৩৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা। একটি মামলার শুনানি না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। করি প্রার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, অবসরের বয়স সীমা বাড়ানো হলেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে বিসিএসের এই লিখিত পরীক্ষা নিয়ে টালাহানা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
জট শুধু ৩৪তম বিসিএসে নয়, প্রভাব পড়েছে পরবর্তী বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দেয়ার ক্ষেত্রেও। লিখিত পরীক্ষা জটিলতায় ৩৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারছে না সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। অবশ্য শিগগির ৩৪তম বিসিএসসের লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা যাবে- এমন আশা কমিশনের।
গত বছরের ৮ জুলাই কোটার ভিত্তিতে ৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারির ফল দেয়া হয়, এতে ১২ হাজার ৩৩ জন উত্তীর্ণ হন।
এই ফলে মেধাবী অনেকেই বাদ পড়েছেন অভিযোগ তুলে ১০ জুলাই থেকে আন্দোলন শুরু করেন ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থীরা। কোটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ওই আন্দোলনে যোগ দেন। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে গত ১৪ জুলাই ৩৪তম বিসিএসের পুনর্মূল্যায়িত ফল দেয়া হয়। এতে রেকর্ড সংখ্যক ৪৬ হাজার ২৫০ জন উত্তীর্ণ হন।
আগের উত্তীর্ণ সবাইকে রেখেই পুনর্মূল্যায়িত ফল দেয়া হয়েছে বলে পিএসসি দাবি করলেও প্রথমবার উত্তীর্ণদের মধ্যে ২৮১জন আদিবাসী বাদ পড়েন।
এনিয়ে ‘বঞ্চিত’ আদিবাসীরা পিএসসি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখিত আবেদন করেন। বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেন তারা। এরপরেও তাদের উত্তীর্ণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় আগের ফলে উত্তীর্ণ ৫৯ জন আবেদনকারীর পক্ষে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া গত বছরের ২৮ জুলাই হাইকোর্টে রিট করেন।
প্রথম ফলে উত্তীর্ণ ২৮১ জনকে বাদ দিয়ে প্রকাশিত ৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পুনর্মূল্যায়িত ফল কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- সেই মর্মে রুল চাওয়া হয়।
এই রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদ সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৩১ জুলাই এক আদেশে প্রথম ফলে উত্তীর্ণ ৫৯ রিটকারীসহ ২৮১ জনকে বাদ দিয়ে প্রকাশিত ফল কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চায়।
এছাড়া পুনর্মূল্যায়িত ফলে আদিবাসী কোটায় আবেদনকারীদের বাদ দেয়ার কারণও জানতে চায় হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আদিবাসীদের মামলাটির শুনানি না হওয়ায় লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা যাচ্ছে না।
অবকাশকালীন ছুটির বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আদালতে আমাদের প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। তবে কবে নাগাদ শুনানি হতে পারে সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে না পারলেও নেছারউদ্দিন আশা করছেন শিগগিরই লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা যাবে।
পিএসসির কর্মকর্তারা জানান, আদিবাসীদের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর আদালতকে অবহিত করেছে কমিশন। কিন্তু আদালত থেকে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় গত ২৮ অক্টোবর আবারও চিঠি দেয়া হয়েছে।
এর আগে প্রিলিমিনারির ফল দেয়ার ৬৭দিন পরে ৩৩তম এবং ৭৯ দিন পর ৩২তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা নেয়া হয়। অন্য বিসিএসের লিখিত পরীক্ষাও প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশের দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই নেয়া হয়েছে।
এদিকে, চাকরিতে প্রেবেশের বয়স সীমা না বাড়ানোই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকরির বয়স ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হয়। তবে অধ্যাদেশ জারির কারণে তা ২০১১ সালের ২৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হচ্ছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর কোনো চিন্তা-ভাবনা আপাতত সরকারের নেই। তবে ৩৫তম বিসিএসের জন্য বিভিন্ন ক্যাডারে এক হাজার ১৪৯টি পদ অনুমোদন দেয়া হয়েছে, শিগগিরই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।