আপনারা প্রশ্ন করুন অথবা আমি আগে ব্রিফ করতে পারি। তবে আমার পছন্দ আপনারা প্রশ্ন করুন, আমি উত্তর দিই’, কিন্তু আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন প্রশ্ন দিয়ে শুরু করার চেয়ে বক্তার বিবৃতি শোনাটাই নিয়ম। গতকাল শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে সমাপ্ত আইসিসি সভার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে কার্যত দুষেছেন বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমকে, ‘আমি ভাবতে পারি না যে বাংলাদেশের মিডিয়া এ ধরনের নিউজ করে কী করে!’
২৩ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিসিবি সভার পর দেশের সংবাদমাধ্যমের আচরণে খুবই ‘আহত’ হয়েছেন নাজমুল হাসান, ‘সভা করেই আমি চলে যাই। পরদিন দেখলাম, আমরা নাকি ‘পজিশন পেপারে’র পক্ষে ২০-৩ ভোট দিয়েছি। সেটাও কিনা লেখা হলো সভা নিয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়ার পর! আমরা পক্ষে আছি জেনে তিনটি দেশ আমাদের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত আলোচনা বাতিল করে দিয়েছে, তাদের সঙ্গে আর কথাই বলতে পারিনি।’
নাজমুল হাসানের আপত্তির খবরটির উৎস তাঁর পরিচালনা পর্ষদের দুই সদস্য। ২৩ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিসিবির সভায় উত্থাপিত ‘পজিশন পেপারে’র পক্ষে-বিপক্ষে ২০-৩ ভোটাভুটির পর ‘ওয়াক আউট’ করে এসে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য দেন আহমেদ সাজ্জাদুল আলম। বিপক্ষে ভোট দেওয়া শওকত আজিজের সাক্ষাৎকার ছাপা হয় পরের দিনের পত্রিকায়। একটি টিভি টক শোতে এ-বিষয়ক প্রশ্ন মিষ্টি হেসে এড়িয়ে যান বিপক্ষে অন্য ভোটটি দেওয়া তানজিল চৌধুরী।
এ নিয়ে যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন নাজমুল হাসান, তখন সম্মেলনকক্ষে উপস্থিত বিসিবির এক পরিচালক কটাক্ষ করে বলেন, ‘এখন থেকে পাঞ্জাবি পরে আসতে হবে নাকি?’ উল্লেখ্য, আহমেদ সাজ্জাদুল আলমের প্রিয় পোশাক পাঞ্জাবি। তাতে বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, জ্যেষ্ঠ এ ক্রিকেট সংগঠকের ‘বিসিবিতে আগামী দিনগুলো’ মোটেও স্বস্তিদায়ক হবে না। এদিকে কাল কটাক্ষ করা পরিচালকের মতো অনেকেই ভোটের খবর ফাঁস হওয়ার পর কাঁচুমাচু হয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছিলেন!
শওকত আজিজ ও তানজিল চৌধুরী অবশ্য ‘বেনিফিট অব ডাউট’ পেয়ে যাচ্ছেন। এ ইঙ্গিত রয়েছে বিসিবি সভাপতির একটি মন্তব্যে, ‘তানজিল আমাকে জানিয়েছে যে সে এ রকম কিছু বলেনি। পারটেক্সের আরেকজন যেন কে? হ্যাঁ, রাসেলও (শওকত) একই কথা বলেছে। সবচেয়ে ভালো হতো, তারা যদি এখানে থাকত।’ উল্লেখ্য, এ দুজনের মতো কাল উপস্থিত ছিলেন না আহমেদ সাজ্জাদুলও।
অবশ্য ২৩ জানুয়ারি বিসিবির সভায় যে একটি ভোটাভুটি হয়েছে, সেটি অস্বীকার করেননি নাজমুল হাসান, ‘ভোট হয়েছে। তবে বিষয়টি ছিল আমরা কি সেখানে (দুবাই) গিয়ে বাকি সাতটি দেশ কী অবস্থান নিয়েছে, সেটি বুঝে সিদ্ধান্ত নেব, নাকি বিপক্ষে অবস্থান নেব। যদি এমন হয় যে আমাদের ভোট ছাড়াই প্রস্তাবটি পাস হয়ে গেল, তখন আমরা কী করব? আমি ঠিকভাবে গুনেও দেখিনি কয়টি ভোট পড়ল। বেশির ভাগই হাত তুলে জানিয়েছিল আমার যেটা ভালো মনে হয়, সেটাই যেন করি। ওই তিনজন বলেছিলেন বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য।’
এদিকে বোর্ডের ভেতর এ নিয়েও রয়েছে ভিন্ন মত। ভোটাভুটির খবরটি ফাঁস হওয়ায় যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে, তা থেকে অন্তত ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে বোঝানোর ক্ষেত্রে পরোক্ষে উপকারই পেয়েছেন নাজমুল হাসান। সাধারণ মানুষের ‘সেন্টিমেন্ট’কে উপেক্ষা করার উপায় যে নেই বিসিবি প্রতিনিধির, সেটি বোঝার মতো সাধারণ বোধ থাকার কথা বিসিসিআই প্রধান এন শ্রীনিবাসনের!
মিডিয়াকে এভাবে দোষ দেওয়াটা ঠিক হয়নি এটা ভেবেই কিনা রাতেই আবার ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে অবস্থান শোধরাতে পাঠানো হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি। যাতে এই কঠিন সময়ে সর্বাত্মক সমর্থন দেওয়ার জন্য বোর্ড সভাপতির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে বাংলাদেশের সব গণমাধ্যমকে।