মহানগর কমিটি নিয়ে বিএনপিতে দ্বন্দ্ব

0
95
Print Friendly, PDF & Email

বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটি পুনর্গঠনকে কেন্দ করে দলের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আন্দোলনে ব্যর্থতার অভিযোগে দলের ঢাকা মহানগরীর আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন এবং ছাত্রদল-যুবদলসহ কয়েকটি অঙ্গদলকে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকে সিনিয়র নেতারা দুই পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। গত ৫ দিনে এই দ্বন্দ্ব বেড়েছে বড় মাত্রায়।

এক গ্রুপ বর্তমান কমিটি বহাল রাখার জন্য দলের চেয়ারপার্সনের কাছে বহুমুখি তদবির করছেন। এই গ্রুপের দুইজন মাত্র সিনিয়র নেতা আছেন। তবে হাইকমান্ডের কাছের এই দুই নেতা এই পক্ষে। যাদের ওপর কোন কোন ক্ষেত্রে নির্ভর করেন বেগম খালেদা জিয়া। তার কাছে এদের প্রবেশাধিকারও সংরক্ষিত নয়। দলের নেতৃত্বে এদের প্রভাব না থাকলেও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তারা প্রভাবশালী। অপর পক্ষ দ্রুত বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিটি করার জন্য হাইকমান্ডকে পরামর্শ দিচ্ছেন। দলের প্রায় সব নেতাই এই পক্ষে।

হাইকমান্ডের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে হঠাত্ ম্রিয়মাণ হয়ে গেছেন চেয়ারপার্সন। এখন তিনি নিজেই বিব্রত। সবকিছু যেন থেমে গেছে। খালেদা জিয়া পক্ষকাল আগে স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেন যে, এক মাসের সময় দিয়ে মহানগর কমিটি করা হবে। ঢাকার ১০০টি ওয়ার্ডে সম্মেলন করে নতুন কমিটি হবে। তাও এক মাসের মধ্যে। এই কমিটিগুলো নতুন করে সাজানোর জন্য বিশেষ কমিটি করার সিদ্ধান্ত ছিল এক সপ্তাহের মধ্যে। তারপর দু’সপ্তাহ অতিবাহিত হয়ে গেছে। বিশেষ কমিটি হয়নি। ইত্যবসরে বেগম জিয়া ৯ ফেব্রুয়ারি দলের মহানগর কমিটির নেতাদের তলব করেন তার গুলশানের দফতরে।

বেগম জিয়া বলেন, মহানগর কমিটির নেতারা ব্যর্থ। এক সপ্তাহের মধ্যে এই কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হবে। নতুন কমিটি করবো। সেই কমিটিতে এই কমিটির ব্যর্থদের রাখা হবে না। ঐ সময় মহানগর আহবায়ক সাদেক হোসেন খোকা ছিলেন কারাগারে। তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে আসেন ১৯ ফেব্রুয়ারি। এরপর তার পক্ষের নেতারা সক্রিয় হন। খোকার পক্ষের নেতারা বেগম জিয়াকে এটা বোঝাতে চেষ্টা করেন যে, সরকার তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে নেয়। তিনি বাইরে ছিলেন না। তিনি আত্মগোপনে থাকাকালে চেষ্টা করেছেন আন্দোলন গড়ে তোলার। কিন্তু সমাবেশে সরাসরি গুলি করার হুকুম থাকায় রাজপথে নামা যায়নি। খোকার পক্ষের নেতারা বলছেন, যারা মহানগর কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার পক্ষে তারা তখন কোথায় ছিলেন? তারা নিজেরা দায় এড়ানোর জন্য মহানগর কমিটির বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন।

মহানগর কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি করার পক্ষের নেতারা আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য সরাসরি মহানগর নেতৃত্বকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, রাজধানীর ওয়ার্ড কমিটিগুলো দুই নেতা তাদের ‘পকেট কমিটি’ করেছেন। ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সুবিধাবাদিদের দিয়ে পকেট কমিটি করা হয়েছে। ফলে আন্দোলনে ত্যাগী নেতারা নামেননি। পকেট কমিটির নেতারাও নামেননি। এছাড়াও অনেক ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের কমিটিও হয়নি গত চার বছরেও।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, আমরা স্থায়ী কমিটিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম মহানগর আহবায়ক কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি করবো। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে হবে সে কমিটি যারা রাজপথে আন্দোলন করতে পারবে। আন্দোলনের প্রাণকেন্দ রাজধানীতে কোন আন্দোলন গড়তে পারেননি এখানকার দায়িত্বশীল নেতারা। আমরা বলবো তারা ব্যর্থ। তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে আন্দোলন হয়েছে আর ঢাকায় কিছু হয়নি। এই অবস্থা আর চলবে না। চেয়ারপার্সন নিজেই সেটা অবলোকন করেছেন। এখন কমিটি নিয়ে কেন বিলম্ব হচ্ছে তা টের পাচ্ছি না। তিনি বলেন, শুনছি একটি পক্ষ এই আহবায়ক কমিটি বহাল রাখতে চান। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য গয়েশ্বর চন্দ রায় বলেন, মহানগর কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটির সিদ্ধান্ত হয়েছিল স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। তারপর অনেকদিন গেল। শুনেছি সব কিছু ম্যানেজের চেষ্টা চলছে। এনিয়ে দলের নেতা-কর্মীরা দ্বিধায় আছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র নেতা বলেন, অতীতেও বিএনপির মহানগর কমিটি নিয়ে দলের সিনিয়র নেতারা বিভক্ত ছিলেন। ফলে অনেক দিন কমিটি ছাড়াই চলেছে বিএনপি।

২০১১ সালের ১৪ মে সাদেক হোসেন খোকাকে আহবায়ক এবং আবদুস সালামকে সদস্য সচিব করে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করেন বেগম জিয়া। এই কমিটিকে ছয় মাসের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়। ওই সব কমিটি গঠনের পর নগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে জানানো হয়। তার আগে ওয়ান ইলেভেনের সময় বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকাবস্থায় তার নির্দেশে ২০০৮ সালের ৪ জুন দলের প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মহানগর কমিটি ভেঙ্গে দেন। খালেদা জিয়া মুক্তির পর ২ বছর ৪ মাস ধরে বিএনপির মহানগর কমিটি করা হয়নি কারণ মির্জা আব্বাস ও সাদেক হোসেন খোকার দ্বন্দ্ব। তখন দলের স্থায়ী কমিটিতে নেতাদের বিভক্তি চরম আকার ধারণ করে। পরে মির্জা আব্বাসকে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হয় এবং খোকাকে মহানগর কমিটির আহবায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়।

শেয়ার করুন