প্রযুক্তির সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন দেশে সামাজিক মাধ্যম একটি অপরিহার্য বিষয়। কিন্তু পৃথিবীর দেশে দেশে এর অপব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। সাইবার অপরাধীদের গুজব থেকে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। ২০১১ সালে লন্ডন দাঙ্গা বা ২০১২ সালে বাংলাদেশের রামুর ঘটনা জগৎজুড়ে আলোচিত। এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত সমস্যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর জন্য লাই ডিটেক্টর আনতে যাচ্ছেন গবেষকরা।
তবে এটি এখনো গবেষণার পর্যায়েই রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। প্রাথমিকভাবে মিথ্যা সংবাদ ও গুজব খুঁজে বের করাই হবে এর কাজ। পরবর্তীতে এ প্রযুক্তির মাধ্যমে গুজবের উৎসও খুঁজে বের করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে শুধু যে গুজব ঠেকানো যাবে, তা নয়। সহায়তা করা যাবে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকেও। একই সঙ্গে জরুরি কাজে নিযুক্ত ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোও এর মাধ্যমে উপকৃত হবে। ইউরোপের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় এটি নিয়ে কাজ করছে। এ দলের নেতৃত্বে আছে ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারে অবস্থিত শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়। তারা এমন একটি সিস্টেম বা ব্যবস্থা তৈরির কথা ভাবছে, যেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে যে কোনো তথ্যের সত্যতা এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র সম্পর্কে জানতে পারবে। টাইমস পত্রিকা জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ প্রকল্পে ৪৩ লাখ ইউরো ব্যয় করছে এবং এটি শেষ হতে অন্তত ১৮ মাস সময় লাগতে পারে। শেফিল্ড ছাড়া বাকি চারটি বিশ্ববিদ্যালয় হল কিংস কলেজ লন্ডন, ইংল্যান্ডের ওয়ারউইক, জার্মানির সারল্যান্ড এবং ভিয়েনার মোডুল বিশ্ববিদ্যালয়। এর সঙ্গে আরও চারটি কোম্পানি কাজ করছে। সেগুলো হল স্পেনের আটোস, কেনিয়ার আইহাব, বুলগেরিয়ার অনটোটেক্সট এবং সুইস-ইনফো। গবেষকরা জানিয়েছেন, ইমারজেন্সি সার্ভিস, গণমাধ্যম এবং প্রাইভেট সেক্টরে এটা বেশ কাজে দেবে। কেননা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব সেক্টর নিয়ে নানা ধরনের গুজব ছড়াতে দেখা যায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থ সহায়তায় তিন বছরের প্রকল্পটির নাম দেয়া হয়েছে ফিমে। এর মাধ্যমে টুইটার ও ফেসবুকে ব্যবহারকারীদের দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা যাবে। এক বিবৃতিতে প্রকল্পের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্তমানে প্রচুর গুজব ও অসত্য তথ্য দেখা যায়। এ ধরনের বার্তাগুলোর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে, যা পরবর্তীতে বড় ধরনের কোনো বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। কিন্তু এ তথ্য ভাণ্ডারটি এতটাই বিশাল যে ঠিক যখন এটা দেয়া হবে তখনই এটা যাচাই-বাছাই করা সম্ভব নয়। এতে কিছুটা সময় লাগবে। তারা এখানে কিছু উদাহরণ তুলে ধরেছেন, যেমন ২০১১ সালে লন্ডনে দাঙ্গার ঘটনা। তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল লন্ডন আই অবজারভেশন হুইলে আগুন লেগে গেছে। আর লন্ডন চিড়িয়াখানা থেকে সব প্রাণীকে বের করে দেয়া হয়েছে। এ সবই ছিল গুজব। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা প্রতিদিনই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কিছু না কিছু তথ্য যোগ করেন।
স্মার্টফোনের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনগুলোও ব্যবহারকারীদের ধারণার চেয়ে বেশি তথ্য নিয়ে থাকে। প্রকল্পের গবেষণা পরিচালক শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. ক্যালিনা বনচেভা জানালেন, সবচেয়ে বড় সমস্যাটা হল একটি খবর এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে সেটা সত্য না মিথ্যা তা খুঁটিয়ে দেখা সঙ্গে সঙ্গে সম্ভব হয় না। যেমন কোনো একটি গুজব সম্পর্কে সত্য ঘটনা যাচাই-বাছাই করতে করতে দেখা গেল সত্যটাও ততক্ষণে অনেকেই জেনে ফেলেছে। তাই প্রকৃত সময়ে এটা করাটাই আমাদের কাজ। প্রকল্পটি চার ধরনের তথ্য নির্ধারণে কাজ করছে জল্পনা, বিতর্ক, ভুল তথ্য এবং অসত্য তথ্য। মূলত তিনটি ফ্যাক্টর ব্যবহার করে কাজটি করছেন গবেষকরা।
প্রথমত যে তথ্যটি দেয়া হয়েছে, দ্বিতীয়ত অন্য কেউ এ ধরনের তথ্য দিলে এবং তৃতীয়ত তথ্য ভাণ্ডার থেকে প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করা গেলে। জানা গেছে, সত্য তথ্যটা যাচাই-বাছাইয়ের পর ব্যবহারকারী তার পেজে দেখতে পাবেন। –