আওয়ামী লীগের টিকিট নিয়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসন থেকে এবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আবু রেজা মুহাম্মদ নিজামউদ্দিন নদভী। কিন্তু এমপি হলে কী হবে, তাকে সব সময়ই চলাফেরা করতে হচ্ছে পুলিশ পাহারায়। নির্বাচিত অন্য এমপিদের চেয়ে নিরাপত্তাহীনতার সঙ্গত কারণও আছে। কারণটা হচ্ছে, যদিও আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত হয়েছেন নদভী, কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের। ছিলেন গোলাম আযমের শিষ্য। নির্বাচনের আগে নিজ এলাকায় গণসংযোগের জন্য নদভী যেতে পেরেছেন মাত্র একবার। আর নিজ ভোটকেন্দ্রে গিয়েছেন নির্বাচনের দিন। দুই দিনই ছিলেন কড়া পুলিশ প্রহরায়। তবে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে আর যেতে পারেননি। এমনকি নিজ এলাকায় তার সমর্থক সনাতন সম্প্রদায় একাধিকবার আক্রান্ত হলেও তাদের পাশে দাঁড়াননি তিনি। এমপি হওয়ার পর নগরীর কোনো জায়গায়ই পুলিশ প্রটোকল ছাড়া যাচ্ছেন না। জামায়াতের মুখপাত্র হয়ে এক সময় যিনি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো দাবড়ে বেড়িয়েছেন, মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণের নামে আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের হয়ে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করেছেন, এমপি হলেও আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না সেই নদভীকে।
নির্বাচনের আগে নগরীর মুসলিম হলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের এক কর্মী-সমাবেশে বক্তব্য শেষে নদভীর মুখে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রকৃত নেতা-কর্মীরা। তবে নির্বাচিত হয়ে শপথ নেওয়ার পর থেকে তার আশপাশে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের তুলনায় জামায়াত ঘরানার লোকজনকেই বেশি দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনের আগে-পরে সহিংস ঘটনায় আহত কোনো আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকেও তিনি দেখতে যাননি এখনো। এদিকে বদলে গেছেন জামায়াতের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কর্মপরিষদ সদস্য মোমিনুল হক চৌধুরীর মেয়ে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার চট্টগ্রাম কলেজের সাবেক সভাপতি রিজিয়া রেজা। স্বামী আবু রেজা মুহাম্মদ নিজামউদ্দিন নদভীর পক্ষে নির্বাচনে সব ধরনের গণসংযোগ করেছেন তিনি। স্বামীর এমপি মনোনয়ন প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে রাতারাতি বদলে যাওয়া সাবেক এই ছাত্রী সংস্থার নেত্রীর মুখে আওয়ামী লীগের গুণগান শুনে এলাকার অনেকেই হতবাক। নির্বাচনের দিন রিজিয়া রেজা গুটিকয় প্রতিবেশীকে নিয়ে মাইক্রোবাসে করে যেসব কেন্দ্রে গিয়েছেন, তাদের নিরাপত্তা রক্ষায়ও পেছন পেছন পুলিশের গাড়ি লেগে ছিল ছায়ার মতো। কিন্তু নির্বাচনী সহিংসতায় আহত নিজ এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী কিংবা নির্যাতিত সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশে না দাঁড়িয়ে নিজে পুলিশ প্রহরায় থাকাতে আওয়ামী লীগের এই এমপির বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে জোর সমালোচনা। সমালোচনা আছে তার স্ত্রীকে নিয়েও। সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের আগে এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলা রিজিয়া রেজাও এখন আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। সাতকানিয়ার পদুয়া ইউনিয়নের এক আওয়ামী লীগ নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যিনি কোনো দিন আওয়ামী লীগ করেননি, তিনি কীভাবে দলের নেতা-কর্মীদের মর্ম বুঝবেন! আহত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাশে না দাঁড়ানোই তার কাছে স্বাভাবিক।’
পুলিশ প্রহরা সম্পর্কে জানতে চাইলে আবু রেজা নদভী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি নির্বাচনের অনেক দিন আগে থেকেই দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে নিজের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের সহযোগিতা নিতাম। এমপি হওয়ার পর শুধু এলাকায় যাওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশি প্রটোকল নিয়ে আসছি। আওয়ামী লীগের দলীয় বিভাজনের কারণে কেউ কেউ অপপ্রচার চালিয়ে আহতদের পাশে না দাঁড়ানোর কথাটা বলে থাকবেন। কিন্তু দিন দুয়েক আগে সাতকানিয়ার নলুয়ায় সংঘটিত হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় যেতে পারিনি আমার ছোট বোনের আকস্মিক মৃত্যুর কারণে।
এ ছাড়া প্রতিজন আহত নেতা-কর্মীকে আমি নিজ তহবিল থেকে ৫-১০ হাজার করে টাকা আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছি এবং এলাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য বলে রেখেছি।’ নির্বাচনের পর নিজ এলাকায় না যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি সত্য নয়। কিছুদিন আগেও উপজেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেছি। তবে যে হারে এলাকায় যাওয়ার কথা, নানা কারণে তা হয়ে ওঠেনি।’ এমপি নদভীর নিজ এলাকায় না যাওয়ার পেছনেও রয়েছে নানামুখী গুঞ্জন। কেউ বলছেন, জামায়াতের ভয়েই তিনি এলাকায় যাচ্ছেন না। আবার কেউ বলছেন, গোলাম আযমের শিষ্য ও জামায়াত নেতার জামাতা হওয়ায় এবং দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত আওয়ামী লীগ নেতাদের বঞ্চিত করে এমপি পদ বাগিয়ে নেওয়ায় ভয়ে তিনি এলাকায় যাচ্ছেন না।