‘সোনালী ব্যাংকের হুঁশ ফিরছে ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর’

0
179
Print Friendly, PDF & Email

অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণেই সোনালী ব্যাংকে নানা জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সোনালী ব্যাংকের হুঁশ ফিরছে ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর। এরপর অবশ্য ব্যবস্থাও নিচ্ছে। কিন্তু আগে থেকে সতর্ক থাকলে ঘটনাই হয়তো ঘটত না।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলম রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
তিনটি উদাহরণের মাধ্যমে এমন বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি এম আসলাম আলম। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এতে প্রধান অতিথি ছিলেন।
ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ এইচ এম হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) প্রদীপকুমার দত্তসহ ব্যাংকের সব শ্রেণীর কর্মকর্তা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এম আসলাম আলম জানান, ব্যাংকের পাসওয়ার্ড হ্যাক করে সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা থেকে দুই লাখ ২৫ হাজার ডলার লুট করে নিয়ে গেছে হ্যাকাররা। আবার ব্যাংকের সিসিটিভি কাজ করে না বলে গত বছরের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের লঙ্কাকাণ্ডের রাতে ভিডিওফুটেজে কিছুই ধরা পড়েনি। আর কিশোরগঞ্জে সম্প্রতি সুড়ঙ্গ কেটে শাখা থেকে টাকা চুরি বা ডাকাতি হয়েছে। তিনি বলেন, এসবই হয়েছে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও ঝুঁকি ব্যবস্থপনার দুর্বলতার কারণে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী ২০১২ সালের হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ব্যাপারে বলেন, এই যে গোলমাল হয়েছে তার জন্য দায়ী সোনালী ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা। এই অবস্থা তারা এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তবে কাটিয়ে উঠছে।
অনুষ্ঠানে আসলাম আরও বলেন, কিশোরগঞ্জের ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে জানা গেছে যে ওই শাখায় ঝুঁকি ছিল। ব্যাংকের ঝুঁকিগুলোকে আগাম চিহ্নিত করে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বলে মত দেন তিনি।
গ্রাহক সেবার মানোন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকে ঝুঁকিমুক্ত নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। সবাই যেন স্বাচ্ছন্দ্যে সেবা পেতে পারেন। আর অনলাইন ব্যাংকিং সেবা যেন কোনো যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে ব্যাহত না হয়, এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, কেবল আমানত নেওয়াই ব্যাংকের কাজ নয়। ব্যাংকের প্রধানতম কাজ হলো অলস অর্থের উপযুক্ত ব্যবহার। এ জন্য তিনি ব্যবসা পরিচালনার পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংকারদের নিজস্ব উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন। সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সেবা দেওয়ার আগ্রহ আপনাদের আরও বাড়াতে হবে। তাহলেই জানতে পারবেন কী কী ক্ষেত্রে সেবা দেওয়া যায়।
গতকাল রাতে মুঠোফোনে জানতে চাইলে হ্যাকিংয়ের বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন আসলাম আলম। তিনি বলেন, ‘এটি ঢাকা থেকে সূত্রপাত হওয়া ঘটনা। আর ডলার গেছে লন্ডনে। সোনালী ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) শাখা এখন যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তাতে এ রকম ঘটনা আর না ঘটারই কথা। তবে আগে সতর্ক থাকলে, এটি ঘটতেই পারত না।
ওই ডলার উদ্ধারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তুরস্কের ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের সাহায্য নেওয়া হয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ এইচ এম হাবিবুর রহমান বলেন, হল-মার্ক কেলেঙ্কারিসহ নানা কারণে সোনালী ব্যাংকের ভাবমূর্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাংকটি। হারানো ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার জন্য এখন আমাদের দ্বিগুণ কাজ করতে হবে।
জানতে চাইলে প্রদীপকুমার দত্ত মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, একটি বার্তার পরিপ্রেক্ষিতে সোনালী ব্যাংকের যুক্তরাজ্য শাখা ভুলভাবে অর্থ পরিশোধ করেছে। আর অর্থ তুলে নিয়ে গেছেন তুরস্কের একজন গ্রাহক। তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতায় তুরস্কে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও তুরস্কের সংশ্লিষ্ট ব্যাংক মিলে অর্থ উদ্ধারের জন্য বিষয়টির নিষ্পত্তির চেষ্টা করছে।

শেয়ার করুন