাহ দিচ্ছেন। যা দলের জন্য নেতিবাচক ফল এনেছে। প্রথম দফায় প্রার্থী জেতাতে হোঁচট খেলেও সামনের নির্বাচনগুলোতে ভালো করার দৃঢ় প্রত্যয় রয়েছে নেতাদের।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রথমপর্যায়ে অনেক জায়গায় একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে না পারলেও সামনের নির্বাচনগুলোতে তা গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে যতটুকু শাস্তি পাওয়ার যোগ্য বা কঠোর অবস্থানে থাকা দরকার সে বিষয়ে এবার ছাড় দেয়া হবে না। তিনি জানান, বিদ্রোহী প্রার্থীদের সরাতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সমঝোতার অপেক্ষা করা হবে।

শেয়ার করুন