রাজার হালে’ পুলিশ অন্য ক্যাডারে ক্ষোভ

0
90
Print Friendly, PDF & Email

পুলিশকে ভাগ্যবান বলতেই হবে। কেননা সরকারের যেকোনো দপ্তরের তুলনায় গত পাঁচ বছরে তাদেরই সুবিধা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। এমনকি বিভিন্ন ক্যাডারে অ্যাডহক ভিত্তিতে অপরিকল্পিত যে সংস্কার হয়েছে, তাতেও এগিয়ে পুলিশ। এই অবস্থায় এ বাহিনীতে আরো ৫৬ হাজার সদস্য নিয়োগের ঘোষণা এসেছে, যা নিয়ে বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। এর প্রতিফলন আছে সংস্কার নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের লেখা একটি চিঠিতেও। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেকের কাছে লেখা চিঠিতে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ওপরের দিকের বিভিন্ন গ্রেডে যে পুনর্বিন্যাস হয়েছে, তাতে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে পুলিশ।
সার্বিক প্রশাসনিক সংস্কার বিষয়ে নতুন কোনো চিন্তাভাবনা আছে কি না জানতে অর্থমন্ত্রী ৮ ফেব্রুয়ারি চিঠি লেখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে। চিঠিতে তিনি সংস্কার নিয়ে ২০০৮ এবং ২০১৩ সালের নির্বাচনী অঙ্গীকারের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর চিঠিতে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের প্রসঙ্গও এসেছে। সরকারের কোনো মন্ত্রী বর্তমানে প্রচলিত ২৮টি ক্যাডারের সমস্যা নিয়ে কোনো ধরনের বক্তব্য দেন না। প্রশাসন-সংশ্লিষ্টদের কথা হচ্ছে, ক্যাডারের জটিল বিষয়গুলো নিয়ে মন্ত্রীরা চিন্তাভাবনা করেন বলে মনে হয় না। সভা-সেমিনারেও মন্ত্রীরা এ প্রসঙ্গ মুখে আনেন না। এই অবস্থায় অর্থমন্ত্রীর ২৮টি ক্যাডারের সমস্যা নিয়ে কথা বলাকে তাঁরা সাধুবাদ জানিয়েছেন।
অর্থমন্ত্রী জীবনবেগী চাকরির বিন্যাস নিয়ে চিন্তা করার তাগিদ দিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে। তিনি বলেছেন, ‘একসময়ের ধারণা ছিল ক্যাডারের কোনো প্রয়োজন নেই। শুধু বেতন ও মর্যাদা বিন্যস্ত করলেই যথেষ্ট। আবার ক্যাডার সৃষ্টি করার সময়েই কোনো এক গোষ্ঠীর সব পদও ক্যাডারভুক্ত হয়নি। আমাদের এবারের একটা প্রধান অঙ্গীকার হচ্ছে- ক্ষমতার প্রতিসংক্রম এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বিকেন্দ্রায়ণ।’
অতিমাত্রায় রাজনীতি ঢুকে পড়ায় অর্থমন্ত্রী গত মেয়াদেও প্রশাসনে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মতো আমাদেরও প্রশাসন হওয়া উচিত যুগ্ম সচিব পর্যায় পর্যন্ত। অতিরিক্ত সচিব এবং সচিব পদে নিয়োগ দেবে ক্ষমতাসীন দল। একটি দল যখন ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবে তখন অতিরিক্ত সচিব ও সচিবরাও বিদায় নেবেন।’ তিনি এ প্রস্তাব দিয়েছিলেন বাস্তবতার ভিত্তিতেই। কারণ বর্তমান প্রশাসনে সরকারের একান্ত আজ্ঞাবহ না হলে কারো পক্ষে এসব পদে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। কিন্তু আমলারা সেই প্রস্তাবের বিরোধিতা করায় তা আর আলোর মুখ দেখেনি। এর পরও প্রশাসন সংস্কারে নতুন করে উদ্যোগী হয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তবে এর জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে নেই। এসব বিষয়ে তথ্য জানাতে তিনি অনুরোধ করেছেন। তিনি তিনটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। এগুলো হচ্ছে- গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন ক্যাডারে কী কী পদ এবং পদের শ্রেণী পরিবর্তন হয়েছে, বিভিন্ন ক্যাডারের পদসংখ্যা, পদবিন্যাস এবং পদস্তরে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে এবং এসব বিষয়ে বর্তমানে জনপ্রশাসন আর কী কী বিষয় বিবেচনা করছে। অর্থমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘গত পাঁচ বছরে প্রশাসনে সে রকম নীতিগত সংস্কার হয়নি। কিন্তু বিভিন্ন ক্যাডারের অবস্থান অ্যাডহকভাবে পুনর্বিবেচিত হয়েছে। সর্বোপরি ওপরের দিকের পদ যেমন- গ্রেড ১, গ্রেড ২, গ্রেড ৩ অনেক ক্ষেত্রে পুনর্বিন্যস্ত হয়েছে। আমার হিসাব মতে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে পুলিশ দপ্তর।’
অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যে প্রশাসনের পুরো চিত্র উঠে এসেছে বলে মনে করেন সচিবালয়কেন্দ্রিক কর্মকর্তারা। তাঁদের মতে, গত পাঁচ বছরে পুলিশে একের পর এক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে পদের মান। পুলিশের নতুন নতুন ইউনিট গঠন করা হয়েছে। অথচ এসব সংস্কারের জন্য কোনো বিশেষজ্ঞ কমিশন গঠন করা হয়নি। কোনো সুপারিশও আসেনি। তার পরও অ্যাডহকভিত্তিতে এসব সংস্কার কাদের মতামতের ভিত্তিতে হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রশাসন ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা জানি বাংলাদেশে পুলিশের সংখ্যা অপর্যাপ্ত। প্রতি হাজারে মাত্র ৩০ জন পুলিশ আছে, যা নিতান্তই কম। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সদস্য বাড়ানো দরকার। সেই সঙ্গে অন্য সব সেক্টরের চাহিদাও সঠিকভাবে নিরূপণ করা দরকার।’ তাঁদের মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বেড়েছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিটি সেক্টরের সম্প্রসারণ জরুরি। প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ না করে শুধু পুলিশ নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে, যার ফল শুভ নয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা আরো বলেছেন, পাঁচ বছরে পুলিশ সরকারকে অনেক
সহায়তা দিয়েছে। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধ ইস্যু এবং বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলায় পুলিশ সরকারকে ‘অভূতপূর্ব সেবা’ দিয়েছে। তবে তার প্রতিদান হিসেবে শুধু পুলিশের সংস্কার কারো কাম্য হতে পারে না।
গত ২৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পুলিশ সংস্কার নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। একজন উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে পুলিশের জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডারে ৫৬ হাজার নতুন সদস্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া অপরাধ দমনে নতুন করে ৩৫৯টি আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) চেয়েছে পুলিশ বাহিনী। ওই বৈঠকে পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার টেরোরিজম ‘পিবিসিটি’ নামে বিশেষ ইউনিট গঠনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এপিসির বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত জানা না গেলেও ৫৬ হাজার পুলিশ নিয়োগে সরকারের সম্মতি রয়েছে। এ ছাড়া পিবিসিটিও গঠন করা হবে। যদিও মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘৫৬ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োগের বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ধরনের কোনো বিষয় প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে অনুমোদন হয়নি।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত পাঁচ বছরে পুলিশে ৩০ হাজারের বেশি লোকবল নিয়োগ হয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব নিয়োগ হয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। এই অবস্থায় আবারও ৫৬ হাজার পুলিশ নিয়োগের আগে কত পুলিশ দরকার তা নিরূপণ করা উচিত। তা না হলে এসব নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। সরকার বদল হলে এই পুলিশ সদস্যরা চাকরি নিয়ে ঝামেলায় পড়তে পারেন।
গত পাঁচ বছরে সরকারপ্রধানের নির্বাহী আদেশে মাঠপর্যায়ের পুলিশ পরিদর্শক ও উপপরিদর্শক পদের মান যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে তুলে আনা হয়েছে। প্রচলিত নিয়মকানুন এ ক্ষেত্রে মানা হয়নি। বাড়ানো হয়েছে পুলিশের কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় পদের মানও। গত পাঁচ বছরে পুলিশপ্রধানের পদকে সিনিয়র সচিবের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আর অতিরিক্ত আইজি নামের দুটি পদের মান বাড়িয়ে এ-গ্রেড করা হয়েছে। এ ছাড়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ, এপিবিএন বিশেষায়িত ট্রেনিং সেন্টার, পুলিশের আলাদা তদন্ত ইউনিট পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পুলিশ তদন্তকেন্দ্র করা হয়েছে ৬৫টি। এ ছাড়া গত মেয়াদে পুলিশের রেশনও বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের রেশন বাড়াতে গিয়ে অন্য কয়েকটি সেক্টরেও এর প্রভাব পড়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের রেশন বাড়ানো হলো। অথচ সরকারি কর্মচারীদের দেওয়া হলো না। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের রেশন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ছিল।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে সরকার মেধাভিত্তিক প্রশাসন গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার কাঠামোকে শক্তিশালী করে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের প্রতিশ্রুতি ছিল। সরকার এসব প্রশাসনিক সংস্কার না করেই আবার উপজেলা নির্বাচন করছে।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব আলী ইমাম মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, যেসব সংস্কার হচ্ছে তা বিছিন্নভাবে। কোনো একটা কমিশন বা কমিটি করে সংস্কারের পূর্ণাঙ্গ রূপ নিরূপণের পরই সংস্কার করা উচিত। তাহলে সব সেক্টরের সংস্কার হবে। না হলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ পড়তে পারে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সরকারের সেই ধরনের কোনো উদ্যাগ নেই। পুলিশে সংস্কার হতেই পারে। সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রশাসনের সংস্কারকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সব সেক্টরে সংস্কার হলে কোনো প্রশ্ন উঠবে না।
কর্মকর্তাদের মতে, জনপ্রশাসনেও সংস্কার হয়েছে। তবে তা হয়েছে সীমিত পরিসরে। গত পাঁচ বছরে সিনিয়র সচিবের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। কয়েকটি মন্ত্রণালয় ভেঙে একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ হয়েছে। এসব সংস্কারেও বিশেষজ্ঞ কারো পরামর্শ নেওয়া হয়নি। নতুন করে ক্ষমতায় এসে সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থার ৩০টি পদকে এ-গ্রেডে উন্নীত করেছে। এ ছাড়া ২০টি পদকে গ্রেড টু-তে উন্নীত করা হয়েছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি এ-সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
বিসিএসের ২৮টির মধ্যে স্বাস্থ্যই একমাত্র ক্যাডার, যেখানে প্রবেশকালীন যোগ্যতার চেয়ে বেশি ডিগ্রির প্রয়োজন হয় পদোন্নতিতে। অন্য সব ক্যাডারে প্রবেশকালীন যোগ্যতাই সর্বোচ্চ পদে পদোন্নতির জন্য যথেষ্ট। অথচ স্বাস্থ্য ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ অধ্যাপক হতে হলে তিনটি গবেষণা কাজ থাকতে হবে, যা বিভিন্ন সাময়িকীতে প্রকাশিত হতে হবে।
শিক্ষা ক্যাডারে কোনো সংস্কার হয়নি গত পাঁচ বছরে। বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে শিক্ষা সবচেয়ে বড়। কিন্তু অন্যদের সঙ্গে তাদের বৈষম্য প্রকট। অন্য সব ক্যাডারে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি হলেও শিক্ষায় তা হয় না। ফলে এই ক্যাডারে চরম বিশৃঙ্খলা চলছে। বিসিএস শিক্ষা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মতিউর রহমান গাজ্জালী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে (জাতীয় পদমর্যাদা মানক্রম নির্ধারণী-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন) শিক্ষকদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের ২০ নম্বর ক্রমিকে শিক্ষা ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অবস্থান রাখা হয়েছে। কিন্তু কলেজগুলোর অধ্যক্ষ বা অধ্যাপকদের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে রাখা হয়নি। চিকিৎসা ও প্রকৌশল মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকদের অবস্থান নির্ধারণ করা আছে। অথচ অনেক বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেগুলোর গুরুত্ব চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে কম নয়। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে কলেজের অধ্যক্ষ বা অধ্যাপকদের অবস্থান ক্রমনির্ধারিত না থাকায় শিক্ষকদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। অধ্যাপকদের পদমর্যাদা যুগ্ম সচিবের সমান হলেও বেতন-ভাতায় সমস্যা আছে। আমরা অধ্যাপকদের মর্যাদা অতিরিক্ত সচিবের সমান করার জন্য দীর্ঘদিন থেকে বলে আসছি। কিন্তু কোনো সাড়া নেই। মাউশির মতো নায়েমের ডিজি, এনসিটিবির চেয়ারম্যান, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদগুলো এ গ্রেডে তুলে আনার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। এসব জায়গায় সংস্কার খুব জরুরি।’
১৯৮৩ সালের পর সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে বড় কোনো সংস্কার হয়নি। এরশাদ সরকারের সময় এনাম কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই সর্বশেষ সংস্কার হয়েছিল। তথ্য ক্যাডারে শুরুর পদ হচ্ছে জেলা তথ্য কর্মকর্তা। অথচ তাঁকে কাজ করতে হয় জেলা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে। এখানে একজন তরুণ কর্মকর্তার পক্ষে সবার সঙ্গে সমন্বয়সাধন করা সম্ভব হচ্ছে না। বিসিএস ইনফরমেশন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব স ম গোলাম কিবরিয়া গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে তথ্য কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর প্রচারে ব্যস্ত থাকেন। তাঁদের পক্ষে মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নমূলক সংবাদ বিভিন্ন মিডিয়ায় দেওয়া সম্ভব হয় না। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে একটি করে সেল থাকলে মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচার করা সম্ভব। এতে সরকারের উপকার হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন দপ্তর-অধিদপ্তরের সাংগঠনিক কাঠামোতে সংস্কার না হওয়ায় নানা স্তরে পদোন্নতি আটকে আছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের পক্ষে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া কঠিন। তাঁদের মনঃকষ্ট দূর করতে হলে বিভিন্ন পদে সংস্কার আনতে হবে।’
কৃষি ক্যাডারের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা দেশে চাকরিতে অনিশ্চয়তার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছেন। পদের চেয়ে বেশি কর্মকর্তা থাকার পরও প্রশাসন ক্যাডারে পদোন্নতি হয়। অন্য কোনো ক্যাডারে এ নিয়ম প্রযোজ্য নয়। বিষয়টি উল্লেখ করে কৃষি ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিসিএসআইআরের বিজ্ঞানীদের চাকরি ৬৫ বছর পর্যন্ত। আর আমার চাকরি ৫৯ বছর পর্যন্ত। কেন? আমিও বিজ্ঞানী, বিসিএসআইআরের বিজ্ঞানীও বিজ্ঞানী। তাহলে এই বৈষম্য কেন। চাকরির সব সুবিধা পুলিশ আর প্রশাসন ক্যাডারের?

শেয়ার করুন