জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে ছয়জনের মনোনয়ন গতকাল শুক্রবারও চূড়ান্ত করতে পারেনি জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ও জাপার সংসদীয় দলের প্রধান রওশন এরশাদ ছয়জনের বিষয়ে এখনো পুরোপুরি একমত হতে না পারাই এর কারণ।
এরশাদ ও রওশনের ঘনিষ্ঠ জাপার নেতারা জানিয়েছেন, সংরক্ষিত আসনে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে এরশাদ গত কয়েক দিনে চার দফা তালিকা দেন রওশনকে। তাঁরা পাঁচজনের বিষয়ে মোটামুটি একমত হলেও অনন্যা রহমান মৌসুমীর ব্যাপারে বিপরীতমুখী অবস্থানে অনড় রয়েছেন। এরশাদ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা জাপার সভাপতি অনন্যাকে সাংসদ করতে চান। কিন্তু এতে জোরালো আপত্তি জানিয়েছেন রওশন। যে পাঁচজনের বিষয়ে দুজনে মোটামুটি একমত হয়েছেন, তাঁরা হলেন কক্সবাজারের খুরশীদা হক,
চট্টগ্রামের মেহজাবিন মোরশেদ, জাতীয় মহিলা পার্টির সভাপতি নূর-ই হাসনা লিলি চৌধুরী, রংপুর জেলা মহিলা পার্টির সভাপতি শাহানারা বেগম ও রওশন আরা মান্নান। নূর-ই হাসনা ও মেহজাবিন নবম সংসদেও সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ছিলেন।
জানতে চাইলে জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সংরক্ষিত নারী আসনে দলীয় মনোনয়নের বিষয়টি সমঝোতার পর্যায়ে আছে। তালিকা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে।
জাপার দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা জানান, জাপার সংসদীয় দলের প্রধান ও বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে রওশন সংরক্ষিত আসনে দলের মনোনয়নের কর্তৃত্ব নিজের হাতে রাখতে চেয়েছেন। দলের চেয়ারম্যান হিসেবে এরশাদও এই মনোনয়নে প্রধান ভূমিকা রাখতে তৎপর হন। তিনি প্রার্থী মনোনয়নে ৯৬ জনের সাক্ষাৎকারও নেন। এরপর রওশনের কাছে তালিকা পাঠান। ওই তালিকা রওশনের অপছন্দ হলে প্রার্থীদের কয়েকজনের নাম বদলে পর্যায়ক্রমে আরও তিনটি তালিকা পাঠান। এ নিয়ে তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একরকম স্নায়ুযুদ্ধও চলে। শেষ পর্যন্ত রওশনের পছন্দই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে বলে ওই নেতারা জানান।
দলের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, এরশাদের পাঠানো বিভিন্ন তালিকায় বোন মেরিনা রহমান, ভাই জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদের, মেহজাবিন মোরশেদ, গাইবান্ধার দিলারা বেগম, অনন্যা রহমান, মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদিকা নাজমা আক্তারের নাম প্রাধান্য পায়। রওশানের আপত্তিতে তিনি তালিকার কয়েকটি নাম বদল করেন। তাতে নূর-ই হাসনা, সাবেক সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী মাহমুদা চৌধুরী, এরশাদের গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভরায়ের স্ত্রী কণিকা রায়, নারায়ণগঞ্জের এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী শাহজাদী নাহিনা নূর ও সায়েদাবাদের পীর সাঈদুর রহমানের মেয়ে শাহিদার নামও ছিল। তবে মেহজাবিন ও নূর-ই হাসনা ছাড়া অন্যদের সাংসদ করতে রাজি হননি রওশন।
জানতে চাইলে রওশনপন্থী বলে পরিচিত জাপার সাংসদ ফখরুল ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংরক্ষিত আসনের সাংসদদের নাম নির্বাচন কমিশনে পাঠানোর সময় ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আশা করি, এর আগেই একটি সমন্বিত তালিকা করা সম্ভব হবে।’
দলীয় সূত্র জানায়, এরশাদ এর আগে দশম সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে অনন্যাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিলেন। এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য গোলাম মসীহ্। পরে তিনি কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বে নতুন জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং মহাসচিব হন।
রওশনের ঘনিষ্ঠজনেরা জানান, নির্বাচনের আগে দলত্যাগী গোলাম মসীহ্র সঙ্গে রওশনের পারিবারিক সম্পর্ক আছে। সেই সূত্রে রওশন তাঁকে দলে ফিরিয়ে আনার ও বিরোধীদলীয় নেতার ব্যক্তিগত সহকারী করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অনন্যার বিষয়ে রওশনের আপত্তির পেছনে এটিও একটি বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।