যেভাবে পাচার হয় ঢাকা মেডিকেলের ঔষধ

0
114
Print Friendly, PDF & Email

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে অব্যবস্থাপনার যেন শেষ নেই। ঢামেক হাসপাতালে লোকবল সঙ্কটের নামে চিকিৎকরা অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করে ফেলেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই অনিয়মকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রকে খেসারত দিতে হচ্ছে। শনিবার সকালে হাসপাতালের বিপুল পরিমান ঔষধসহ তিন ব্যক্তিকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আটক এই তিনজন হাসপাতালে কেউ না হলেও এরা নিয়মিতই ডাক্তারদের ‘বিশেষ কর্মচারি’ হিসাবে কাজ করতো। ডাক্তাররা ছোট খাটো কাজ এদের দিয়েই করাতেন। এর বিনিময়ে তারা ডাক্তারদের মাধ্যমে হাসপাতাল থেকে নানা সুযোগ সুবিধা নিতো। এদের বড় একটি চক্র গড়ে উঠেছে হাসপাতালে। ডাক্তারদের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র লেখিয়ে নিয়ে ঔষধের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল। এটি সবার চোখের সামনেই হচ্ছিল।
ডাক্তারদের কাছ থেকে ঔষধের স্লিপ নিয়ে হাসপাতালের ডিসপেনসরি থেকে ওষুধ তুলে বাইরে বিক্রি করে দিতো এরা। বড় একটি চক্র একাজটি নিয়মিতই করে যাচ্ছিল। হাসপাতালের ঔষধ বাইরে চলে যাওয়ার এটি একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন হাসপাতালের কর্মচারিরাই। ডাক্তারদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে গড়ে ওঠা এই চক্রটি সম্পর্কে সবাই অবহিত হলেও কেউ এতে গা-করছে না। ভাবখানা এমন যে ‘সরকারি মাল দারিয়া মে ঢাল’।
শনিবার সকালে সরকারি ওষুধ বাইরে পাচারের সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তিন ব্যক্তিকে হাতেনাতে আটক করে কর্তৃপক্ষ। আটক ব্যক্তিরা হলেন- মো. জসিম, মো. রফিক ও সাগর। তাঁদের মধ্যে রফিক হাসপাতালের একজন ‘বিশেষ কর্মচারী’।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, শনিবার সকাল নয়টার দিকে হাসপাতালের ভেতরে ব্যাগ হাতে এক ব্যক্তির চলাফেরা সন্দেহজনক হওয়ায় কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা জসিম নামের ওই সন্দেহভাজন ব্যক্তির ব্যাগ তল্লাশি করেন। তাঁর ব্যাগে হাসপাতালের বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধ পাওয়া যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে জসিম দাবি করেন, হাসপাতালের ‘বিশেষ কর্মচারী’ রফিক তাঁকে ওষুধগুলো দিয়েছেন বাইরে নিয়ে বিক্রির জন্য। জসিমের তথ্যের ভিত্তিতে রফিককে আটক করা হয়। পরে তাঁদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে সাগর নামের আরেকজনকে আটক করা হয়। নানা কায়দায় হাসপাতালের ঔষধ বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
এক বছর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিসপেনসারি থেকে ওষুধ চুরির ঘটনায় হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর এক স্টাফের জড়িত থাকার বিষয়টি উৎঘাটিত হয় এবং ওই ব্যক্তি সরকারি কর্মচারী হওয়ায় হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান তাকে পুলিশে না দিয়ে তখন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও এ নিয়ে পরে আর কিছু হয়েছে বলে জানা যায়নি।
দালালি, রন্ধনশালা থেকে হাসপাতালের খাবার চুরি, ওষুধ চুরিসহ রোগীদের অন্য হাসপাতালে ভাগিয়ে নেয়ার অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালের আনসার ও পুলিশ সদস্যরা কয়েকজনকে আটক করে পুলিশে দিয়ে মামলা করলেও তার ফলোআপ আর করা হয় না, ফলে অনিয়ম ও চুরির ঘটনা নিয়মিতই ঘটছে।
কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে এসে পুনরায় তারা ঐসব কর্মকা-ে আবারও সম্পৃক্ত হয়।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মুশফিকুর রহমান জানান, আমরা ১৯৭৪ সালের লোকবল দিয়ে কাজ করছি। প্রতিদিন হাসপাতালে প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার রোগীর সমাগম হয়।
ওই লোকবল দিয়ে হাসপাতালের কাজ করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমরা লোকবলের বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ও অধিদপ্তরকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এজন্য দালাল, চোরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। 

শেয়ার করুন