তিস্তার বর্তমান পানিপ্রবাহ দেখতে আবারো সমীক্ষা কার্যক্রম শুরুর ভারত। আর ভারতীয় এ সিদ্ধান্তে হতাশার পাশাপাশি দুশ্চিন্তায় পড়েছে বাংলাদেশ। পানি ভাগাভাগি নিয়ে দ্রুত একটি চুক্তির আশায় বুক বেঁধে থাকা বাংলাদেশ এখন সন্দিহান ভারতের আগ্রহের ব্যাপারে। তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে ১৯৭৭ সালে একটি চুক্তি হয়। এটি ছিল পাঁচ বছরমেয়াদি। এরপর ব্যাপক পর্যালোচনা শেষে ১৯৮৩ সালে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে ভারতের সাথে চুক্তি করতে সব সময় আগ্রহী। কিন্তু সম্প্রতি ভারতের একটি সিদ্ধান্তে দুশ্চিন্তায় পড়েছে বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার কারণ হচ্ছে ভারত সম্প্রতি নতুন করে সমীক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়ায়। এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন। নতুন এই সমীক্ষায় ভারত তিস্তার বর্তমান প্রবাহের পাশাপাশি নিজেদের কী পরিমাণ পানি দরকার তা যাচাই-বাছাই করবে। নতুন এই সমীক্ষার আওতায় পশ্চিমবঙ্গের তিস্তার অববাহিকা পড়বে। ভারতের সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন পশ্চিমবঙ্গের তিস্তার অববাহিকায় কারিগরি ও আর্থসামাজিক সমীা চালাবে। আর এই পুরনো তথ্যের বদলে নতুন তথ্য নিয়ে দেশটির ওয়াটার কমিশন বাংলাদেশের সাথে দেনদরবার করতে চায়। সম্প্রতি ওই কমিশনের চেয়ারম্যান এসব তথ্য জানিয়েছেন ভারতের সংবাদমাধ্যমকে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিশেজ্ঞরা মনে করেন তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে বহু বৈঠক, কারিগরি সভা হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে এসব বৈঠকে দুই দেশ বলা চলে একটি সম্মানজনক চুক্তিতে পৌঁছে গিয়েছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে ভারত-বাংলাদেশ তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি করা প্রায় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। এমনকি গত বছরও সেপ্টেম্বরে চুক্তির ব্যাপারে কথা শোনা গিয়েছিল সব পক্ষও ধরে নিয়েছিল বিষয়টির রাজনৈতিক সমাধানেই একটি চুক্তি নির্ভর করছে। কারণ সব ধরনের সমীক্ষা দুই দেশ প্রায় সম্পন্ন করেই ফেলেছে। কিন্তু প্রতিবারই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে তা হতে পারেনি। আর এখন দেশটির খোদ কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের এমন সমীক্ষার উদ্যোগ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশকে। সমীক্ষা শেষের আগে দেশটি আদৌ চুক্তি করতে রাজি হবে কি না সে ব্যাপারে সন্দিহান বাংলাদেশের পানি বিশেষজ্ঞরা।