আইসিসিতে দ্বি-স্তর বিশিষ্ট টেস্ট ক্রিকেটের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে এবার ক্রিকেট প্রেমীদের পাশে দাড়িয়েছে বিএনপি।
একই সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কষ্টার্জিত টেস্ট স্ট্যাটাস রক্ষায় সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বিসিবিসহ সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আহবান জানিয়েছে দলটি।
বাংলাদেশ ক্রিকেট প্রেমী জনগণের অনুভূতির প্রতি সহানুভূতি ও একাত্মতা প্রকাশ করে মঙ্গলবার বিকেলে দেয়া এক বিবৃতিতে বিএনপি’র এ অবস্থানের কথা জানিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গনমাধ্যমে দেয়া ওই বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, বাংলাদেশ ক্রিকেটের কষ্টার্জিত টেস্ট ষ্ট্যাটাস হুমকির মুখে ফেলতে সম্প্রতি ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে আইসিসিতে দ্বি-স্তর বিশিষ্ট টেস্ট ক্রিকেটের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এই প্রস্তাব পাশ হলে, বাংলাদেশ এবং জিম্বাবুয়েকে আয়ারল্যান্ড,আফগানিস্থান,নেদারল্যান্ড এবং কেনিয়ার সাথে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ খেলে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।’
মির্জা আলমগীর বলেন, ‘এই তুঘলকি প্রস্তাবের কঠোর বিরোধিতা করে ইতিমধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ,শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্থানের ক্রিকেট বোর্ড তাদের অবস্থান ঘোষণা করেছে। অথচ পরিতাপের বিষয় এই যে, বাংলাদেশের ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ বিসিবি গত ২৩ জানুয়ারি তাদের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ভারতীয় বোর্ডের প্রস্তাবের পক্ষে থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। যদিও বিসিবি সভাপতি বলেছিলেন আইসিসি পুনর্গঠনে দেয়া ভারতীয় প্রস্তাবে অবস্থা বুঝেই ব্যবস্থা নেবে বিসিবি।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বুকে বাংলাদেশীদের গর্বের যে, অল্প দুই একটি অর্জন রয়েছে তার মধ্যে ক্রিকেট একটি। বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের একজন খেলোয়াড় দীর্ঘদিন যাবৎ টেস্ট ক্রিকেটে শীর্ষ অলরাউন্ডারের পদ দখল করে রেখে দেশের মুখ উজ্জল করেছিলেন। অতি সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের মতো দলও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাথে টেস্ট ম্যাচ সিরিজে পরাজিত হয়েছে।’
‘দেশের এই ক্রান্তিকালে জাতির ঐক্য প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ক্রিকেট দল একটি গুরুতপূর্ণ শক্তি। এই শক্তিকে ধ্বংস করা বাংলাদেশের আত্মমর্যাদা ও গৌরবের প্রতি আঘাত বলে আমরা মনে করি।’
বিবৃতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘ইতিমধ্যে দেশের ক্রিকেট প্রেমিক সাধারণ মানুষ আইসিসিতে ওঠা প্রস্তাব এবং বিসিবির নেয়া সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বিক্ষুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন স্থানে শান্তিপ–র্ণ মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করছে। বিক্ষুদ্ধ ক্রিকেট প্রেমিকদের এই আন্দোলনকে বন্ধ করার জন্য ২৫ জানুয়ারি বিসিবি‘র একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, আইসিসি সভায় বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্তের বিপক্ষে তারা অবস্থান নেবেন।’
‘এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বিসিবি’র সভাতেও তারা বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েই ভারতের প্রস্তাবকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘বিসিবি টেস্ট মর্যাদার চেয়ে আর্থিক লাভকে বাংলাদেশের জন্য অধিক স্বার্থ সংশিষ্ট বলে মনে করছে, যা সঠিক ও যুক্তি সংগত নয়।’
তিনি বলেন, ‘বিসিবি’র বোর্ড সভায় নেয়া লিখিত সিদ্ধান্ত যা আইসিসিতে উপস্থাপন করা হবে, তা দেশের জনসাধারণের কাছে উপস্থাপন না করে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দেয়ায় সমগ্র বাংলাদেশী ক্রিকেট প্রেমিদের মধ্যে তীব্র হতাশা, ক্ষোভ ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।’
বিবৃতিতে ২টি দাবি করা হয় । এগুলো হচ্ছে
১. আসন্ন আইসিসি সভায় বিসিবি‘র পক্ষ থেকে সরাসরি ভারত, অষ্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের প্রস্তাবিত দ্বি-স্তর বিশিষ্ট টেস্ট ম্যাচের নামে বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে পুনরায় বোর্ডের সভা ডেকে এ-বিষয়ে লিখিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং সেই সিদ্ধান্তের বিষয় জনসম্মুক্ষে প্রকাশের পাশাপাশি বিসিবির ওয়েব সাইটেও প্রকাশ করতে হবে।
২. বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস রক্ষায় প্রয়োজনে বিসিবিকে ঐ তিন দেশের প্রস্তাবের বিরোধী দেশগুলোকে সাথে নিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকা দেশগুলোর সমর্থন পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।