বিএনপিহীন দশম সংসদের যাত্রা সন্ধ্যায়

0
170
Print Friendly, PDF & Email

দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে বুধবার সন্ধ্যা ছয়টায়। এই সংসদে অন্যবারের চেয়ে বেশ কিছু নতুনত্ব থাকবে। দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো প্রধান বিরোধী দলের আসনে জাতীয় পার্টি। প্রথমবারের মতো বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। বরাবর সরকারি দল ও বিরোধী দল পরস্পরবিরোধী অবস্থানে থাকলেও এবারই প্রথম প্রধান বিরোধীদল সরকারেরই অংশ।

১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরুর পর এই প্রথম বিএনপি সংসদের বাইরে থাকছে। এর আগে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ভোটারবিহীন নির্বাচনে গঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে প্রধানতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ছিল না। একতরফা নির্বাচনে তখন সরকার গঠন করেছিল বিএনপি। সংসদে মাত্র একটি আসন নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা হয়েছিলেন ফ্রিডম পার্টির কর্নেল অব. আবদুর রশীদ।

আইনি ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার বিচারে নির্বাচন বৈধ হলেও প্রধান বিরোধী জোটের বর্জন, ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন, ব্যাপক সহিংসতায় নগণ্য ভোটারের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। এ ধরনের একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত দশম জাতীয় সংসদে এবার সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল। একই সঙ্গে দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে বিরল নজির স্থাপন হচ্ছে সরকারের অংশ হিসেবে বিরোধী দলের অবস্থানের মধ্য দিয়ে। সরকারে অংশ নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কেমন হবে, তা নিয়ে সবার মধ্যে ব্যাপক কৌতূহলও রয়েছে। যদিও গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের সভায় বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ নির্বাচিত হওয়ার পর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেছেন, সরকারে অংশগ্রহণ থাকলেও বিরোধী দল হিসেবে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনায় ছাড় দেবে না জাতীয় পার্টি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের সংসদের সঙ্গে মিল পাওয়া যায় ১৯৮৮-এর চতুর্থ সংসদের। তখন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বেশির ভাগ দল নির্বাচন বর্জন করেছিল। আ স ম রবের জাসদের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল সম্মিলিত বিরোধী দল। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ফ্রিডম পার্টি ও জাসদ (শাজাহান সিরাজ) ওই নির্বাচনে অংশ নেয়। সব মিলিয়ে বিরোধী দল পেয়েছিল ৪৭টি আসন। বাকি ২৫৩ আসন পায় এরশাদের জাতীয় পার্টি।

এছাড়া এবারের সংসদের কার্যপ্রণালীতেও কিছু পরিবর্তন আসছে। কোনো সংসদ সদস্য মারা গেলে কার্যদিবস মূলতুবি রাখার রেওয়াজ থাকলেও এবারের সংসদে তা রাখা হচ্ছেনা। রাষ্ট্রপতির ভাষণের আগে করা হচ্ছে বিউগল বাজানোর ব্যবস্থা। নিরাপত্তার দিক থেকেও আসছে কড়াকড়ি। সংসদ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন থেকে একটির বেশ মোবাইল ফোন নিয়ে সংসদে প্রবেশ করতে পারবেন না।

সামনের সারির আসনগুলো নিয়ে সরকারি দল ও বিরোধীদলের মধ্যে দরকষাকষি হয়। এ নিয়ে আগে বেশ কযেকবার অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। এবার সামনের সারিতে বিরোধী দল কয়টি আসন পাবে, তা আলোচনা করে নির্ধারণ করা হচ্ছে।

নবম সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিনের সভাপতিত্বে বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় দশম সংসদের অধিবেশন শুরু হবে। দিনের কার্যসূচি অনুযায়ী প্রথমেই স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হবে। এরপর নতুন স্পিকারের সভাপতিত্বে পর্যায়ক্রমে সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন, শোক প্রস্তাব গ্রহণ এবং রেওয়াজ অনুযায়ী প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভাষণ দেবেন।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে, নতুন স্পিকার নির্বাচনের পরপরই অধিবেশনে কিছু সময়ের জন্য বিরতি দেয়া হবে। এই বিরতির সময়েই নতুন স্পিকারকে রাষ্ট্রপতি শপথ পড়াবেন। সংসদ ভবনের সপ্তম তলায় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে নতুন স্পিকারকে শপথ পড়ানো হবে।

প্রসঙ্গত, দশম সংসদে ২৯৭টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২৩১টি। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি ৩৪, ওয়ার্কার্স পার্টি ৬, জাসদ ৫, জাতীয় পার্টি জেপি ২, তরীকত ফেডারেশন ২, বিএনএফ ১ এবং স্বতন্ত্র ১৬টি আসন পেয়েছে। ২৪ জানুয়ারি টাঙ্গাইল-৮ আসনের সংসদ সদস্য শওকত মোমেন শাহজাহানের মৃত্যুতে একটি আসন শূন্য হয়েছে। আর যশোর-১ ও ২ আসনের ফল এখনো গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়নি। কারণ, বেসরকারিভাবে নির্বাচিত দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

শেয়ার করুন