চমকের অপেক্ষায় পদ্মা সেতু

0
112
Print Friendly, PDF & Email

বিগত পাঁচ বছরে মহাজোট সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ছিল পদ্মা সেতু করতে না পারা। সেই ব্যর্থতা ঢাকতে এবার শেখ হাসিনার নতুন সরকার নবোদ্যমে তোড়জোড় শুরু করেছে। একটি বিশেষ চমকের মাধ্যমে সেই তোড়জোড়ের আনুষ্ঠানিকতা দেখাতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

সূত্রমতে, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রাণের দাবি হচ্ছে পদ্মা সেতু। সরকারের জন্য প্রেস্টিজ ইস্যু এই প্রকল্প বাস্তবায়নে আবারও ব্যর্থ হলে দেশের মানুষ ক্ষমা করবেন না- সেটা ভালো করেই বোঝে সরকার। এজন্য চলতি মেয়াদেই তা বাস্তবায়ন করে নিজেদের পক্ষে জনমত আরো পোক্ত করতে চাইছে শেখ হাসিনার সরকার।

সেতু বিভাগের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে এমন আভাস দিয়ে বলেছেন, পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করার আগেই জাতির জন্য বিরাট এক চমক অপেক্ষা করছে। সরকারের চমকের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে- এই প্রকল্পের সঙ্গে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে সম্পৃক্ত করা। এজন্য আগামী জুনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করা হবে মহা ধুমধামে। তার আগে দেশের সর্বস্তরের মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়াতে অবলম্বন করা হচ্ছে কিছু অভিনব কৌশলের।

এসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে- দাতাদের মুখের দিকে চেয়ে না থেকে ‘এসো নিজেরা করি’ স্লোগান নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। এই স্লোগান বাস্তবায়ন করতে নানামুখী তৎপরতা চালাবে সরকার। চাওয়া হতে পারে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের কাছে এক দিনের বেতন। সেই সঙ্গে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এক দিনের টিফিনের টাকা তুলে দেবে সরকারের হাতে।

এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের চার্জ আরোপ করে কৃষক, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও যার যার সাধ্যানুযায়ী আর্থিক সহযোগিতা জমা নেওয়া হবে সরকারি কোষাগারে। এমনকি গৃহবধূদের কাছ থেকে ‘মুষ্টির চাল’ সংগ্রহের জন্যও থাকবে এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। এতে কত টাকা উঠবে তা সরকারের বিবেচ্য নয়, সরকারের ভাবনা হলো এভাবে ১৬ কোটি মানুষকে এই আবেগের সঙ্গে একাত্ম করা।

‘এসো নিজেরা করি’ স্লোগানের পাশাপাশি দেশের মানুষের দৃষ্টিকে এক জায়গায় নিয়ে আসার জন্য সরকারের তরফ থেকে আরো কিছু চটকদার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ‘এগিয়ে চলো বাংলাদেশ’ নামে একাধিক কনসার্টের আয়োজন করা।

পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালেও থাকবে জমকালো কনসার্ট। এর আগে বিভাগীয় পর্যায়ের কনসার্টগুলোতে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা কীভাবে বাড়ানো যায়, সে জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দেশের একটি স্বনামধন্য ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে।

ওই কোম্পানির এক কর্মকর্তা নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সরকারের পরিকল্পনামাফিক কাজ এগিয়ে চলেছে। আমরা চেষ্টা করছি, সারা দেশের মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করতে। এ জন্য যা যা করণীয় তা আমরা করে যাব।’

সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে যে পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর। সেতু নির্মাণ থেকে শুরু করে এর রক্ষণাবেক্ষণ সবকিছু ছেড়ে দেওয়া হবে সেনাবাহিনীর হাতে। কারণ, এ ধরনের কাজে সেনাবাহিনী অতীতে যে ভূমিকা রেখেছে, তা খুবই প্রশংসিত। তা ছাড়া সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এ ধরনের বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তা বিতর্কিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আবার সেনাবাহিনীর হাতে থাকলে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ প্রশ্ন তোলার সাহস পাবে না বলে মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারক মহল। তার চেয়েও বড় কথা হলো সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজের ত্রুটি হবে না বলে সরকারসহ দেশবাসীরও আস্থা রয়েছে।

ওই সূত্রটি আরো জানায়, পদ্মা সেতু নির্মাণকে ঘিরে বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আরো একটি বিশ্ব রেকর্ড করতে চায়। নাম লেখাতে চায় গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে। কারণ, এর মধ্য দিয়ে একটি দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে একটি আবেগের সঙ্গে যুক্ত করা যাবে, যা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল।

এ প্রসঙ্গে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা চাই দেশের ১৬ কোটি মানুষের চাওয়া-পাওয়া এই পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে যাতে কোনো রকম ত্রুটি না হয়। একই সঙ্গে আমরা চাই, দেশবাসী এই বিশাল কর্মযজ্ঞে শামিল হোক। তাদের অংশগ্রহণ থাকুক ঐতিহাসিক এই স্থাপনার সঙ্গে। সে জন্য নানাভাবে আমরা দেশবাসীকে এর সঙ্গে যুক্ত করার কথা ভাবছি।’

সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ এবং তত্ত্বাবধান সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার যা কিছুই করুক না কেন, দেশবাসীর কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে চাই। সেই দিক থেকে পদ্মা সেতুতে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা বা অংশগ্রহণ সেই গ্রহণযোগ্যতার প্রতিফলন ঘটাবে বলে আমার বিশ্বাস।’

শেয়ার করুন