টিকার গাড়ি কর্তাদের কবজায়

0
145
Print Friendly, PDF & Email

 স্বাস্থ্যসচিবসহ চার কর্মকর্তার কবজায় চারটি  তিনটি দেওয়া হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে  একটি ‘নিখোঁজ’

রাজধানীতে বাংলাদেশ সচিবালয়ের ভেতরে ক্লিনিক ভবনের সামনে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত নতুন সাদা একটি প্রাডো (ঢাকা মেট্রো-ঘ: ১৩-৮০৯৩) গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। ওই গাড়িতে করে সচিবালয়ে এসেছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক খন্দকার মো. সিফায়েত উল্লাহ।
এই গাড়িটি কেনা হয়েছিল উপকূলের জেলাগুলোতে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) বাস্তবায়ন ও তদারকির কাজে ব্যবহারের জন্য। কেনার পর থেকে গাড়িটি মহাপরিচালকই ব্যবহার করছেন।
সচিবালয়ের ৩ নম্বর ভবনের পেছনে আরও একটি প্রাডো (ঢাকা মেট্রো-ঘ: ১৩-৮০২১) গাড়ি ওই সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এটি ব্যবহার করেন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার পরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর মোহাম্মদ মুসা। এই গাড়িটিও টিকাদান কর্মসূচির জন্য কেনা হয়।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই দুই শীর্ষ কর্মকর্তা আরও একটি করে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলের ১৩ জেলায় টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য দেড় মাস আগে এ রকম আটটি প্রাডো গাড়ি কেনা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো চলছে ঢাকার রাস্তায়। গাড়িগুলোর চারটি চালাচ্ছেন চার আমলা। তিনটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে। একটির হদিস জানেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

কাগজপত্রে দেখা যায়, প্রতিটি গাড়ির দাম দেখানো হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। জার্মানির প্রতিষ্ঠান কেএফডব্লিউর আর্থিক সহায়তায় এই গাড়ি কেনা হয়।
টিকাদান কর্মসূচির গাড়ি আপনি কেন ব্যবহার করছেন—এই প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সিফায়েত উল্লাহ বলেন, ‘টিকার গাড়ি স্বাস্থ্যে ব্যবহার করায় কোনো ক্ষতি নাই।’
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার অধীনে। গাড়িগুলো কেনা হয়েছে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির জন্য। কর্মসূচির অর্থে কেনা একটি প্রাডো গাড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার পরিচালক আবু জাফর মোহাম্মদ মুসা আগেই ব্যবহার করতেন। নতুন একটিসহ এখন তিনি দুটি গাড়ি ব্যবহার করছেন। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাড়িটি এখনো টিকার কাজে ব্যবহার করা না হলেও ভবিষ্যতে ব্যবহার করা হবে।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাকি ছয়টি গাড়িও সিডর এলাকায় ব্যবহূত হচ্ছে না। একটি ব্যবহার করছেন স্বাস্থ্যসচিব এম এম নিয়াজউদ্দিন (ঢাকা মেট্রো ঘ: ১৩-৮০২৩)। নতুন প্রাডো গাড়ি ব্যবহার সম্পর্কে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গাড়িটিতে চড়ে তিনি মাঝেমধ্যে উপকূলের জেলাগুলোত যান।
অন্য একটি গাড়ি ব্যবহার করছেন অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম লস্কর। মন্ত্রণালয়ে তিনি সৎ ও বিনয়ী আমলা হিসেবে পরিচিত। ‘আপনি কেন সিডর এলাকায় ব্যবহারের জন্য কেনা গাড়ি ঢাকায় ব্যবহার করছেন?’ উত্তরে শফিকুল ইসলাম লস্কর বলেন, ‘আমি আগে ব্যবহার করা সরকারি গাড়িটি ফেরত দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘যে প্রকল্পের আওতায় এই গাড়ি কেনা, সে প্রকল্প গত জুনে শেষ হয়ে গেছে। গাড়ি না কিনলে টাকা কোনো কাজে লাগত না।’ তবে কর্মসূচিসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই এলাকায় কাজ এখনো শেষ হয়নি।
কর্মসূচি থেকে তিনটি গাড়ি দেওয়া হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঢাকা কার্যালয়কে। গাড়ি পেয়ে কর্মসূচি ব্যবস্থাপক শফিকুর রহমানকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মেডিকেল কর্মকর্তা জয়ন্ত লিয়ানাগে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সূত্র জানিয়েছে, গাড়ি তিনটি তারা ব্যবহার করছে না। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সিডর এলাকায় গাড়ি পাঠাতে তারা সাহস পায়নি। এখন পাঠানোর কথা ভাবছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সর্বশেষ গাড়িটি সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির পক্ষ থেকে নতুন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে দেওয়া হয়। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী গাড়িটি নেননি।
ইপিআইয়ের স্টোর ব্যবস্থাপক হেলাল তরফদার বলেন, ১৩ জানুয়ারি গাড়িটি মন্ত্রীর কথা বলে টিকাদান কর্মসূচি থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত গাড়িটি ফেরত আসেনি। গাড়িটি কোথায় আছে, তা তিনি জানেন না।

শেয়ার করুন