মিয়ানমারের সাথে শিগগিরই নিরাপত্তা সমঝোতার উদ্যোগ

0
121
Print Friendly, PDF & Email

প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে ব্যাপকহারে রোহিঙ্গা অবৈধভাবে প্রবেশের ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে রোহিঙ্গা অভিবাসী প্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ শিগগিরই মিয়ানমারের সাথে নিরাপত্তা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে।

একই সাথে ওই চুক্তির অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে ওই দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন করাও। আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি এ সমঝোতা স্বাক্ষর হতে পারে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

এদিকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সমঝোতা চুক্তির বিষয়ে দুদেশই অনেক দূর এগিয়েছে। সমঝোতার শর্তগুলো নিয়ে আলোচনা করতে আগামীকাল রবিবার আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে। বৈঠকে নেতৃত্ব দেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মূলত গত কয়েক বছর ধরেই মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে।

অনেক দেশই পরিবর্তিত অবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে সেখানে বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে। এ প্রেক্ষিতে অন্যতম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশও মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। এজন্য বাংলাদেশ দ্রুতই মিয়ানমারের সাথে নিরাপত্তা বিষয়ক সমঝোতা চুক্তি করতে যাচ্ছে।

অন্যদিকে গত কয়েক বছর ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। চলতি মাসেই সেখানে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা ও ৫০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এ অবস্থায় নিরাপত্তাহীনতায় সেখানকার রোহিঙ্গারা ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। রোহিঙ্গা প্রবেশের ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশ।

সামাজিক এবং অর্থনীতিতে তা চাপ সৃষ্টি করছে। মিয়ানমারের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরাপত্তা সহযোগিতার পাশাপাশি মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করার জন্যই বাংলাদেশ সমঝোতা চুক্তি করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ চাচ্ছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি মিয়ানমারের ধর্মীয় দাঙ্গা ও সহিংসতা বন্ধে কাজ করতে।

কারণ ইতিমধ্যে মিয়ানমারের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে দেশটি জাপান, চীনসহ বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী বিনিয়োগকারী রাষ্ট্রের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ মিয়ানমারের প্রতিবেশী হিসেবে সে সুযোগকে কাজে লাগাতে আগ্রহী।

বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, শুধু রোহিঙ্গা ইস্যু ন্য, মিয়ানমারের সাথে সার্বিক দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা বিষয়ক একটি সমঝোতা স্বাক্ষরের কাজ চলছে। আগামীকাল রবিবার আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নিজ নিজ প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তার বিষয়গুলো তুলে ধরবে। ওই বৈঠক থেকেই শর্তগুলো উঠে আসবে।

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে মাদক জাতীয় দ্রব্যের কারখানা স্থাপনের কারণে উদ্বিগ্ন। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ বিষয়টি তুলে ধরা হবে। নৌমন্ত্রণালয় দুদেশের মধ্যকার নাফ নদীকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা বিষয়ক ইস্যুগুলো তুলে ধরবে। তাছাড়া বৈঠকে মানব পাচার, মাদক পাচার, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, দুদেশের নিরাপত্তা ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে।

একই সাথে দুদেশের মধ্যকার জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা, স্থল-আকাশ ও নদীপথে দুদেশের যোগাযোগ স্থাপন, বাণিজ্য বৃদ্ধি, কৃষি ক্ষেত্রে সহযোগিতা, মৎস্য ও পশু সম্পদ, পর্যটন ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রগুলোকেও গুরুত্ব দিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমার এখন বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। কৌশলগত অবস্থান তৈরির দৌড়ে দেশটিতে কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়েই তারা এগিয়ে থাকতে চাচ্ছে।

ফলে দেশটির সাথে দ্বিপাক্ষিক সব ধরনের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপনে অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে পাশাপাশি কৌশলগত দিক থেকে এগিয়ে রাখবে বাংলাদেশকে। আর বাংলাদেশ মিয়ানমারের নিকটতম প্রতিবেশী হওয়ায় দেশটির সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলবে।

শেয়ার করুন