শূন্যতার সুযোগে সংসদে প্রধান বিরোধী দল। আবার সরকারেও আছে পূর্ণ মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী হয়ে। তারা গাছেরটাও খাচ্ছেন নিচেরটাও কুড়াচ্ছেন। মজাই তো! প্রাপ্তিযোগ এখানেই থেমে নেই। এবার একটি ফ্রি! টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীর পদও যাচ্ছে তাদের ঝুলিতে। এ দলটি এখন এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে তাদের মন রক্ষায় মরিয়া আওয়ামী লীগ সরকার।
ফ্রি অফারটি যাচ্ছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছোট ভাই পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের ভাগে। বড় ভাইয়ের কথা বিশ্বাস করে চুপ থাকায় শেষে ফাঁকিতে পড়েন তিনি। তার মান ভাঙাতে বড় ভাই নাকি শেখ হাসিনার সঙ্গে দর কষাকষি করছেন। এজন্যই এমপি হিসেবে শপথ নিতে দেরি করেন তিনি। পরে অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হওয়ার গৌরব অর্জন করে অকুণ্ঠ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এরশাদ। কিন্তু ছোট ভাইয়ের অভিমান ভাঙতে তিনি এখনো জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জিএম কাদেরের জন্য টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীর একটা পদ বাগাতে জোর লবিং চলছে। আওয়ামী লীগ নাকি আশ্বাসও দিয়েছে। তবে কোন মন্ত্রণালয় দেয়া হবে তা চূড়ান্ত হয়নি। আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই তিনি শপথ নিতে পারেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় পার্টির কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, শেখ হাসিনার ছেড়ে দেয়া রংপুর-৬ আসন থেকে পার্টির চেয়ারম্যানের ছোট ভাই জিএম কাদেরের নির্বাচন করার কথা ছিল। এশাদের কথায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছিলেন তিনি। তাই ভাইটিকে ওই আসন ছেড়ে দেয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে সনির্বন্ধ অনুরোধ করেন এরশাদ।
আসনটি নিয়ে নানা নাটক চললেও শেষ পর্যন্ত এরশাদের পক্ষে শিকে ছিঁড়েনি। আসনটি পেয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
পার্টি সূত্রে জানা গেছে, রংপুর পীরগঞ্জ আসনটি জাপাকে ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে নির্বাচনের পরে থেকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা চলছিল। আওয়ামী লীগ তা ছেড়ে দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে উভয়েই প্রার্থী ঘোষণার প্রস্তুতি নেয়। পরে কোনো এক কারণে সেখানে জাপা তাদের প্রার্থী না দেয়ার ঘোষণা দেয়। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন শিরীন শারমিন।
তবে সহজে ছাড়েনি জাপা। তলে তলে কয়েকটি দফা রফা হয়েছে। এসব সমঝোতার মধ্যে ছিল চেয়ারম্যানের ছোট ভাই জিএম কাদেরকে মন্ত্রী বানানো। এজন্য পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ নিজেই উদ্যোগী হয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
আর এই সফল আলোচনার ফলস্বরূপ টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হতে যাচ্ছেন জিএম কাদের। এর আগে তিনি মহাজোট সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রী এবং বিমান ও পর্যটন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
সব ঠিকঠাক থাকলেও আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তিনি শপথ নেবেন। ফলে দশম জাতীয় সংসদে তিনটি পূর্ণমন্ত্রী পাবে।
এদিকে নির্বাচনের আগে থেকেই জিএম কাদেরকে অঘোষিতভাবে নজরবন্দি করা হয়েছিল বলে দাবি করেছে জাপার একটি সূত্র। সূত্রটি জানায়, তার একটাই দোষ ছিল তা হলো, তিনি নির্বাচন বর্জনের জন্য এরশাদকে সমর্থন যুগিয়েছিলেন। এই কারণে নির্বাচনের আগে থেকেই তার বাসার সামনে গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা ছাড়াও ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা সার্বক্ষণিক নজরদারি করত। এ কারণে তিনি বাসা থেকে বের হতেও ইতস্তত করতেন।
এখন তাকে মন্ত্রিত্ব দিলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে সম্পর্কের সে ঘাটতি অনেকখানি পূরণ হবে বলে মনে করছেন পার্টির সিনিয়র নেতারা।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় দশম জাতীয় সংসদে ভালোই সুবিধা ভোগ করছে জাতীয় পার্টি। জিএম কাদেরকে মন্ত্রী করা ছাড়াও জাপাকে দেয়া হচ্ছে সংরক্ষিত আসনে পাঁচ মহিলা এমপি। এসব আসনে জিএম কাদেরের স্ত্রী ছাড়াও এরশাদের ধর্মকন্যা নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য মৌসুমীর নাম আসছে জোরেসোরে।
বিরোধী দলে থেকে এতোজন মন্ত্রিত্ব পাওয়ার বিষয়ে পার্টির একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা তো ভাই এখন আওয়ামী লীগ। তাই মন্ত্রিত্ব পাওয়াটাই স্বাভাবিক।’
এদিকে জিএম কাদের টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হচ্ছেন এমন খবর পার্টির অনেক নেতা স্বীকার করলেও মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার অস্বীকার করছেন।
তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি মন্ত্রিত্ব পাচ্ছেন কি না জানি না।’
এ ব্যাপারে জানতে জিএম কাদেরের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।