সরকারবিরোধী লড়াইয়ের অংশ হিসাবেই বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে

0
114
Print Friendly, PDF & Email

নাজিমুদ্দিন আলম, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক তিনি। তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন । ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর এজিএস। এছাড়া ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র গণ-আন্দোলনেও প্রথম সারির নেতাদের একজন ছিলেন এই নাজিমুদ্দিন আলম। উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোটগত সম্পর্ক এবং আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচির নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ
ঢাকাটাইমস: বর্তমান সরকারকে আপনারা অবৈধ বলছেন, কেন?
নাজিমুদ্দিন আলম: গণতন্ত্র মানে হচ্ছে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। দেশে সরকারি দল ও বিরোধীদল থাকবে; এই অনুশীলন যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে। সংবিধান একতরফা নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয় না। তাই এই সরকার অসাংবিধানিক ও অবৈধ।
ঢাকাটাইমস: এই সরকারের অধীনেই উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছেন…
নাজিমুদ্দিন: উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। আমরা মনে এই নির্বাচনে যাওয়া অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করার একটি অংশ। এটি আন্দোলনেরই একটি অংশ। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ আরেকবার সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করবে। যেহেতু তড়িঘড়ি করে নির্বাচন দিচ্ছে বিএনপি তাতে গিয়ে দেশ ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের সামনে প্রমাণ করতে চাই যে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা নেই। যদি নির্বাচন সুষ্ঠু হয় তবে ৮০ শতাংশ উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবে বলে বিশ্বাস করি। কারণ, এর আগেও পাঁচটি সিটি করপোরেশনে বিএনপি নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে।
ঢাকাটাইমস: মন্ত্রীদের বক্তব্যে সমঝোতার পথ রুদ্ধ হয়ে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তা হলে কী হবে?
নাজিমুদ্দিন: মন্ত্রীরা প্রথম দিকে বলেছেন কম সময়ের মধ্যেই সবার অংশগ্রহণে মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে। কিন্তু আবার বলছেন সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবে। সমঝোতা না হলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার শঙ্কা থাকবে। মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে। অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। আমাদের কিছুই করার নেই। গণতন্ত্র, জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা এবং সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য গণতান্ত্রিক লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
ঢাকাটাইমস: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন এই সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তিনি সরকার পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। এটা কীভাবে হবে?
নাজিমুদ্দিন: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যর্থাথই বলেছেন। এই সরকার টেকশই সরকার হতে পারে না। কারণ, তারা প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছে। তাদের প্রতি জনগণের কোনো সমর্থন নেই। জনগণকে সম্পৃক্ত করে রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মুখে এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে। সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেশে অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকাটাইমস: জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপি ঠিক করেনি-এরকম কথা হচ্ছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
নাজিমুদ্দিন: নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে বিএনপির সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। এখানে কোনো ভুল ছিল না। কারণ, জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন এক নয়। জাতীয় নির্বাচন সরকার পরিবর্তনের পদ্ধতি। বিএনপি যদি নির্বাচনে যেত হবে নীতি বহির্ভূত কাজ হতো এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচন বৈধতা পেত। বিএনপি নির্বাচনে জয়ী হলেও আওয়ামী লীগ নিজেদের জয়ী বলে ঘোষণা দিত এবং সরকার গঠন করতো। তখন বিএনপির কিছুই করার থাকতো না। যেখানে ৫ শতাংশ ভোটই গ্রহণ হয়নি সেখানে আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন বলছে ৪০ শতাংশ ভোট গ্রহণ হয়েছে। এটাও বিএনপির নির্বাচনে না যাওয়ার যৌক্তিকতা প্রমাণ করে। এই কমিশনের প্রতি আমাদের আস্থা ছিল না বলেই আমরা নির্বাচনে যাইনি।
ঢাকাটাইমস: বিএনপি অংশগ্রহণ করার পর নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে তা নিয়ে আন্দোলন করতে পারতো বলে মনে করেন অনেকে…
নাজিমুদ্দিন: নির্বাচনে না গিয়েও বিএনপির আন্দোলন চাঙ্গা ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের আন্দোলনকেও এই আন্দোলন ছাড়িয়ে গেছে। হয়তো ঢাকায় আন্দোলন তুলনামূলক কম হয়েছে। ঢাকায় প্রশাসন যন্ত্রকে দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের চরমভাবে প্রতিরোধ করা হয়েছে। মিথ্যা মামলা-গ্রেপ্তারের কবলে পরে নেতাকর্মীরা চরমভাবে হয়রানি হয়েছেন। অসুস্থ নেতাকর্মীদেরও ছাড় দেয়া হয়নি। দলের প্রধানকে বালুর ট্রাক দিয়ে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এটা কোনো রাজনীতি হলো, এটা কোনো গণতান্ত্রিক পরিবেশ হল?
ঢাকাটাইমস: বিএনপির সাংগঠনিক ব্যর্থতার কথাও দলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে খবর আসছে। বিষয়টি আসলে কী।
নাজিমুদ্দিন: ঢাকা কেন্দ্রিক কিছু সাংগঠনিক দুর্বলতা আছে। এটা তো স্বীকার করতেই হবে। সেই সাংগঠনিক দুর্বলতা শিগগির আমরা কাটিয়ে উঠবো। নিশ্চয়ই নেত্রীর (খালেদা জিয়া) চিন্তায় সেটি আছে।
ঢাকাটাইমস: বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। আসলে বিষয়টি কী।
নাজিমুদ্দিন: মূলত দল হচ্ছে দুটি, বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ। এদুটি দল রাজনৈতিক শক্তির দিক থেকে যখন যাকে সমপর্যায়ের মনে করে তখন তার সঙ্গেই জোট করে। নির্বাচন কমিশন থেকে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের নিষিদ্ধ করা হয়নি। সুতরাং রাজনৈতিক দল হিসেবে বিভিন্নভাবে কৌশলগত কারণে জামায়াতের সঙ্গে রাজনৈতিক জোট করতেই পারি। আওয়ামী লীগও ইতিপূর্বে করেছে। আমরাও করেছি। সরকারি দলেও স্বৈরাচার আছে আমাদের সঙ্গেও জামায়াত আছে। এটা রাজনৈতিক ও নির্বাচনে জেতার কৌশল। আন্দোলনকে চাঙ্গা করারও কৌশল।
ঢাকাটাইমস:বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক জোটের কথা বলছেন। কিন্তু দুটি দলই আলাদাভাবে উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
নাজিমুদ্দিন: দীর্ঘদিন যাবৎ বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে রাজনৈতিক জোট হয়ে আছে। নেত্রী (খালেদা জিয়া) তো বলেছেন জামায়াত কখন থাকবে, কখন থাকবে না সেটা সময়ই বলে দেবে।
ঢাকাটাইমস: পশ্চিমা বিশ্বও বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছেড়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছে…
নাজিমুদ্দিন: পশ্চিমা বিশ্ব সরকারের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন দেয়ার জন্য। কিন্তু সরকার তাদের কারো কথাই শোনেনি। তারা একতরফাভাবেই নির্বাচন দিয়েছে। আর বিএনপি-জামায়াতের জোটের ব্যাপারে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করেছে। আমরা দেশের মাটি ও মানুষের জন্য রাজনীতি করি। এদেশের মানুষের চাহিদা অনুযায়ী আমরা কাজ করবো। কখন কোন দলকে জোট থেকে বাদ দিতে হবে; কখন নিতে হবে এটার ব্যাপারে মানুষের আকাক্সক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে দল সিদ্ধান্ত নেবে। আওয়ামী লীগের কথায় তো আর বিএনপি কাজ করবে না।
ঢাকাটাইমস: বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস এবং জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক দুটিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন।
নাজিমুদ্দিন: বাংলাদেশের মানুষ টেকশই একটি গণতন্ত্র চায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও হচ্ছে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখা। আইনের শাসন কায়েম করা। আওয়ামী লীগ মুখে মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মুখে বললে হবে না; বাস্তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন দেখি না। এটা হচ্ছে সবচেয়ে দুঃখজনক।
ঢাকাটাইমস: মহাজোট সরকারের মন্ত্রী-সাংসদরা দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করেছেন বলে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার পরও মন্ত্রী-সাংসদের নিয়ে একই ধরনের সমালোচনা হয়েছে…
নাজিমুদ্দিন: গত পাঁচ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে যে লুটপাট হয়েছে তা সর্বজন স্বীকৃত। বিশেষ করে শেয়ারবাজার, হলমার্ক, ডেসটিনি, পদ্মাসেতু প্রকল্প, ভিওআইপি ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে তাদের দুর্নীতির কথা আমরা জানি। এসব করে আওয়ামী লীগের পাপের বোঝা এতটাই ভারি হয়েছে যে, তারা আর জনগণের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। এজন্য জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাই তারা সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনে ভয় পায়। যারা এসব অপকর্ম করেছে, তারা প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়েছে নির্বাচনে গেলে আওয়ামী লীগের চরম ভরাডুবি হবে। আর বিএনপির সময় ব্যক্তি বিশেষে কেউ যদি এসব দুর্নীতি করে থাকে তাদের ব্যাপারে মামলা আছে, বিচার হচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সময়ে যেভাবে লুটতরাজ হয়েছে তা অতীতের সব রেকর্ডকে ভঙ্গ করেছে। 

শেয়ার করুন