হজযাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা এবং মানবপাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগে সরকার ১৯৩টি হজ এজেন্সিকে বিচারের মুখোমুখি করছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে ও্ এজেন্সিগুলোর মালিকদের শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছে। ফেব্রুয়ারির ৪, ৫ এবং ৬ তারিখ এই বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করে এজেন্সিগুলোর মালিকদের নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে হাজিরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারিতে এই শুনানি কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরে অভিযুক্ত এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, প্রতারণা ও মানবপাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ধর্ম মন্ত্রণালয় ১৯৬টি হজ এজেন্সি চিহ্নিত করেছে। এই ১৯৬টি এজেন্সির মধ্যে তিনটিকে বিচারের মুখোমুখি করে তাদের শাস্তিও দেয়া হয়েছে। শাস্তি হিসেবে এই তিন এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল এবং তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
এর আগে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী হাবিবুল আওয়াল জানিয়েছেন, গত বছর সাতটি এজেন্সির অবহেলা এবং প্রতারণার কারণে ১৬২ জন হজযাত্রী সৌদি আরব যেতে পারেননি। এদের মধ্যে ১৪৩ জন যাত্রী সৌদি হজ এয়ার সার্ভিসেস থেকে এবং ১৫ জন রফিক ট্রাভেলস থেকে হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধিত হয়েছিলেন।
সচিব হাবিবুল আওয়াল আরো জানিয়েছেন, অভ্যন্তরীণ তদন্তে অভিযুক্ত এই সাত এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিতও হয়েছে। সাতটি এজেন্সির মধ্যে দুটির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি এজেন্সি দুটির ৬০ লাখ টাকা করে জামানত অর্থও ক্রোক করা হয়েছে। এছাড়া, সৌদি হজ এয়ার সার্ভিসেসকে ৫০ লাখ টাকা এবং রফিক ট্রাভেলস্কে ১৫ লাখ টাকার জরিমানাও করেছে মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় সূত্রে গেছে, সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, গত বছর বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে হজের উদ্দেশ্যে যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে ১৭৬ জন দেশে ফিরে আসেননি। আর বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে দাবি করা হয়েছে, হজের জন্য সৌদি আরবে যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে গত বছর ফেরত আসেননি ৪৯৮ জন।
প্রতারণা এবং মানবপাচার ছাড়াও অবহেলা এবং অব্যবস্থাপনার অভিযোগও আছে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানগুলো হজযাত্রীদের পর্যাপ্ত বাসস্থান, পরিবহণব্যবস্থা এবং উন্নতমানের খাদ্য সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তার কোনোটাই পূরণ করেনি।
বাংলাদেশ হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশনের (হ্যাব) যুগ্ম মহাসচিব ফরিদ আহমেদ বলেন, “অন্যান্য বছরের চাইতে গত বছর প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত হজ এজেন্সির সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল। কিন্তু এই সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে আমরা অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।”
তিনি জানিয়েছেন, গত বছর মোট ৬২৮টি হজ এজেন্সির মধ্যে অভিযোগ রয়েছে ১৯৬টি এজেন্সির বিরুদ্ধে। আর এর আগের বছর মাত্র ৩৫৫টি হজ এজেন্সির মধ্যে অভিযুক্ত ছিল ২৮৯টি।
প্রসঙ্গত, গত বছর হজের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গিয়েছিলেন মোট ৮৭ হাজার ৮৫৪ জন যাত্রী। সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন।