ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনাকে ঢাকা থেকে ‘সরিয়ে’ নিতে দেশটির কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, ‘মজিনা কূটনৈতিক শিষ্টাচার না মেনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছেন। তাকে ঢাকা থেকে সরিয়ে নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
অভিযোগে আরো বলা হয়, ‘একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত জামায়াতের নেতাদেরকে চলমান বিচার প্রক্রিয়া আর দলটিকে নিষিদ্ধ করা থেকে রক্ষার পক্ষে মজিনার অবস্থান লজ্জাজনক।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাছে লিখিত আকারে ড্যান মজিনার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ জানানো হয়েছে। সেগুলো জানিয়েছেন দেশের খ্যাতিমান কয়েক লেখক, বুদ্ধিজীবী আর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী কয়েক বাংলাদেশি।
মজিনাকে এদেশ থেকে বহিষ্কারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, গণজাগরণ মঞ্চও দাবি জানিয়েছে। সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের চেয়ারম্যান, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার প্রকাশ্যেও এ দাবি জানান। গত ১৬ জানুয়ারি ঢাকায় আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ দাবি জানান।
মজিনার বিরুদ্ধে অভিযোগকারীদের মতে, ‘জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ না করতে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করতে সরকারকে বিভিন্ন সময় চাপ দিয়েছেন ড্যান মজিনা। ভারত জামায়াতের সহিংস রাজনীতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে টানা অভিযোগ করে এলেও মজিনা বরাবরই হোয়াইট হাউসকে বলে আসছিলেন, জামায়াত গণতান্ত্রিক একটি রাজনৈতিক দল, নরমপন্থী মুসলিম দল।’
অনেকের মতে, ড্যান মজিনা বিএনপি, জামায়াতের প্রতি ‘সহানুভূতিশীল রাষ্ট্রদূত’ হিসেবে পরিচিত। বিএনপি, জামায়াতকে ক্ষমতায় যেতে ভারতীয় সমর্থন লাভের জন্যও তিনি চেষ্টা করে বিতর্কের জন্ম দেন। ভারতীয় কয়েকটি গণমাধ্যম তার সম্পর্কে এমন সমালোচনাও করে যে, ‘মজিনা ভারতে এসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যের মতো দলটিকে ক্ষমতায় বসানোর লক্ষ্যে কাজ করেছেন।’
কূটনীতিতে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, মজিনা অত্যন্ত বিতর্কিত কূটনীতিবিদ৷ তিনি একসময় নয়াদিল্লিতে মার্কিন দূতাবাসে দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন৷ ওই সময় কাশ্মিরে অহেতুক নাক গলিয়ে সাউথ ব্লকের বিরাগভজন হন৷ বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার নেপথ্যেও তার ভূমিকা আছে। শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়ার মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সমঝোতা না হওয়ার পেছনে তার ভূমিকা আছে বলেও অনেকের দাবি।
তবে জামায়াত ইস্যুতে ড্যান মজিনার ‘আগের মনোভাব কিছুটা পাল্টেছে’ বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। সম্প্রতি তিনি জামায়াতকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ করারও ‘আহবান’ জানিয়েছেন।
কলকাতার প্রভাবশালী গণমাধ্যম দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা ধারণা করছে, ‘বাংলাদেশে জামায়াতের তীব্র সহিংসতা দেখে দলটি সম্পর্কে মার্কিন প্রশাসনের অবস্থান কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে।’ জামায়াত সম্পর্কে শেখ হাসিনার সরকার বিদেশিদের বোঝাতে অনেকটা সফল হয়েছে বলেও পত্রিকাটি মনে করে। ‘হিংসা দমন আর বিশ্বকে পাশে টানাই চ্যালেঞ্জ হাসিনার’ শিরোনামে গত ২০ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জানুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন ড্যান মজিনা। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি সেখানে থাকবেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকবেন।
ঢাকায় ফেরার পথে মজিনা যুক্তরাষ্ট্র প্যাসিফিক কমান্ডের সঙ্গে পরামর্শের জন্য হাওয়াই যাবেন। সেখানে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা ও সংশ্লিষ্টতা আর আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে বলে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।