নিজ দলের ওপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে মরিয়া এরশাদ

0
121
Print Friendly, PDF & Email

নিজ হাতে গড়া জাতীয় পার্টির ওপর এখন কার্যত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। কিন্তু সে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। এজন্য সরকারের দিকে বেশি করে ঝুঁকে পড়ছেন। বিবৃতি দিয়ে সহযাত্রীর হওয়ার কথা বলছেন। যদিও বর্তমানে তিনি মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব পেয়েছেন কিন্তু এখন পার্টির একচ্ছত্র ক্ষমতা চলে গেছে তার স্ত্রী রওশন এরশাদের হাতে। দলের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা এরশাদের বদলে এখন রওশন এরশাদের নির্দেশই বেশি গুরুত্বসহকারে পালন করছেন। এমনকি আগামী ২৯ জানুয়ারি ১০ম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের নেতৃত্বেই এরশাদকে সংসদে যোগ দিতে হবে। এককথায় সরকার এবং নিজ দলে এরশাদ এখন একা। দলীয় সংশ্লিষ্টদের দাবি- মূলত প্রথমে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবং নির্বাচনকালীন সরকারে অংশগ্রহণ এবং পরবর্তীতে সে অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ানোতেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
জাপা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র মতে, বর্তমানে জাতীয় পার্টির কোনো পর্যায়ের নেতার ওপরই এইচএম এরশাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কেউই তার কথায় দলের কেউই আস্থা রাখতে পারছেন না। কারণ গত ৯ নভেম্বর এরশাদ বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের সাথে বেহেস্তেও যাবেন না। অথচ স্বল্পসময়ের মধ্যেই তিনি সরকারের বিশেষ দূত নিয়োগ পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। এমনকি সরকারের সহযাত্রী হওয়ারও ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সর্বশেষ এরশাদের এই অবস্থান বদল বক্তব্য দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে একদিকে যেমন হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছে, অন্যদিকে তারা বিব্রতকর অবস্থায়ও পড়ছেন। ফলে এরশাদের কথায় কেউ আস্থা রাখতেও নারাজ।
সূত্র জানায়, গত ১২ জানুয়ারি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকে এক মাসের চিকিৎসা শেষে নিজ বাসভবনে ফেরার পর জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী নেতারা একবারও তার সাথে দেখা করতে যাননি। বরং সেসময় তারা সকাল-বিকাল যাওয়া-আসা করেছেন রওশন এরশাদের বাসভবনেই। দলের ৩ মন্ত্রীই নিয়ম করে রওশনের বাসভবনে গেছেন। কিন্তু এরশাদের বাসভবনে যাননি। এমনকি দলের সংসদীয় সভাতেও এরশাদকে ডাকা হয়নি। এরশাদ দলের প্রধান হলেও সরকারের পক্ষ থেকে রওশন এরশাদের সাথেই সব ধরনের যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। সরকার রওশনের পক্ষে। ফলে জাপার সকল এমপি, মন্ত্রী এবং শীর্ষ নেতারাও এখন রওশনের নির্দেশে চলছেন।
সূত্র আরো জানায়, নিজ দলের কর্তৃত্ব পুনরায় ফিরে পেতে এরশাদ এখন সরকারের দিকে ভিড়ছেন। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকার রওশনকে বাদ দিয়ে আবারো এরশাদকে গুরুত্ব দিক। তাহলেই তিনি দলের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবেন। দলের নেতাকর্মীদেরও রওশনের নিয়ন্ত্রণ থেকে নিজ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। তারা আনুগত্য দেখাতে বাধ্য হবে। দলের এমপি-মন্ত্রীরা তার নির্দেশে চলবেন। এসব কারণে এরশাদ সরকারের আনুকূল্য পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাছাড়া এরশাদের সরকারের দিকে ঝুঁকে পড়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে জেনারেল মঞ্জু হত্যা মামলা। আগামী ১০ ফেব্র“য়ারি মেজর জেনারেল মঞ্জুর হত্যার মামলার রায় হবে। এ মামলার প্রধান আসামি এরশাদ।
এরশাদের ঘনিষ্ঠ এক জাপা নেতা বলেন, মঞ্জু হত্যা মামলা নিয়ে এরশাদের কোনো টেনশন নেই। তবে এ মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে তিনি ১৮ বছর ধরে চেষ্টা করছেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে মামলাটি থেকে অব্যাহতি চেয়েও পাননি। ২০০৯ সালে মহাজোট ক্ষমতা আসার পর সরকারের শরিক এরশাদের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল মঞ্জুর হত্যা মামলাটি প্রত্যাহার। কিন্তু তা হয়। এখন মামলায় রায় তো এসে এসে গেছে। অবস্থা বুঝেই এরশাদ শেখ হাসিনার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে তার সহযাত্রী হওয়ার কথা বলছেন।
সূত্র আরো জানায়, এরশাদের ডিগবাজির আরেকটি কারণ হচ্ছে উপজেলা নির্বাচন। এরশাদ এমপি, মন্ত্রিত্ব সব পেলেও তার নির্দেশ মানতে গিয়ে দলের ১৫৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছিলেন। এর বিপরীতে রওশনের নেতৃত্বে মনোনয়ন প্রত্যাহার না করা জাপা নেতারা মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন। আর বঞ্চিত হয়েছেন এরশাদপন্থী নেতারা। বঞ্চিত এসব নেতাদের ক্ষতিপূরণ পেতে চাপ দিচ্ছেন এরশাদকে। তাদের উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে এরশাদ পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন।
এদিকে সরকারের সহযাত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে এরশাদের আগ্রহ প্রকাশ প্রসঙ্গে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, সবাই তো সরকারকে খুশি রাখতে চায়। এরশাদও রাখলেন।
আর উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে জোটবদ্ধভাবে উপজেলা নির্বাচন করা হবে কিনা তা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে দুএকদিনের মধ্যেই এ নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যারা দলের চেয়ারম্যানের নির্দেশে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছিলেন তারা শুধু উপজেলা নির্বাচনই নয়, সকল ক্ষেত্রেই অগ্রাধিকার পাবেন।

শেয়ার করুন