পুলিশে নিয়োগ ও ক্রয়যজ্ঞ

0
196
Print Friendly, PDF & Email

বাংলাদেশে প্রতি এক হাজার ৩০ জনের বিপরীতে রয়েছেন একজন পুলিশ সদস্য। অথচ জাপানে ২৫০, থাইল্যান্ডে ২৬০, মালয়েশিয়ায় ২৭০, পাকিস্তানে ৫৫০ আর ভারতে প্রতি ৭৩০ জনের জন্য একজন করে পুলিশ সদস্য আছেন। এসব বিবেচনায় পুলিশ বাহিনীতে আরো সদস্য নিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ক্যাডার ও নন-ক্যাডার মিলিয়ে ৫৬ হাজার নতুন সদস্য নিয়োগের প্রস্তাব তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। প্রস্তাবটি পেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
এ ছাড়া অপরাধ দমনে নতুন করে ৩৫৯টি আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) চেয়েছে পুলিশ বাহিনী। দুটি ছাড়া অন্য সব মেট্রোপলিটন এলাকায় এপিসি থাকলেও জেলা পর্যায়ে একটিও নেই। এবার ৬৪ জেলার জন্য ১৯৩টি এপিসি দেওয়ার জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব গেছে। মেট্রোপলিটন, হাইওয়ে, জেলা ও শিল্পাঞ্চল পুলিশ মিলিয়ে মোট ৩৫৯টি এপিসি চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১০টি চাওয়া হয়েছিল কিছুদিন আগে। আর নতুন করে গত সপ্তাহে ২৪৯টি চেয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সদস্য বাড়ানো বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের সভাপতিত্বে গত রবিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ অর্থ ও আইন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, পর্যায়ক্রমে এ নিয়োগ করা হবে। ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পুলিশের টার্গেট দুই লাখ ১০ হাজার সদস্য করা। সেই টার্গেট পূরণ হলে প্রতি ৭৬১ জনের জন্য দেশে একজন পুলিশ সদস্য পাওয়া যাবে। পুলিশ সদস্য দুই লাখ ১০ হাজার হলেও তা ভারত ও পাকিস্তানের সমপর্যায়ে হবে না।’
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. জালাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পুলিশ সব সময় জনগণকে বেশি সেবাদানের চেষ্টা করে। লোকবল বাড়লে, জনগণের দোরগোড়ায় গিয়ে আরো সেবা দেওয়ার সুযোগ মিলবে।’
বিভিন্ন দেশে পুলিশ কিভাবে কাজ করে, সে বিষয়টি নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে গবেষণা করা হচ্ছে। এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সারা দেশে পুলিশের সংখ্যা এক লাখ ৫৪ হাজার। মানুষকে পর্যাপ্ত সেবা দিতে শুধু রাজধানীতেই এক লাখ পুলিশ দরকার। অথচ আছেন মাত্র ২৬ হাজার ৫০০ সদস্য। এর মধ্যে রয়েছেন ট্রাফিক পুলিশ, থানার জনবল, পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) সদস্যরাও।
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, সংখ্যা দিয়ে নয়, দক্ষতা দিয়ে অপরাধ দমন করতে হবে পুলিশকে। এ বিষয়ে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ জনসংখ্যার ভিত্তিতে পুলিশের সংখ্যা বাড়িয়ে থাকে। তবে অপরাধ দমনে পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধিই যথেষ্ট নয়। নতুন নতুন অপরাধ হচ্ছে। এসব মোকাবিলায় দক্ষতা, নৈপুণ্য ও আধুনিক মানের পুলিশ বাহিনী তৈরি করতে হবে।’
সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছরে পুলিশ বাহিনীর জন্য ক্যাডার পদ সৃষ্টি করা হয়েছে ৬৬২টি। নন-ক্যাডার পদ করা হয়েছে ৩০ হাজার ৯০৬টি। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) পদকে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার আর অতিরিক্ত আইজিপির দুটি পদকে গ্রেড-১-এ উন্নীত করা হয়েছে। করা হয়েছে শিল্পাঞ্চল পুলিশ, খাগড়াছড়ি এপিবিএন বিশেষায়িত ট্রেনিং সেন্টার, রংপুর আরআরএফ, এসপিবিএন-১ ও ২, পৃথক তদন্ত ইউনিট পিবিআই, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌপুলিশ ও র‌্যাবের নতুন দুটি ব্যাটালিয়ন। নতুন থানা করা হয়েছে ২৫টি। পুলিশ তদন্তকেন্দ্র করা হয়েছে ৬৫টি।
৩৫৯টি এপিসি চাওয়া হয়েছে
পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত ডিআইজি (ট্রান্সপোর্ট) গোলাম কিবরিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নতুন করে আরো এপিসি চেয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে মেট্রোপলিটনগুলোর মধ্যে সিলেট ও বরিশালে এপিসি নেই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনে দুটো ও অন্য মেট্রোপলিটনগুলোতে একটি করে আছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এসব এপিসি শান্তি রক্ষা মিশনেও নিয়ে যাওয়া হয়।’
পুলিশ সূত্র জানায়, এরই মধ্যে পুলিশ বাহিনীতে যুক্ত হয়েছে ৩৯টি এপিসি। নতুন করে ২৪৯টি এপিসি চেয়ে গত সপ্তাহে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এর আগে ১১০টি চাওয়া হয়েছিল। নতুন প্রস্তাবনায় ওই ১১০টি এপিসির অনুমোদন পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এপিসি কেনার বিষয়গুলো প্রক্রিয়াধীন। এগুলো পেলে পুলিশ বাহিনীতে মোট এপিসির সংখ্যা দাঁড়াবে ৩৯৮টি।
পুলিশ সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অধীনে ১২টি, র‌্যাবে ২৪টি ও শিল্পাঞ্চল পুলিশের তিনটি এপিসি রয়েছে। ২৪৯টি এপিসি কিনতে খরচ পড়বে ৩৭৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

শেয়ার করুন