উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম দফার ফলাফলে উজ্জীবিত বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকেরা ২৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফায় ১১৭টি উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আরও আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। একই সঙ্গে সতর্কও।
সতর্কতার কারণ সম্পর্কে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা বলেন, তাঁরা আশঙ্কা করছেন, প্রথম পর্বের খারাপ ফলাফল পুষিয়ে নিতে সরকার দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ‘বলপ্রয়োগ’সহ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের ধারণা, যেসব উপজেলায় সরকারি দলের সমর্থিত প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করেছে, প্রথম ধাপে সেসব উপজেলায় নির্বাচন দিয়েছে। যাতে নিজেদের জয় দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। এর মাধ্যমে সরকার একটি মনস্তাত্ত্বিক খেলা খেলতে চেয়েছে। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো। এটা পুষিয়ে নিতে দ্বিতীয় ধাপে সরকার মরিয়া হয়ে উঠতে পারে।
এ অবস্থায় বিএনপি উপজেলার পরবর্তী নির্বাচনগুলোর প্রতি সতর্ক ও সর্বাত্মক মনোযোগ দিয়েছে। পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের ব্যাপারে নমনীয় থাকার কৌশল নিয়েছে দলটি। আপাতত বহিষ্কারের মতো কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে দলীয় সূত্রগুলো জানায়, প্রথম দফার নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে অনেকে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছিলেন। বসাতে ব্যর্থ হয়ে অন্তত ১৭ জন ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এখন দলটির মূল্যায়ন হলো, এ ধরনের বহিষ্কারের ফলে দলের মাঠপর্যায়ে নতুন সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
এ অবস্থায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া একেবারে বাধ্য না হলে কাউকে বহিষ্কার না করার নির্দেশনা দিয়েছেন। কারণ ‘বিদ্রোহী’ অনেকে আছেন, যাঁরা মাঠের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ। তাই এখন বিএনপির কেন্দ্র থেকে ও স্থানীয়ভাবে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের বশে রাখার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। এর পরও ‘বিদ্রোহী’ কেউ জয়ী হলে তাঁদের দলে ধরে রাখা হবে।
প্রথম দফা ৯৭ উপজেলা নির্বাচনে ৫৪টিতে বিএনপির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে একাধিক নেতা প্রার্থী হয়েছিলেন। এর পরও প্রথম দফায় ৪৩টিতে বিএনপি-সমর্থিত ও ১২টিতে দলটির মিত্র জামায়াত-সমর্থিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জয়ী হন।
দলের স্থায়ী কমিটি ও উপজেলা নির্বাচন সমন্বয়ে গঠিত কমিটির কয়েকজন সদস্য জানান, এ নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে শুরুতে কিছুটা দ্বিধা ছিল। এ কারণে প্রথম ধাপের নির্বাচনে শুরুতে কেন্দ্র থেকে যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া যায়নি। এখন দলটির মূল্যায়ন হচ্ছে, সবগুলো উপজেলায় একক প্রার্থী দিতে পারলে প্রথম ধাপে ফলাফল আরও ভালো হতো। এখন দ্বিতীয় দফার ১১৭ উপজেলার মধ্যে ৮০টি উপজেলায় বিএনপির একক প্রার্থী আছেন। বাকিগুলোতে একক প্রার্থী রেখে অন্যদের বসিয়ে দেওয়ার জন্য দলটি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এখনো কিছু জায়গায় একাধিক নেতা প্রার্থী আছেন। স্থানীয় নেতারা নিজেরা এসব ঠিক করছেন। কেন্দ্র থেকে তাঁরাও খোঁজখবর রাখছেন। আজকালের মধ্যে এসব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলে তাঁরা আশা করছেন।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে বিএনপি জোটগতভাবে প্রার্থী দেওয়ারও চেষ্টা করছে। এ জন্য জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয়ভাবে আলোচনা চলছে।
এ ছাড়া বিজয়ের সম্ভাবনা আছে এমন দলের প্রার্থীকে রেখে বাকিদের বসিয়ে দিতে কেন্দ্র থেকে গঠিত সমন্বয় কমিটির পাশাপাশি অঞ্চলভিত্তিক কমিটিও কাজ করছে। এতে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাংগঠনিক সম্পাদকেরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সার্বিকভাবে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি। এ কমিটির সদস্য বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, ১৯ তারিখের ফলাফলের পর সামনের নির্বাচনে সরকারি সন্ত্রাস, কেন্দ্র দখল আরও বাড়তে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন। স্থানীয়ভাবে এটি প্রতিরোধ করা গেলে ফলাফল আরও ভালো হবে তাঁরা মনে করেন।