উপজেলা নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় আ.লীগ

0
128
Print Friendly, PDF & Email

একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী, দলের অভ্যন্তরে বিভক্তি, দলাদলি ও বিএনপির অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তে এবারের উপজেলা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে শঙ্কায় আওয়ামী লীগ। দলটির কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই মিলেছে।

আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, দলের মধ্যে বিভক্তি কমাতে ও উপজেলা নির্বাচনে জয় সুনিশ্চিত করতে সাতটি বিভাগের জন্য সাতটি সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা আগামীকাল থেকে বিভিন্ন জেলা সফর শুরু করবেন। উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত চিঠি দলটির স্থানীয় সাংগঠনিক কমিটিকে দেওয়া হচ্ছে। মূলত জয় নিয়ে শঙ্কা থাকায়, এ ধরনের নানামুখী তত্পরতা শুরু করেছে দলটির হাইকমান্ড।

দলটির শীর্ষ কয়েকজন নেতার মতে, কাগজে-কলমে এটি নির্দলীয় নির্বাচন হলেও প্রার্থী চূড়ান্ত হচ্ছে দলীয় বিবেচনায়। তবে এটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে স্থানীয় নেতৃত্বের ওপর। সদ্যসমাপ্ত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় কোথাও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়নি তাঁদের। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত শঙ্কায় ফেলেছে তাঁদের। আওয়ামী লীগের কাছে এ নির্বাচন এখন মর্যাদার লড়াই হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনের এখন নির্দলীয় চরিত্র নেই। জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় দলীয় প্রভাবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে বিজয় সুনিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয়ভাবে আমাদের তত্পরতা থাকবে। বিজয়ের বিকল্প নেই। কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আমাদের খুলনা প্রতিনিধি জানান, জেলার দীঘলিয়া উপজেলায় গাজী আসগর হোসেন ও তৌহিদ মিয়া নামের দুজন এবং কয়রা উপজেলায় জি এম মহসিন রেজা, মোস্তফা রফিকুল ইসলাম, কেরামত আলী, এস এম শফিকুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার পাঁড় নামের আওয়ামী লীগের পাঁচজন দলীয় প্রার্থী রয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা বলেন, একই উপজেলায় এত প্রার্থী থাকলে কখনো জয় আসবে না। এজন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেহেরপুর সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী গোলাম রসুলের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মারুফ আহমেদ। আওয়ামী লীগের মধ্যে সাংগঠনিক শক্তি প্রবল না হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। জানতে চাইলে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ওই নির্বাচনে প্রার্থী গোলাম রসুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবাই আমার সঙ্গে আছে। আল্লাহ সাথে থাকলে আমার পাস কেউ ঠেকাতে পারবে না।’
সিলেট জেলার ছয়টি উপজেলার চারটিতেই আওয়ামী লীগের দুজন করে প্রার্থী রয়েছেন। মাত্র দুটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী। এখানেও জয় নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া পঞ্চগড়, সিরাজগঞ্জসহ প্রায় ৪০টি জেলায় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন।
আমাদের সরিষাবাড়ি প্রতিনিধি জানান, জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী ফরিদুল কবির তালুকদার। তিনি জামালপুর জেলা বিএনপির সভাপতি। তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা গিয়াসউদ্দিন পাঠান। তিনি সরিষাবাড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। জানতে চাইলে গিয়াসউদ্দিন পাঠান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কে জিতবে, কে হারবে সেটা ভোটের দিন দেখা যাবে। আওয়ামী লীগ সব সময় ভোটারদের নিয়ে রাজনীতি করে।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শঙ্কার কিছু নেই। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। ভালো প্রার্থী দেখে জনগণ ভোট দেবে। আমরা এক শ ভাগ জয়েরও আশা করি না।’
সাত বিভাগে সাত কমিটি
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই ও চূড়ান্ত করতে সাতটি বিভাগে দলটির সভাপতিমণ্ডলী ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের প্রধান ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সমন্বয়ক করে সাতটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

কমিটির রংপুর বিভাগের প্রধান হলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সমন্বয়ক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, রাজশাহী বিভাগের প্রধান দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, সমন্বয়ক আবু সাঈদ আল মাহমুদ, ঢাকা বিভাগের প্রধান হলেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সমন্বয়ক হলেন আহমদ হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগের প্রধান হলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন, সমন্বয়ক বীর বাহাদুর উ শৈ সিং, বরিশাল বিভাগের প্রধান হলেন দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সমন্বয়ক হলেন আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খুলনা বিভাগের প্রধান হলেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, সমন্বয়ক বি এম মোজাম্মেল হক, সিলেট বিভাগের প্রধান হলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের সমন্বয়ক মিজবাহ উদ্দিন সিরাজ।
কাল থেকে সাংগঠনিক সফর শুরু
উপজেলা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে সাংগঠনিক সফর শুরু করবে আওয়ামী লীগ। সফরে সংগঠনের সব স্তরের মতানৈক্য ও ভুল-বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হবে। নির্বাচনে যেন একজনের বেশি প্রার্থী না থাকে, সে বিষয়টিও নজর দেওয়া হবে ওই সফরে।

শেয়ার করুন