জাসদের রব থেকে রওশন, সংসদে তোতা পাখি

0
101
Print Friendly, PDF & Email

গত ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত দশম জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ। এবারের সংসদের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে কার্যত কোনো বিরোধী দল নেই।

সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হয়েছেন জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ। তাকে বলা হচ্ছে, ‘গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা।’ গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে ‘তোতা পাখির’ মতো বুলি আওড়াবেন তিনি সংসদে, সমালোচকরা এমনটাও বলছেন।

যেমন বুলি সংসদে আওড়েছিলেন জাসদের নেতা আ স ম আবদুর রব। ১৯৮৮ সালের ১৫ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, পতিত স্বৈরাচারী এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে চতুর্থ সংসদ। রব হয়েছিলেন ওই সংসদের ‘গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা’। অ্যাখ্যা পেয়েছিলেন ‘স্বৈরশাসক এরশাদের সহযোগি’ হিসেবে। ২৫ বছর পর জাতীয় সংসদ আবার পেল সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদেরই স্ত্রী রওশনকে ‘গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা’ হিসেবে।

রওশন এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা, এখনো পর্যন্ত সেটা কাগজের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে তার যে তেমন ভূমিকা থাকবে না, এর প্রমাণ গত কয়েক দিনে তিনি দিয়েছেন। বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হওয়ার ১৮ দিন পার হলেও জাতীয় বা দলীয় কোনো ইস্যুতে তিনি বিবৃতি পর্যন্ত দেননি। সরকারের বিরুদ্ধে যায়, এমন কথাও বলেননি।

১৯৮৮ সালে আয়োজিত এরশাদের নির্বাচন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল বর্জন করেছিল। তখন আ স ম রবের জাসদের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল ‘সম্মিলিত বিরোধী দল’। ইসলামি ফ্রন্ট, ফ্রিডম পার্টি ও জাসদ (শাজাহান সিরাজ) ওই নির্বাচনে অংশ নেয়। সব মিলিয়ে বিরোধী দল পেয়েছিল ৪৭টি আসন। বাকি ২৫৩ আসন পায় এরশাদের জাতীয় পার্টি।

তখন আ স ম রব হন ‘গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা’। ১৯৮৮ সালের ১৫ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে ওই সংসদ স্থায়ী হয়েছিল দুই বছর সাত মাস। আওয়ামী লীগ, বিএনপির নেতৃত্বে দুর্বার আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পতন হয় স্বৈরশাসক এরশাদের।

সংসদ সচিবালয়ের তথ্য বলছে, ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদেও কোনো বিরোধী দল ছিল না।

‘৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপি ২৭৮টি আসন পেয়েছিল। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছিলেন দশটিতে, ন্যাশন্যাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স পেয়েছিল একটি আসন। বাকি এগারোটি আসনের ফল গেজেটে প্রকাশ করা হয়নি। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ বেশির ভাগ দলই ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল। চার বৈঠকের এ সংসদ স্থায়ী হয়েছিল ১২ কার্যদিবস বা দেড় মাস।
গত সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি দশম সংসদে নেই। ১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর এটাই প্রথম সংসদ, যেখানে বিএনপি নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করায় বিএনপি এবার নির্বাচন বর্জন করে।

দশম সংসদে ২৯৭টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২৩১টি। এছাড়া জাতীয় পার্টি ৩৪, ওয়ার্কার্স পার্টি ৬, জাসদ ৫, জাতীয় পার্টি জেপি ২, তরিকত ফেডারেশন ২, বিএনএফ ১ আর স্বতন্ত্র ১৬টি আসন পেয়েছে।

গত ২৪ জানুয়ারি টাঙ্গাইল-৮ আসনের সংসদ সদস্য শওকত মোমেন শাহজাহানের মৃত্যুতে একটি আসন শূন্য হয়েছে। আর যশোর-১ ও ২ আসনের ফল এখনো গেজেট আকারে প্রকাশ হয়নি। কারণ, বেসরকারিভাবে নির্বাচিত দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

শেয়ার করুন