হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলেছেন, নীতিভ্রষ্ট রাজনীতির হীন কূটকৌশল হিসেবে সুপরিকল্পিতভাবে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করা হচ্ছে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি চরমভাবে নষ্ট করা হচ্ছে। যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে অভ্যস্ত তারাই নিজেরা এ কাজ ঘটিয়ে হেফাজতসহ অন্যদের ওপর দোষ চাপাতে নির্লজ্জভাবে প্রচারমাধ্যমকে ব্যবহার করছে। শান্তিপ্রিয় তৌহিদি জনতার ওপর সহিংসতা সৃষ্টি ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের দায় চাপানোর চেষ্টা দুরভিসন্ধিমূলক এবং স্বার্থান্বেষী মহলের হীন চক্রান্ত মাত্র। তারা বলেন, বিরাজমান ভয়াবহ রাজনৈতিক সঙ্কট দূর না হওয়ায় সংখ্যালঘু নির্যাতন ও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। দ্রুত আলোচনা করে সমঝোতার মাধ্যমে রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের জন্য হেফাজতের পক্ষে আগেও দাবি জানানো হয়েছে এখনো দাবি জানানো হচ্ছে। একই সাথে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা তদন্তে নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। হেফাজত ঢাকা মহানগর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল হেফাজত নেতারা এ কথা বলেন। রাজধানীর বারিধারা মাদরাসায় হেফাজত ঢাকা মহানগরীর অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ব্যাপারে নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত অমুসলিমদের নিরাপত্তা বিধান ও তাদের ক্ষতিপূরণ দান, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ব্যাপারে জাতিকে সজাগ থাকা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলারও দাবি জানানো হয়।
হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুরা যেমন হামলার শিকার হচ্ছে তেমনি বাদ যাচ্ছে না সংখ্যাগরিষ্ঠরাও। সদস্য সমাপ্ত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু নির্যাতনের চিত্র যেমন পত্রিকায় এসেছে, তেমনি আওয়ামী লীগ এমপির গাড়িবহরে কথিত হামলাকারীদের লাশ পাওয়ার সংবাদও একের পর এক পত্রপত্রিকায় আসছে। তিনি বলেন, উদোরপিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর মতো এসব সহিংসতার দোষ চাপানো হচ্ছে নিরপরাধীদের ঘাড়ে। মূলত এসব কাজ ইসলামবিদ্বেষী আন্তর্জাতিক চক্রের গভীর চক্রান্তের অংশ। তারা ইসলামকে দাবিয়ে রাখার জন্য ইসলাম ও মুসলমানদের গায়ে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদের তকমা লাগিয়ে তৌহিদি জনতাকে অপরাধী সাব্যস্ত করার হীন কাজে লিপ্ত, যাতে মুসলমানদের হেনস্থা করা এবং তাদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়নের স্টিম রোলার চালানোর পথ সুগম করা যায়।
লিখিত বক্তব্যে আল্লামা কাসেমী আরো বলেন, সন্ত্রাস যেমন নিন্দনীয় তেমনি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসও চরমভাবে নিন্দনীয়। স্বচ্ছ বিচারপ্রক্রিয়া ছাড়া কারো জান-মাল, ইজ্জত-আবরুর ওপর হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাষ্ট্রেরও নেই। তিনি বলেন, ৫ মে হেফাজতের সমাবেশে নিরস্ত্র মুসল্লিদের ওপর তাণ্ডবলীলার বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য হেফাজতের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে বরং উল্টো পরিকল্পিতভাবে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী এবং সরকারের তল্পীবাহী নাস্তিক বুদ্ধিজীবীরা এ সহিংসতার দায় সরলপ্রাণ নিরীহ মুসলমানের ওপর চাপাচ্ছে। বিভিন্ন মিডিয়া নির্লজ্জভাবে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। নামে বেনামে তৌহিদি জনতার নামে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে এবং এর সূত্র ধরে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতিনিয়ত হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি অবিলম্বে সব হয়রানি বন্ধ ও সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে গ্রেফতারকৃত নেতাদের মুক্তি দাবি করেন। তিনি আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি, ইসলামিক টিভি, দিগন্ত টিভি, আমার দেশ, ইনকিলাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারেরও দাবি জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে আল্লামা কাসেমী বলেন, হেফাজতে ইসলাম অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও দেশের নাগরিক হিসেবে বিরাজমান ভয়াবহ রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে সমঝোতার ব্যাপারে বরাবরই আহ্বান জানিয়ে আসছে। তিনি বলেন, আজকে যে সহিংসতা সন্ত্রাস এবং সংখ্যালগুদের ওপর নির্যাতন এটি রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন না হওয়ার কারণেই। একটি নির্বাচন যে হয়েছে সেটি কেমন হয়েছে সবাই জানে। তাই দ্রুত রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের জন্য হেফাজত আহ্বান জানায়।
বিভিন্ন প্রশ্নের আরো জবাব দেন ঢাকা মহানগরীর সদস্য সচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ঢাকা মহানগরীর যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মাহফুজুল হক, যুগ্ম সদস্য সচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা শফিক উদ্দিন, মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা জসিম উদ্দিন, প্রচার সেলের সদস্য মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ আরমান, মুফতি আবদুল মালেক, খালেদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ।