দীর্ঘমেয়াদি প্ল্যানে সরকার

0
99
Print Friendly, PDF & Email

দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নির্বাচন দিয়েই ব্যস্ত রাখতে চায় বিএনপিকে। পাশাপাশি উন্নয়নমূলক কাজের মাস্টারপ্ল্যানও করা হচ্ছে। নজরকাড়া উন্নয়নগুলো বাস্তবায়ন করা হবে অতিদ্রুত। তা ছাড়া পুলিশ, সিভিল প্রশাসনসহ সর্বস্তরের নিয়োগ দেওয়া হবে দ্রুততম সময়ে। অর্থনীতিকে গতিশীল করা, ব্যবসায়ী ও মিডিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন, নিজেদের সাফল্য জনগণের সামনে তুলে ধরা, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার পাশাপাশি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান যেমন নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্য কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে কার্যকর ও শক্তিশালী করা হবে। রদবদল হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বিদেশি মিশনসহ বিভিন্ন সেক্টরে। গত পাঁচ বছরের অদক্ষ ও বিতর্কিতদের এবার আর সুযোগ দেওয়া হবে না। জানা গেছে, পরিকল্পিত ও গোছানোভাবে অগ্রসর হতে চায় সরকার। রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। দেশব্যাপী আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যৌথবাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে। মার্চের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নয়ন না হলে যৌথ অভিযানের মেয়াদ আরও বাড়বে। সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম বন্ধে জিরো টলারেন্সে থাকবে র্যাব। জলদস্যু-বনদস্যুদেরও দমন করা হবে একইভাবে। জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বাস্তবমুখী পদক্ষেপগুলো সরাসরি মনিটরিং করবেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। বিমানবন্দর থেকে উড়াল সড়ক চলে যাবে যাত্রাবাড়ীতে। মগবাজার ও মৌচাক এলাকার ফ্লাইওভারের কাজ দ্রুত শেষ করতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এরই মধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের কাজ শেষ করা হবে অতিদ্রুত। অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে নেওয়া পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, কক্সবাজার-সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, তরল-প্রাকৃতিক গ্যাস টার্মিনাল দ্রুত নির্মাণ করা হবে।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দাবি আদায় কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, নির্বাচন দিয়েই বিএনপিকে ব্যস্ত রাখতে চায় সরকার। এ কৌশল বাস্তবায়ন করতে সরকার জাতীয় নির্বাচন শেষ করতে না করতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জানা যায়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। বিভিন্ন দফায় আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে চলবে জুলাই পর্যন্ত। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে ৪৮ জেলার ১১৩ উপজেলা, মার্চে ৫৯ জেলার ২২১ উপজেলা, এপ্রিলে ২৬ জেলার ৩৬ উপজেলা, মে মাসে ৩৫ জেলার ৮৬টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর ক্রমান্বয়ে দেশের ছয়টি সিটি করপোরেশন ও ৬১ জেলা পরিষদের প্রশাসক নির্বাচনের প্রক্রিয়াও শুরু হতে পারে বলে জানা যায়। সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীদের কথায়ও সরকারের পাঁচ বছর থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। গতকাল ১৪ দলের সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম শীঘ্রই সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। নাসিম বলেছেন, সরকার পাঁচ বছর থাকবে। সংলাপ হতে পারে, তবে তা পাঁচ বছর পর। এর আগে নয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বুধবার নিজ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে সংলাপের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন। তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, একটি সরকার পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়। এ সরকারও পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় এসেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা আগামী পাঁচ বছর কার্যকলাপ চালিয়ে যাব। তিনি বলেন, সংলাপের কথা আমাদের নয়। এটা বিদেশিরা বলছে। আর বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো সম্ভাবনা নেই। এর আগে মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার দফতরে সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা যা কিছুই করছি না কেন তা পাঁচ বছরের জন্যই হবে। সেদিন আগামী ছয় মাসে আওয়ামী লীগ সরকার বড় ধরনের কী কী কাজ করবে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী জানান, পদ্মা সেতুর হুকুম হবে, বীমানীতি হবে, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক হবে, ফিন্যানশিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট হবে। দুর্নীতি দমনের জন্যও কিছু একটা করা হবে। এখনই সব বলতে চাচ্ছি না। 

শেয়ার করুন