এবার ক্রিকেটের জন্য শাহবাগে তরুণেরা

0
119
Print Friendly, PDF & Email

‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ, এক দাবি এক দেশ, টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ’, ‘ক্রিকেট বাঁচলে বাঁচবে দেশ, ভালোবাসি বাংলাদেশ’, ‘তিন মাতব্বরের পাগলামি, মানি না, মানব না’, ‘ক্রিকেট নিয়ে ষড়যন্ত্র চলবে না’, ‘বিসিবি সে নো’।
এ রকম অসংখ্য স্লোগানে গতকাল শনিবার বিকেলে সরব ছিল রাজধানীর শাহবাগ। টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে তিন দেশের নতুন প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান জানাতেই গতকাল শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধনে জড়ো হন ক্রিকেটপ্রেমীরা। ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সাম্প্রতিক এক প্রস্তাবের ফলে টেস্ট ক্রিকেট থেকে বাংলাদেশের অবনমনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে আকস্মিক জমায়েত হয়েছিল, গতকাল সেখানে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখতে সোচ্চার হলো হাজারো তরুণ।
বিকেল চারটায় কর্মসূচি শুরুর কথা থাকলেও বেলা তিনটার পর থেকেই আসতে শুরু করে লোকজন। পৌনে চারটার আগেই মানুষ দুই লাইনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যায় মানববন্ধনে। রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে কয়েক হাজার তরুণ ব্যানার, ফেস্টুন ও পতাকা নিয়ে এই মানববন্ধনে অংশ নেন।
বিভিন্ন বয়সের মানুষ এই মানব-বন্ধনে থাকলেও উল্লেখযোগ্য অংশই ছিল স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তরুণ। তাদের সবার মুখে মুখে স্লোগান আর হাতে হাতে ব্যানার, ফেস্টুন, কপালে বাঁধা বাংলাদেশের পতাকা। সবাই স্লোগান দিলেও এক ঘণ্টার কর্মসূচিতে কেউ কোনো বক্তব্য দেননি। কোনো মাইকও ছিল না। আয়োজকেরা জানান, অতীতের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা দেখে তাঁরা এখানে কোনো নেতা ঠিক করেননি। এটি সবার কর্মসূচি।
কর্মসূচি শুরুর আগেই দুই তরুণ নিজেদের মুখমণ্ডল, শরীর পুরোটাই সাজিয়েছেন বেঙ্গল টাইগারের মতো করে। হাতে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে মানববন্ধনে আসা মানুষের সামনে গিয়ে তাঁরা স্লোগান দিচ্ছেন, ‘এক দাবি, এক দেশ, টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ।’ তাঁদের স্লোগানে পুরো এক ঘণ্টাই উজ্জীবিত ছিল শাহবাগ।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া মতিঝিল মডেল স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র গোলাম মর্তুজা বলে, ‘তিন দেশ যে প্রস্তাব দিয়েছে, সেটি আমরা মানি না। আমাদের যোগ্যতা আছে। মাঠে আসুক, আমরা খেলেই সেই যোগ্যতার প্রমাণ দেব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও ট্যুরিজম বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুল হক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর আমাদের বড় অর্জন হচ্ছে এ দেশের ক্রিকেট। এটি দল-মত-ধর্মনির্বিশেষে আমাদের এক করেছে। এই জায়গা থেকে টেস্ট ক্রিকেটে যদি বাংলাদেশের অধিকার খর্ব করা হয়, তাহলে তা হতে দেওয়া হবে না।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘বিসিবির কাজ বাংলাদেশের ক্রিকেটের স্বার্থ রক্ষা করা। তাদের এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়।’
তেজগাঁও থেকে মানববন্ধনে এসেছিলেন গৃহিণী মাহমুদা সরকার। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন নবম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়েকে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেট হচ্ছে আমাদের প্রাণ। আমরা অনেক কষ্ট করে ক্রিকেটের টেস্ট মর্যাদা এনেছি। ১৬ কোটি মানুষের আবেগ মিশে আছে ক্রিকেটের সঙ্গে। এর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হতে দেব না।’

শেয়ার করুন