দেশ ছেড়ে ‘পালালেন’ সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী

0
111
Print Friendly, PDF & Email

সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান এমপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করতে যখন মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), ঠিক সেই সময় অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন তাঁর স্ত্রী প্রীতি রহমান। গত সোমবার দুপুরে থাই এয়ারওয়েজের একটি বিমানে দেশ ছাড়েন তিনি। স্বামীর পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধেও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। দুদকের হাত থেকে বাঁচতেই তিনি ‘পালিয়েছেন’ বলে জানিয়েছে তাঁর একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র। এ ছাড়া দশম সংসদের প্রথম অধিবেশনে যোগদানের পরপরই মাহবুবুর রহমান নিজেও দেশ ছাড়তে পারেন বলে ওই সূত্র জানিয়েছে। তবে মাহবুবুর রহমানের এপিএস আবুল কাশেম দাবি করেছেন, ছোট মেয়ের লেখাপড়াসংক্রান্ত প্রয়োজনেই তাঁর ম্যাডাম (প্রীতি রহমান) অস্ট্রেলিয়া গেছেন, ফিরবেন আগামী সপ্তাহে।

এদিকে দুদক সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সরকারদলীয় এমপি ও সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, গত পাঁচ বছরে তিনি ২০ একর থেকে দুই হাজার ৮৬৫ একর জমির মালিক হয়েছেন। অর্থাৎ নবম সংসদের পাঁচ বছরে তাঁর শুধু জমিই বেড়েছে ১৪৩ দশমিক ২৫ গুণ। এসব জমির সিংহভাগই রয়েছে পর্যটন এলাকা কুয়াকাটা ও এর আশাপাশে। বর্তমান বাজার দরে যার মূল্য আনুমানিক প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। মাহবুবুর রহমানের সম্পদ বৃদ্ধির সঙ্গে তাঁর আয়ের উৎসের মিল নেই। এ ছাড়া তাঁর স্ত্রী প্রীতি রহমানের মালিকানাধীন গঙ্গামতী এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কলাপাড়া এলজিইডি, কলাপাড়া পৌরসভা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কয়েক শ কোটি টাকার দরপত্র ভাগিয়ে নিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কাজ না করে টাকা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।

মাহবুবুর রহমানের সম্পদ বিবরণী এবং দুর্নীতির খতিয়ান অনুসন্ধান করতে দুদকের উপপরিচালক খায়রুল হুদাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদিকে প্রীতি রহমানের মালিকানাধীন গঙ্গামতী এন্টারপ্রাইজ ও তাঁর ব্যবসায়িক পার্টনার বিপুল হালদারের মালিকানাধীন আন্ধারমানিক ট্রেডার্স গত পাঁচ বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে যেসব কাজের দরপত্র নিয়েছে ওই সব কাগজপত্রসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিউদ্দিনকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় তলব করা হয়েছে। যেখানে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়া পটুয়াখালী সদর পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস থেকেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করছে দুদক। বিষয়টি টের পেয়েই প্রীতি রহমান তড়িঘড়ি করে গোপনে দেশ ছেড়েছেন বলে দাবি করেছে তাঁর ঘনিষ্ঠ ওই সূত্র।

প্রীতি রহমানের দেশ ছাড়ার বিষয়ে দুদকের উপপরিচালক খায়রুল হুদা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ রকম একটি খবর শুনেছি। এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া কারো পালিয়ে থাকার সুযোগ নেই। অভিযুক্ত কেউ যদি পালিয়ে থাকতে চায়, তাহলে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে আনা হবে।’

মাহবুবুর রহমানও পালিয়ে যেতে পারেন কি না_এ প্রশ্নের জবাবে দুদকের এই উপপরিচালক বলেন, ‘আমরা তাঁর সম্পর্কে খোঁজখবর রাখছি। এমনটি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে তাঁকে গ্রেপ্তারও করা হতে পারে।’

দুদক সূত্র জানায়, অভিযোগ রয়েছে মাহবুবুর রহমানের সম্পদ বিবরণীতে স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি গোপন করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি ও তাঁর স্ত্রী অবৈধ সম্পদ গড়ে লন্ডন ও অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ি বানিয়েছেন।

এদিকে দুদকের ঝামেলা এড়াতে আজ বুধবার দশম সংসদের প্রথম অধিবেশনে যোগদানের পরপরই মাহবুবুর রহমান সুযোগ বুঝে দেশ ছেড়ে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাতে পারেন বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ওই সূত্র। এ বিষয়ে জানতে গতকাল মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মোতালেব তালুকদার বলেন, ‘মাহবুব সাহেবের বিষয়গুলো আমাদের লজ্জা দেয়। তাঁর জন্য আমরা কোথাও মাথা তুলে কথা বলতে পারি না। বঙ্গবন্ধুর দল হিসেবে কলাপাড়ায় আওয়ামী লীগের একটা ঐতিহ্য আছে। কিন্তু তাঁর কারণে তা ম্লান হতে চলেছে। আসলে দুর্নীতির এ অপবাদ থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই।’

শেয়ার করুন