আটকে আছে ৭৭ হাজার কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ

0
177
Print Friendly, PDF & Email

দুই বছর ধরে নানা আলোচনার পর প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের (৭৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি) বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল কাতার, আরব-আমিরাত, সৌদি আরব, বাহরাইন, ওমান ও কুয়েত। অবকাঠামো, বন্দর, বিদ্যুৎ, গ্যাস, তেল ও পর্যটন খাতে এ বিশাল বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দেশগুলো। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশগুলোর উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা এ জন্য কয়েকটি সফরও বাতিল করেছেন। এখন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে কিনা তা নিয়েই প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে বিনিয়োগের জন্য অনুকূল হিসেবে দেখছেন না ধনী দেশের এ বিনিয়োগকারীরা। বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ বিনষ্ট হওয়ার শঙ্কা তাদের মধ্যে কাজ করছে। তারপরও মধ্যপ্রাচ্যের দূতাবাসগুলোর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ঢাকায় মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিকরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রস্তাবিত এসব বিনিয়োগে মধ্যপ্রাচ্যের সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জড়িত। তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে বিনিয়োগের সহায়ক হিসেবে মনে করা হচ্ছে না বলেই সবাই কিছুটা পিছিয়ে গেছে। আরব-আমিরাত : সংযুক্ত আরব-আমিরাতের পক্ষ থেকে ৪০০ কোটি ডলার বাংলাদেশের শিপিং সেক্টরে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। প্রাথমিক আলোচনায় চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের পাশাপাশি একটি ড্রাই ডক ও গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনে বিনিয়োগের বিষয়টি প্রাধান্য পায়। এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য গত অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরের সূচি নির্ধারণ করেন আমিরাতের বেসরকারি কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের প্রতিনিধিরা। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে শেষ মূহুর্তে সফর স্থগিত করা হয়। তিন মাসেও সফরের নতুন দিনক্ষণ নির্ধারণ সম্ভব হয়নি। ওমান : বাংলাদেশে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরে আগ্রহী ছিল মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী দেশ ওমান। কৃষি ও মৎস্য খাতেও বিনিয়োগে আগ্রহের কথা ওমানের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে জানানো হয়েছে। কিন্তু সব আলোচনাই এখন থমকে আছে। বাহরাইন : ২০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে প্রস্তাব দিয়েছিল বাহরাইন। এ ছাড়া বাহরাইনে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশিরা বাহরাইনের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নিয়ে একটি ব্যাংক স্থাপন ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী ছিল। কিন্তু এই প্রকল্পগুলোর আলোচনাও এখন বন্ধ। কাতার : মাথাপিছু আয়ের হিসাবে শীর্ষ দেশ কাতার চার বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও পাঁচ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে আগ্রহ দেখিয়েছিল। এগুলোর বিষয়ে প্রাথমিক প্রস্তাবনাও তৈরি করা হয়। এ ছাড়া ব্যাংকে এক দশমিক আট বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কুয়েত : একটি রিফাইনারি (তেল শোধনাগার) কারখানা স্থাপনের আগ্রহ কুয়েতের। এক বিলিয়ন ডলারের এ প্রকল্প বাস্তবায়নে দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েক দফায় বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এরও ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিয়ে গেছে। সৌদি আরব : সৌদি যুবরাজ ওয়ালিদ বিন তালাল ২০১২ সালে বাংলাদেশ সফরে আসেন। তিনি জ্বালানি ও পর্যটন খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। ১৫০ থেকে ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের জন্য সেই সফরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নানা প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়। বাংলাদেশের রিয়াদ দূতাবাস এ বিষয়ে সৌদি যুবরাজের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিনিয়োগে অনীহা প্রকাশ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

শেয়ার করুন