বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাকিস্তানের প্রতি দরদ থাকলে পাকিস্তানে চলে যান। কিন্তু এ দেশের মানুষকে হত্যা করবেন না, কষ্ট দেবেন না। এর দায়ভার বিএনপি-জামায়াতকেই নিতে হবে। তিনি (খালেদা) সন্ত্রাস ছাড়া কিছুই পছন্দ করেন না। কিন্তু বাংলার মাটিতে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের ঠাঁই হবে না।
গতকাল শনিবার বিকেলে গাইবান্ধা শহরের শাহ্ আব্দুল হামিদ স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডব উপেক্ষা করে ৫ জানুয়ারি ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনরায় নির্বাচিত করায় গাইবান্ধাবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন ঠেকানোর নামে গাইবান্ধায় চার পুলিশসহ ১০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। মানুষের ঘরবাড়ি, ১২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পোড়ানো হয়েছে। গাইবান্ধা জেলায় ২০ হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। রেলসেতু ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু তারা নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি।
প্রশাসনকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে যতটা কঠোর হওয়া দরকার ততটা হতে হবে। বিএনপি-জামায়াত রাজনীতিতে এসেছে রাজনীতি করার জন্য নয়, তারা যা করছে তা রাজনীতি নয়, এটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।
শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য খালেদা জিয়া যতই চেষ্টা করুন, বাংলার মাটিতেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিদেশে পাঠিয়ে তাদের বাঁচাতে চেয়েছিলেন। সেটা সম্ভব হয়নি। খালেদা জিয়াও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে পারবেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাইবান্ধায় বিশেষ শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ অঞ্চলের বেকার সমস্যার সমাধান করা হবে। অবিলম্বে গাইবান্ধার বালাসী-বাহাদুরাবাদ নৌরুটে নতুন ফেরি এনে ফেরি চলাচল শুরু করা হবে। সেখানে রেলসেতু স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। এর ফলাফল সন্তোষজনক হলে রেলসেতু স্থাপন করা হবে।
গাইবান্ধায় নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের হাতে গতকাল আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: প্রথম আলোজনসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ সামস-উল-আলম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহামঞ্চদ নাসিম, স্থানীয় মাহাবুব আরা বেগম, সাংসদ ফজলে রাব্বী মিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক প্রমুখ।
এর আগে গতকাল দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে গাইবান্ধা শহরের অদূরে তুলশীঘাট হেলিপ্যাডে অবতরণ করে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার। সেখান থেকে তিনি গাইবান্ধা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে পৌঁছান। সেখানে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে সহিংসতায় নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত মোট ৭৫টি পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। এর মধ্যে তিনজন নিহত পরিবারের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রত্যেককে ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়।
মতবিনিময় সভায় নির্বাচনী সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা মনে জোর রাখবেন। আপনাদের সন্তান হয়তো ফেরত দিতে পারব না। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা আর যাতে না ঘটে, সে জন্য সরকার যা করার তাই করবে।’
উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর: প্রধানমন্ত্রী বিকেলে জনসভাস্থল গাইবান্ধা শহরের শাহ্ আব্দুল হামিদ স্টেডিয়ামে পৌঁছান। সেখানে ভাষণ দেওয়ার আগে ফলক উন্মোচন করে সদ্য সমাপ্ত গোবিন্দগঞ্জ ফায়ার স্টেশন, গাইবান্ধা টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, খাদ্য গুদাম, সাঘাটা, পলাশবাড়ী ও সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন ও ইপিআই স্টোর ভবনের উদ্ভোধন করেন। এ ছাড়া সুন্দরগঞ্জের তিস্তা সেতু, পলাশবাড়ী, ফুলছড়ি ও সাঘাটা থানা ভবন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, গোবিন্দগঞ্জ প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ভবন, গাইবান্ধা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, শাহ্ আব্দুল হামিদ স্টেডিয়াম গ্যালারি ও সাঘাটার বোনারপাড়ায় সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
গাইবান্ধার মানুষ হতাশ: গতকাল সকাল থেকেই জনসভাস্থলে মানুষের ঢল নামতে থাকে। গাইবান্ধার উন্নয়নে বিভিন্ন দাবি-দাওয়াসংবলিত ব্যানার নিয়ে জনসভায় যোগ দেন গ্রাম ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে প্রধান দাবি হিসেবে উঠে আসে গাইবান্ধা শহরের অদূরে ব্রহ্মপুত্র নদে বালাসী বহুমুখী সেতু নির্মাণ। এ ছাড়া গাইবান্ধা কৃষি ইনস্টিটিউটকে কৃষি কলেজে রূপান্তর, ইপিজেড প্রকল্প, আইসিটি পার্ক, গাইবান্ধা আদর্শ কলেজকে সরকারীকরণ, শহরে বাইপাস নির্মাণ, অসমাপ্ত চারটি সেতুর নির্মাণ সম্পন্ন, গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়ককে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করার দাবিসংবলিত ব্যানার প্রধানমন্ত্রীকে দেখানোর জন্য জনসভাস্থলে লাগানো হয়। কিন্তু কোনো দাবিই বাস্তবায়নের ঘোষণা দেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে হতাশ হন মানুষ।