পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদে। বর্তমান মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদেরর জায়গায় স্থান পেতে পারেন গোলাম মসিহ অথবা অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।
এ পরিস্থিতিতে পার্টিকে পুনর্গঠনের জন্য জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে কাউন্সিল। এ লক্ষ্যে আগামী মার্চ বা এপ্রিলে জাতীয় পার্টির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে জাপা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়।
এদিকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে বর্তমান মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের ওপর দলের চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ ভীষণ অসন্তুষ্ট। বিশেষ করে রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী রতনা আমিন হাওলাদারের বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ এবং মহাসচিব মনোনয়ন প্রত্যাহার না করার বিষয়টি এরশাদ গোপন আঁতাত হিসেবে দেখছেন।
এরশাদকে যেদিন র্যাব তুলে নিয়ে যায় রুহুল আমিন হাওলাদারের সেদিনের ভূমিকায় দলের নেতাকর্মীরা সন্তুষ্ট নন। এরশাদকে তুলে নেয়ার পর সেদিন মধ্যরাতেই রুহুল আমিন বলেছিলেন, এরশাদ অসুস্থ। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরেরদিনিও একই কথা বলে তিনি নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন।
অন্যদিকে এইচএম এরশাদ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এসেই পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে বহিষ্কার করতে চেয়েছিলেন। আর ওই পদে বসাতে চেয়েছিলেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খানকে। কিন্তু দেলোয়ার হোসেন খান শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ওই পদ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। পরে তাকে এরশাদ পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব করতে চাইলেও তিনি তাতে সায় দেননি। ফলে থমকে যায় ওসময় পার্টির মহাসচিব পদে রদবদল প্রক্রিয়া।
অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান এর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি। আর বর্তমানে মহাসচিব যেভাবে দলের জন্য সময় দেন আমার পক্ষে সেভাবে সময় দেয়া স্বাস্থ্যত কারণে সম্ভব নয়।
জাপা সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। তবে নির্বাচন কমিশনের আইনি জটিলতা এড়াতে আবেদন করে ৬ মাসের সময় নেয়া হয়। কিন্তু সেসময়ও অনেক আগেই পার হয়ে গেছে। পার্টির মেয়াদ উত্তীর্ণ জেলা কমিটিগুলোর পুনর্গঠনে কাউন্সিলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জেলা কমিটি গঠন শেষ হলেই আগামী মার্চ অথবা এপ্রিলে কেন্দ্রীয় কমিটির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। কারণ অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অবস্থা নাজুক।
বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা কাজী জাফর আহমদের সাথে রয়েছেন। আবার দলে থাকলেও মাত্র ৫-৭ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য এরশাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। অন্যরা সবাই এখন রওশন এরশাদের সাথে রয়েছেন। তাদের সাথে এরশাদের সাক্ষাৎ তো দূরের কথা, ইচ্ছা করলেও এরশাদ তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি এরশাদ কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির নেতাদের ডেকেছিলেন। কিন্তু তাতেও সাড়া দেননি পার্টির অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা। ওই অনুষ্ঠানে রওশন এরশাদসহ ৩০ জন সংসদ সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন। আর ৪১ জন প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৭ জন। আর ৭৪ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে থেকে ওই সভাতে এসেছিলেন মাত্র ২২ জেলার নেতারা।
জাপা সূত্র জানায়, বর্তমানে জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্যই কাজী জাফর আহমদের সাথে রয়েছেন। অবশ্য কাজী জাফর ছাড়া অন্য কারোর বিরুদ্ধেই এখনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়নি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। কারা কাজী জাফরের সাথে রয়েছেন এ বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি দলের দফতর সম্পাদক সুলতান মাহমুদ।
কারণ অনেকেই আবার এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাপাতে ফিরে আসতে চাইছেন। এমনকি খোদ কাজী জাফর আহমদও এরশাদের নেতৃত্বে ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব কারণেই কাজী জাফরের সাথে যাওয়া জাপা নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
সূত্র আরো জানায়, ক্ষমতার মসনদে থেকে জাতীয় পার্টি গঠন করেন এইচএম এরশাদ। অনেকে আসা যাওয়া করলেও দীর্ঘ একযুগ ধরে পার্টির মহাসচিব পদে রয়েছেন এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। এবারও মহাসচিব পদের জন্য লড়াই করবেন তিনি। তার আশা- কাউন্সিলররা যদি মহাসচিব পদে তাকে নির্বাচিত করেন তাহলে তাতে কোনো আপত্তি নেই। আর পার্টির মহাসচিব পদে রদবদল হবে কিনা তা নির্ধারণ করবে কাউন্সিলররা।
জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন এ বিষয়ে বলেন, আগামী মার্চ অথবা এপ্রিলে কাউন্সিল করার পরিকল্পনা রয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ চলছে। বর্তমানে আমি পটুয়াখালীতে আছি। শুক্রবার বরিশাল সফর করেছি। আর পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশা রংপুর সফরে রয়েছেন। এখন পার্টির মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটিগুলো গঠন করা হচ্ছে।