উপজেলা নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়েই লড়বে বিএনপি। দলটি এই নির্বাচনকে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সংগঠিত ও সক্রিয় করার উপায় হিসেবে দেখছে। নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীরা যাতে জিতে আসতে পারেন, সে জন্য বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের একক প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্বাচনী কার্যক্রম দেখভালের জন্য বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে একটি কমিটিও গঠন করেছে।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় ৯৭টি উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। নিয়মানুযায়ী, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে বাস্তবে দল সমর্থক প্রার্থীর আবরণে দলীয়ভাবেই এই নির্বাচন হয়ে থাকে। বিএনপির একাধিক নেতা দাবি করেন, কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত না হলেও স্থানীয়ভাবে দলের নেতারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা স্থানীয়ভাবে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে প্রতিটি উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে নেতাদের উৎসাহিত করছেন।
দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তাঁদের মধ্যে উৎসাহ তৈরি হয়। কেন্দ্রীয় নেতাদের ফোন করে স্থানীয় নেতারা নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা না দেওয়ার অনুরোধ জানান। প্রশাসনের চাপ থেকে বেরিয়ে আসা ও কর্মীদের সক্রিয় করার জন্য এ নির্বাচনকে সুযোগ হিসেবে দেখছে তৃণমূলের নেতারা। আর কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করছেন, আগামী দিনের আন্দোলনের জন্য নেতা-কর্মীদের এই উৎসাহ কাজে লাগানো যাবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দলের স্থানীয় নেতারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে কোনো বাধা নেই। যেহেতু এটা দলীয় নির্বাচন নয়, তাই আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি কিছু করছে না। তবে তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করবে।
মাহবুবুর রহমান বলেন, এই নির্বাচনের একটি রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে। তাই বিএনপি বিষয়টিকে সেভাবেই বিবেচনা করছে।
উপজেলা নির্বাচন দেখভালের জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতা ও সংশ্লিষ্ট জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। এরা নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করবেন এবং যতটা সম্ভব দল ও জোটের পক্ষ থেকে প্রতিটি উপজেলায় একক প্রার্থী দিতে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমান সরকারকে অবৈধ বলে মন্তব্য করেছেন। নির্বাচন কমিশনকে ‘আজ্ঞাবহ ও মেরুদণ্ডহীন’ বলেছেন। এদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না বলেও মন্তব্য তাঁর। দলীয় সরকার ও এই নির্বাচন কমিশন গ্রহণীয় নয় দাবি করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি ও এর নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট।
এখন মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের চাঙা করতে, সাংগঠন গোছাতে সর্বোপরি স্থানীয় নেতাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহের কারণে শেষ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচনে থাকছে বিএনপি।