কিশোরগঞ্জে সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখা থেকে টাকা চুরির ঘটনায় গ্রেপ্তার ইউসুফ মুন্সী ওরফে হাবিব ওরফে সোহেল রানা তদন্ত কর্মকর্তাদের বলেছেন, একটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠান দেখে তিনি সুড়ঙ্গ কাটার কৌশল রপ্ত করেছেন। আজ শুক্রবার রিমান্ডে তিনি কর্মকর্তাদের কাছে এমনটাই বলেছেন বলে জানা গেছে।
আজ শুক্রবার ইউসুফ মুন্সী ও তাঁর ছোট ভাই ইদ্রিস মুন্সীকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। সোহেল রানার একার পক্ষে সুড়ঙ্গপথ তৈরি করা আদৌ সম্ভব কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
তদন্তদলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য জানান, জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল রানা জানান, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি টেলিভিশন চ্যানেল দেখে তিনি সুড়ঙ্গ তৈরির কাজটি রপ্ত করেন।
পুলিশ কর্মকর্তারা আজ সোহেল রানাকে নিয়ে সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখায় যান। সেখানে সুড়ঙ্গপথ, ব্যাংকের ভল্ট পরিদর্শন করে পুলিশ। পরে পুলিশ তাঁর বাসস্থান ঘুরে দেখে।
জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সোহেল রানার পক্ষে একা সুড়ঙ্গ তৈরি করা কঠিন। কারণ সুড়ঙ্গ তৈরিতে প্রচুর কাঠ, বাঁশ, হাতুড়িসহ বিভিন্ন নির্মাণ যন্ত্রাদি ব্যবহার করা হয়। তাই কোনো সংঘবদ্ধ শক্তিশালী চক্র জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে সোহেল রানা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানান, তিনি সুড়ঙ্গ তৈরিতে খননকৃত মাটির কিছু অংশ তাঁর বাসার একটি কক্ষে এবং বাকি মাটি দুটি ঠেলাগাড়িতে করে পার্শ্ববর্তী নরসুন্দা নদীতে ফেলে দেন।
সূত্রমতে, টাকাগুলোর ওজন ২৪০ কেজি। বস্তায় ভরে সোহেল রানার একার পক্ষে রিকশায় করে টাকাগুলো ট্রাকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব কি না, তা-ও জানার চেষ্টা চলছে।
এদিকে, রাজধানী ঢাকার শ্যামপুরের যে বাসা থেকে সোহেল রানা ও তাঁর সহযোগীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে, সেই বাসার মালিক ব্যবসায়ী নূরুল হুদাকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে এনে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবদুুল মালেক জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে এসব বিষয় এ মুহূর্তে প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
গত রোববার কিশোরগঞ্জের সোনালী ব্যাংকের জেলা প্রধান শাখা থেকে ১৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা চুরি যাওয়ার ঘটনা ধরা পড়ে। ১০০ ফুট দীর্ঘ সুড়ঙ্গ তৈরি করে দুর্বৃত্তরা ব্যাংকটিতে ঢুকে ভল্ট থেকে ওই টাকা চুরি করে। পরদিন সোমবার থেকে ব্যাংকের শাখা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ অর্থ লুটকে দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চুরির ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার দুপুরের দিকে অভিযান চালিয়ে শ্যামপুর বাজার থেকে চুরির ঘটনায় জড়িত সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সঙ্গে ইদ্রিসকেও গ্রেপ্তার করা হয়।