চলতি (২০১৩-১৪) অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থ সংগ্রহের অন্যতম উৎস সঞ্চয়পত্রের বিক্রির পরিমাণ কমেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বিক্রি কমেছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।
এ খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন শর্তের জালে ফেলে গ্রাহকের হাতে মুনাফা দেয়ার সময় ক্ষেত্র বিশেষে এই হার এক থেকে দুই শতাংশ কমে যায়। এছাড়া সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়ালেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিদ্যমান সুদের হারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার মতো যথেষ্ট নয়। ফলে বিক্রি কমে গেছে।
জাতীয় সঞ্চয়পত্র পরিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার ৪৫৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে একই সময়ে মোট বিক্রি হয় ১১ হাজার ৫৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অর্থ্যাৎ আগের অথ বছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় চলতি অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে ১ হাজার ৯৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
তবে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ বেড়েছে। অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ৩ হাজার ৮৫৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২২ গুণ। গত অর্থবছরের একই সময়ে সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ ছিল ১৭৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
উল্লেখ্য, সঞ্চয়পত্রের মোট বিক্রি থেকে আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে অর্থ পরিশোধ (সুদ ব্যতীত) বাদ দিয়ে নিট বা প্রকৃত বিনিয়োগ হিসাব করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সময়ে মোট বিক্রির ও মেয়াদপূর্তির আগেই সঞ্চয় ভেঙে ফেলার প্রবণতা কম হওয়ার কারণে নিট বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে।
এ সময়ে ৬ হাজার ৬০১ কোটি ২১ লাখ টাকা আসল এবং গ্রাহকদের কাছে থাকা সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৬০১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ কমের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলামেইলকে বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়াতে হলে এ খাতের ওপর বিদ্যমান কর সম্পূর্ণ উঠিয়ে দেয়া দরকার। সঞ্চয়কারীদের কাছ থেকে কর কেটে রাখা হচ্ছে যাদের অনেকের করযোগ্য আয়ই নেই। ফলে তারা চাইলেও এই কর ফেরত নিতে পারছে না। তাছাড়া সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের নতুন কোনো উদ্যোগও নেই।’
এদিকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগের বিপরীতে উল্টো চলতি অর্থবছরের শেষ ৬ মাসের মুদ্রানীতিতে সরকারের ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২২ দশমিক ৯০ শতাংশ করা হয়েছে।
বর্তমানে ৫ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, একই মেয়াদে পরিবার সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং তিন বছর মেয়াদি তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ সুদ রয়েছে। ব্যাংকে এখন মেয়াদি আমানতের সুদহার এর চাইতে কম। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে উৎসে কর কাটা হয় ৫ শতাংশ।
তবে এক সময় পেনশনার সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর ছিল না। অবসরে যাওয়া চাকরিজীবীদের দাবি, পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা করমুক্ত রাখা হোক।