উপজেলা নির্বাচনের পর বিএনপির সম্মেলন

0
150
Print Friendly, PDF & Email

সব ব্যর্থতা, হতাশা আর অপ্রাপ্তি ভূলে এবার ঘুরে দাড়াতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এজন্য কেন্দ্র থেকে শুরু করে মহানগর, জেলাসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটিতে আমূল পরিবর্তন আনার পাশাপাশি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর দলের কাউন্সিল করার চিন্তা ভাবনা করছে দলটি।

একই সঙ্গে সারাদেশের নেতাকর্মীদের নির্বাচন পরবর্তী হতাশা দূর করে নতুন প্রাণ ফেরানোর চেষ্টায় সফরে বের হচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দলটি মনে করছে, অতি দ্রুত সরকারকে পরবর্তী নির্বাচনে বাধ্য করতে চলমান আন্দোলনে নতুন রুপ দিতে হবে। এজন্য দলকে ঢেলে সাজানো অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

জানতে চাইলে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুর ইসলাম আলমগীর রাইজিংবিডিকে বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক ভিতকে শক্তিশালী করার বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া। দলের সম্মেলন হয়েছে তিন বছর আগে। সূতরাং এখন নতুন সম্মেলন করতে হবে। তার প্রস্তুতির ব্যাপার রয়েছে।

তিনি বলেন, অঙ্গ সংগঠনগুলোরও মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। তাদেরও প্রস্তুতির ব্যাপার রয়েছে। সবমিলিয়ে সংগঠন গোছানো এবং আন্দোলন দুটোই একসঙ্গে চলবে। তবে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শিগগিরই কেন্দ্রীয় সম্মেলনের সম্ভাবনা আছে। এই মুহুর্তে নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। কারন এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে এবার ঢেলে সাজাবেন খালেদা জিয়া নিজেই। এর মধ্যে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল, যুবদল ও ছাত্রদলসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে সবার আগে। দলের নীতিনির্ধারকদেরও এ ব্যাপারে সম্মতি রয়েছে। নির্বাচনপূর্ববর্তী ও পরবর্তী নেতাদের আমলনামা ইতিমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের হাতে রয়েছে। উপজেলা নির্বাচনের পরেই এ কাজে হাত দেবেন তিনি। এক্ষেত্রে এবার আর ভূল করবেন না বিএনপি প্রধান। দলের প্রতি অনুগত আর ত্যাগীদের দিয়ে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছেন তিনি। এতে দলের অনেক হাই প্রোফাউল নেতাও নেতৃত্বের এ দৌড়ে ছিটকে পড়লে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

এদিকে দ্রুত আরেকটি নির্বাচন দাবিতে সারাদেশে নেতাকর্মীদের নতুন করে চাঙ্গা করতে ফের তৃণমূলে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ফ্রেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে তার টানা সফরসূচি শুরু হবে। দেশের বৃহত্তর জেলাগুলোতে জনসভা করবেন তিনি। সংগঠন গোছানো, মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করার পাশাপাশি সরকারবিরোধী আন্দোলনে নতুনমাত্রা যোগ করতেই বেগম জিয়া এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ২০ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে এ সফরের ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। এ সব সফরে অনুষ্ঠিত জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচনের আগে-পরে সংখ্যালঘু নির্যাতন, সহিংসতা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা সম্পর্কেও বক্তব্য দেবেন।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নন কিন্তু দলের নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে ভূমিকা রাখেন এমন একজন নেতা রাইজিংবিডিকে বলেন, হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি হঠাৎ করে স্থগিত করায় তৃণমূলের গতি কমে গেছে। সাংগঠনিকভাবেও বিভিন্ন স্থানে দ্বন্দ্ব চলছে। এসব বিবেচনায় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে নতুনভাবে চাঙ্গা করতেই বিএনপি চেয়ারপারসনের নেতৃত্বে এ সফর কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

এদিকে সারাদেশে সাংগঠনিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে মোট ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার জন্য ইতোমধ্যেই ৫৬ জন সিনিয়র নেতার সমন্বয়ে সাংগঠনিক টিম গঠন করে দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা কমিটির নেতৃত্বের দুর্বলতা খুঁজে বের করা, নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্বকোন্দল, গ্রুপিং, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিষয়ে লিখিত রিপোর্টসহ তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করার জন্য প্রতিটি টিমকে হাইকমান্ড থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ পেলেই তারা সারাদেশে পর্যবেক্ষনে বের হবেন। পরে পরিস্থিতি তুলে ধরে চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রস্তুত করবেন তারা।

জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. মাহবুবুর রহমান রাইজিংবিডিকে জানান, দলকে সাংগঠনিকভারে আরো শক্তিশালী করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া দ্রুতই শুরু হবে। সারাদেশে সাংগঠনিক দ্বন্দ্ব, সমন্বয়হীনতা সমাধান করতে দলের শীর্ষ নেতারা সফরে বের হবেন। দলের সাংগঠনিক প্রক্রিয়া আর আন্দোলন এক সঙ্গে চলবে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন