আলু চাষে সর্বস্বান্ত কৃষক

0
209
Print Friendly, PDF & Email

দেশের বিভিন্ন স্থানে আলুর ফলন ভালো হয়েছে। তবে কৃষকের মুখে হাসি নেই। কারণ, বাজারে দাম নেই। প্রতি কেজি আলু দুই টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলু আবাদ করে প্রতি বিঘায় সাড়ে চার ও একরে ৩৮ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকের। দাম কম হওয়ায় হিমাগারে আলু রাখতে সাহস পাচ্ছেন না তাঁরা। আলু চাষে তাঁরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন।
দাম কম, হিমাগারের ভাড়া বেশি: একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে চলতি মৌসুমে তিন বিঘা জমিতে আগাম আলু আবাদ করেছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মাটিগাড়া গ্রামের কৃষক গোবিন্দ বর্মণ। ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারদর অস্বাভাবিক কম থাকায় লোকসানের আশঙ্কায় জমি থেকে সেই আলু তুলছেন না তিনি। এখন ঠাকুরগাঁওয়ের বাজারে প্রতি কেজি নতুন আলু দেড় থেকে দুই টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর হিমাগারে ভাড়া বেশি হওয়ায় আলু সংরক্ষণের কথাও ভাবতে পারছেন না গোবিন্দ। এ সমস্যা গোবিন্দের মতো জেলার কয়েক হাজার কৃষকের। হিমাগারের মালিকেরা জানান, ৮৪ কেজি ওজনের এক বস্তা আলু সংরক্ষণ করতে ৩৬০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। এতে প্রতি কেজি আলুর জন্য সাড়ে চার টাকা খরচ হয়।
স্থানীয় আলুচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক একর জমিতে গড়ে ১০০ বস্তা (বস্তায় ৮৪ কেজি) আলুর ফলন হয়েছে। প্রতি একরে উৎপাদন খরচ পড়েছে কমপক্ষে ৫৫ হাজার টাকা (প্রতি কেজি উৎপাদন খরচ সাড়ে ছয় টাকা)। গ্রানুলা জাতের আলু কেজিপ্রতি দুই টাকা দরে ১০০ বস্তায় ১৬ হাজার ৮০০ টাকা, কার্ডিনাল জাতের আলু প্রতি কেজি দেড় টাকা দরে ২৯ হাজার ৪০০ টাকা। এতে একরপ্রতি গড়ে লোকসান হচ্ছে ৩৮ হাজার টাকা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বেলায়েত হোসেন জানান, নির্বাচনের পর হিমাগারে সংরক্ষণ করা পুরোনো আলু ও চলতি মৌসুমের আগাম আলু একসঙ্গে বাজারে চলে আসায় আলুর দাম কমে গেছে।
আলু চাষে সর্বস্বান্ত: দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আলুচাষিরা চলতি মৌসুমে আলু আবাদ করে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। প্রতিবছর আলুর মৌসুম শুরুর সময় বাজারদর মণপ্রতি (৪০ কেজি) ৬০০ টাকা থাকে। কিন্তু বর্তমানে ১৮০ টাকা দরে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে বিঘাপ্রতি প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। কৃষকদের অভিযোগ, মৌসুম শুরুর সময় দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, টানা অবরোধ ও হরতালই কৃষকের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এক হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুর রশীদ জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবার কৃষকেরা ধরা খেয়েছেন। তবে আলুর ব্যবহার বাড়ানো না গেলে কৃষকেরা এই ফসল চাষে উৎসাহ হারাবেন।
আমদানি বেশি, দাম কম: বগুড়ার মহাস্থান, শিবগঞ্জ, কিচক, মোকামতলা, দুপচাঁচিয়ার ধাপের হাট, আদমদীঘি ও সান্তাহারের বড় হাটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা কমে যাওয়ায় প্রচুর নতুন আলুর আমদানি হয়েছে। পর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে হঠাৎ করেই বাজার পড়ে গেছে।
কৃষকেরা জানান, গত বছর হিমাগারে বিপুল পরিমাণ আলু মজুত করেন তাঁরা। বাজারে দাম না পাওয়ায় হিমাগারের ভাড়া ও পরিবহন খরচ পরিশোধের পর লোকসানে পড়তে হয়েছে তাঁদের। তাই এ বছর জমি থেকে সরাসরি আলু বিক্রি করতেই বেশি আগ্রহী তাঁরা। এতে বাজারে চাহিদার তুলনায় আলুর সরবরাহ বেড়েছে, কমেছে দাম। শিবগঞ্জের আলু ব্যবসায়ী শাহীন ভান্ডারী জানান, গত বছর এই সময়ে প্রতি মণ পাকরি আলু ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা, কার্ডিনাল ৭০০ থেকে ৮০০ ও সাদা আলু ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেখানে জমিতে বসেই পাকরি আলু মণপ্রতি ২৪০ টাকা, কার্ডিনাল ২০০ এবং সাদা আলু ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকেরা লোকসানের মুখে পড়েছেন।

শেয়ার করুন