দেশের অন্যতম বৃহত্ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সিলেট নগরীর মদন মোহন কলেজে সরস্বতী পূজার চাঁদা না দেয়ায় অধ্যক্ষের কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে ছাত্রলীগ। এর প্রতিবাদে শিক্ষকরা গত দুদিন ধরে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন। কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ পূজা কমিটি ছাড়া কারো কাছে টাকা দিতে অস্বীকৃতি ও শিক্ষকদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করার প্রতিবাদ জানালে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি অরুণ দেবনাথ সাগরের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়। এ সময় অধ্যক্ষকে মারতে উদ্যত হয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। গত রবিবার বিকালে এ ঘটনা ঘটে।
এর প্রতিবাদে মঙ্গলবারও কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা। সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেন শিক্ষকরা। উচ্চ মাধ্যমিক থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী এই কলেজে লেখাপড়া করে। কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কলেজের ছাত্রছাত্রীদের বেতনের অর্ধেক টাকা ছাত্রনেতারা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী নিজে কয়েকবার ‘বদমাশ ছাত্রনেতারা লুটপাটকারী’ বলে মন্তব্য করেন। কিন্তু তারপরও এসব ছাত্রনেতারা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অপকর্ম।
সূত্র জানায়, সরস্বতী পূজা উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গত ১৯ জানুয়ারি সভা ডাকা হয়। ছাত্রনেতাদের ভয়ে সভায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা যায়নি। এমনকি ওই সভায় আদু ভাই খ্যাত ছাত্রনেতা অরুণ দেবনাথ সাগরসহ ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মীও যায়নি। হঠাত্ করে গত রবিবার কলেজ বন্ধ থাকার পরও ছাত্রলীগ সভাপতি অরুণ দেবনাথ সাগর অধ্যক্ষ ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহকে ফোন দিয়ে কলেজে আসতে বলে। তিনি কলেজে এলে সরস্বতী পূজার জন্য নির্ধারিত বরাদ্দ প্রাপ্ত টাকা দাবি করে। প্রতিবছর পূজার জন্য কলেজের বাজেট থাকে দেড় লাখ টাকা। অধ্যক্ষ কমিটি ছাড়া কাউকে বিল করতে পারবেন না জানালে অরুণ দেবনাথ ও তার গ্রুপের কর্মীরা অধ্যক্ষ কার্যালয় ও একাডেমিক ভবনে হামলা চালায়। অধ্যক্ষের কক্ষের টেবিল, সোফা ও গ্লাসগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা বলে, আপনারা ক্ষমতা দেখান। কিসের কমিটি? কমিটি তো আমরা চালাই। আমাদের কাছে টাকা দেন। তা না হলে ভালো হবে না। কলেজের শিক্ষক জয়ন্তকে আহ্বায়ক বানিয়েছি। আমরা কমিটি করেছি। টাকা দেন। এই বলে তারা কক্ষে হামলা চালায়। পরে অধ্যক্ষ তার চেম্বারের ভিতরের একটি রুমে গিয়ে আশ্রয় নেন। খবর পেয়ে এসএমপির একটি পুলিশের দল গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
এদিকে কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে হামলার ঘটনায় গত সোমবার রাত ৮টার দিকে গভর্নিং বডির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় উপস্থিত ছিলেন কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও বিভাগীয় কমিশনার এএনএম জিয়াউল আলম, কলেজ গভর্নিং বডির সদস্য যথাক্রমে সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদউদ্দিন আহমদ, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিজিত চৌধুরী, অ্যাডভোকেট এমাদউল্লাহ, শহীদুল ইসলাম শাহীন, হিমাংশু লাল রায়, গোলাম রাব্বানী চৌধুরী, কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল প্রফেসর রফিকুল ইসলাম, প্রফেসর আহমদ হোসেন, দাতা সদস্য সুকেন্দ্র মোহন, অ্যাডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য ও সদস্য আবদুল হামিদ প্রমুখ। সভায় ছাত্রনামধারী এসব বহিরাগতদের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভায় বলা হয়, অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করে ভর্তি বাণিজ্য বন্ধ করা হয়েছে। হামলাকারী দুষ্কৃৃতকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিভিন্ন সময় সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করে। এরা আসলে কারা? এদের খোঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এদিকে গতকাল বিকালে অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে মিছিল সমাবেশ করেছে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল। তারা অধ্যক্ষ ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনে তার অপসারণ দাবি করে। এ সময় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি অরুণ দেবনাথ সাগর ও কলেজ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি হেলাল বক্তব্য রাখেন।
কোতোয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান জানিয়েছেন, এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। প্রসঙ্গত কলেজের ছাত্রছাত্রীদের বেতনের অর্ধেক টাকা ছাত্রনেতারা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী নিজে কয়েকবার ‘বদমাশ ছাত্রনেতারা লুটপাটকারী’ বলে মন্তব্য করেন।