সরকারবিরোধী আন্দোলনে সারাদেশে দলের অসংখ্য নেতাকর্মী নিহত হয়েছে বলে দাবি করছে বিএনপি। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে অসংখ্য নেতাকর্মী ‘গুম’ হয়েছে বলে অভিযোগ করছে দলটি। গত ২২ জানুয়ারি গণমাধ্যমে ‘গুম’ হওয়া নেতাকর্মীদের সংক্ষিপ্ত তালিকা দিলেও এখন পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এ তালিকা প্রস্তুত হলে চলতি সপ্তাহে এ বিষয় বিস্তারিত তুলে ধরতে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন বলে জানা গেছে।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করার পর থেকে এ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন করে বিএনপি। যা পরবর্তীতে ১৮ দলের আন্দোলনে রূপ নেয়। তবে গত বছরের ২৪ অক্টোবরের পর থেকে আন্দোলন জোরদার করে দলটি। আর তখন থেকেই মূলত সরকার বিরোধী আন্দোলনে টানা হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি শুরু হয়।
এসময়ের মধ্যে আন্দোলনে সারাদেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপি ও শরিক দল জামায়াতের প্রায় তিনশতাধিক নেতাকর্মী নিহত হয় বলে দাবি করে বিএনপি। একই সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়ার পর ১৮৭ জন নেতাকর্মীর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি বলেও দাবি করে দলটি। সবশেষ, নেতাকর্মীদের আটক করে ‘ক্রসফায়ারের’ নামে হত্যার অভিযোগ করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যকন্ত নিহত, গুম/নিখোঁজ ও আহত নেতাকর্মীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তাদের হাতে নেই বলে নতুন বার্তা ডটকমকে জানিয়েছেন দলটির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা।
তবে তিনি জানান, “পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজ চলছে।চলতি সপ্তাহের যেকোনো দিন দলের চেয়ারপারসন নিজেই সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরবেন।”
অন্যদিকে গত ২২ জানুয়ারি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যাজলয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৮৭ জন নেতাকর্মী ‘গুম’ হয়েছেন দাবি করে বলেন, “এই নেতাকর্মীদের নাম, ঠিকানা, দলীয় পরিচয় যাচাই-বাছাই করে কয়েক দিনের মধ্যে ‘সঠিক তালিকা’ প্রকাশ করা হবে।”
ওইদিনই একটি বিজ্ঞপ্তিতে যৌথবাহিনীর অভিযানে নভেম্বর ২০১৩ থেকে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি পর্যভন্ত নিহত ও গুমের তালিকা দেয় বিএনপি।এতে বলা হয়- যৌথবাহিনীর অভিযানে এ সময়ের মধ্যে বিএনপির নিহত হয়েছেন ২২৭ জন। আর জামায়াত ইসলামীসহ জোটভুক্ত অন্যান্য দলের ৬৭ জন নিহত হয়েছেন।
এছাড়া যৌথবাহিনীর অভিযানে ১৮৭ জন নেতাকর্মী গুম/নিখোঁজ হয়েছে বলেও দাবি করা হয় বিবৃতিতে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির গুলশান কার্যাতলয়ে একটি টিম ‘গুম-খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তালিকা প্রস্তুতে কাজ করছে। তৃণমূল নেতাদের কাছ থেকে খোঁজখবর নিয়ে এবং পত্র-পত্রিকা থেকে তথ্য -উপাত্ত সংগ্রহ করে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
এছাড়া এই তালিকা তৈরিতে নির্বাচন আগের ও পরের সহিংসতার ঘটনা তদন্তে বিএনপির গঠিত চারটি নাগরিক কমিটি সহযোগিতা করবে বলেও জানা গেছে।
জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে নাগরিক কমিটির সদস্যরা দুই একদিনের মধ্যে ঢাকায় আসবেন।পরে দুই একদিনের চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে জমা দিবেন।
এ ব্যাপারে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধা জেলার ঘটনা তদন্তে গঠিত টিমের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি অধ্যাপক আখতার হোসেন খান নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “রোববারের মধ্যে ঢাকায় ফিরে দুই একদিনের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে জমা দেয়ার চেষ্টা করবো।”
দলীয় সূত্র আরো জানায়, খালেদা জিয়ার এই সংবাদ সম্মেলনে বিদেশী কূটনীতিক ও মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে জোরালোভাবে কাজ চলছে বলেও জানা গেছে।
এদিকে গত, মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে দলীয় প্রধানের সংবাদ সম্মেলনের কথা মির্জা ফখরুলও জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি ‘গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে’র বিষয়ে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বানও জানান।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, “ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আমাদের সঙ্গে যোগযোগ করছে। তারা গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।”